সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা |
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল করার প্রতিবাদে কামরাঙ্গীরচর জন্মভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে এমন প্রকল্প যাতে বাস্তবায়ন করা না হয়, সে জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। ্দিন দিন তাদের আন্দোলন আরো জোরদার হতে যাচ্ছে এবং ফুঁসে উঠছে কামরাঙ্গীরচরবাসী! জীবন দিয়ে রক্ষা করবে জন্মভূমি।
আজ শুক্রবার (১০ মে) জুম্মার নামাজের পর ঢাকার কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ এলাকায় ৫৭ নং ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচর জন্মভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দের আহবানে সারা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। জুম্মার নামাজের পর পরই বিভিন্ন এলাকা হতে হাজার হাজার বাসিন্দা দলে দলে জড়ো হতে থাকেন লোহার ব্রিজের ঢালে। মুহূর্তেই পুরো এলাকাটি গণমিছিলে ছেয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের দাবী "১০৪ ফুট প্রশস্ত রাস্তা চাইনা। যেই উন্নয়নে আমরা থাকব না, সেই উন্নয়ন চাই না। আমাদেরকে উচ্ছেদ করে কোনো কিছু করা হলে ২০ লাখ জনতা মিলে যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবে। অপ্রয়োজনীয় ১০৪ ফুট রাস্তা বাতিল চাই। রুখে দাও! রুখে দাও।"
বিক্ষোভ সমাবেশের শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ৫৭ নং ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচর জন্মভূমি রক্ষা কমিটির সম্মানিত মুরুব্বি ও ৫৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজী শহিদুল ইসলাম শহীদ, কামরাঙ্গীরচর জন্মভূমি রক্ষা কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক ও ৫৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মামুন আহমেদ, আব্দুস সালাম, মাসুম আহমেদ, কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাজী নাজমুল হাসান মিলন মাতবর প্রমুখ।
এসময় স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কামরাঙ্গীরচরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল ছাড়াও ১০৪ ফুট প্রশস্ত রাস্তা করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে কামরাঙ্গীরচরে হাজার হাজার ভবন গড়ে উঠেছে। বিশ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছে। অসংখ্য মাঝারি ও ছোট ধরনের কলকারখানা, শত শত মসজিদ মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে এগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। যা কামরাঙ্গীরচরের অধিবাসীরা কিছুতেই মানতে রাজি নন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে উদ্দেশ করে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, "‘মানুষ যাতে ভিটেছাড়া না হয়, তাই শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন। মানুষ ঘুমাতে পারছে না। দুশ্চিন্তার কারণে অনেকে স্ট্রোক করে ফেলেছেন এবং অনেকে অসুস্থ হয়ে পরে আছেন বাড়িতে। মানুষকে উচ্ছেদ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা শোনার পর থেকে তাঁদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যেই উন্নয়নে আমরা থাকব না, সেই উন্নয়ন চাই আমরা চাইনা।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, ৫৭ নং ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচর জন্মভূমি রক্ষা কমিটির আহবায়ক হাজী মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন, সদস্য সচিব মোহাম্মাদ ফারুক হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা ১০৪ ফুট ও ঝাউচর রাস্তা বাতিলের দাবি জানান এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
শেখ মারুফ আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক জানান, "কামরাঙ্গীরচরে দুই শতাধিক কিন্ডারগার্টেন, তিনটি সরকারি স্কুল, চারটা এছারতভুক্ত স্কুল, শতাধিক মাদরাসা ও অনেক অনেক মসজিদ রয়েছে। যেখানে শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছেন সেখানে উচ্ছেদ করার কথা বলেন কি করে। তাহলে কি প্রাইম মিনিস্টারের কথার কোন মূল্য নাই। কামরাঙ্গীরচরে অন্তত ২০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। সেখানে শত শত ভবন ভেঙে ও লোকজনকে উচ্ছেদ করে দক্ষিণ সিটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায়। এমন খবরে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আমরা কামরাঙ্গীরচরে এমন প্রকল্প চাই না। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে অনুরোধ করছি।"
এদিকে, কামরাঙ্গীরচরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সেই সঙ্গে চায় ৫০ তলার একটি ভবন ও ১০৪ ফুটের প্রসস্থ রাস্তাও নির্মাণ করতে। তবে এতে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে এমন প্রকল্প যাতে বাস্তবায়ন করা না হয়, সে জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন কামরাঙ্গীরচর জন্মভূমি রক্ষা কমিটি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন