মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার | লন্ডন ১৬ জুন ২০২৫||
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক সমঝোতার চার দিনের মধ্যেই তা বরবাদ হতে চলেছে বলে ঢাকা-সূত্রে জানা গেছে। একটি দলের শীর্ষ নেতা বলছেনঃ ড. ইউনুসের লন্ডন ফর্মুলা কাজ করছে না বলেই তাঁর মনে হচ্ছে।
খবর পাওয়া গেছে, ঢাকায় আজ মঙ্গলবার ১৭ই জুন সকাল সাড়ে ১০টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের নির্ধারিত দ্বিতীয় বৈঠক বয়কট করছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও হেফাজতে ইসলাম।
বিএনপির কান্ডারী তারেক রহমানের সাথে লন্ডনে যে পন্থায় ড. ইউনুস সমঝোতা করেছেন, এই তিনটি দল তা মানতে নারাজ। এ নিয়ে তারা ড. ইউনূসের ওপর দারুণ ক্ষুব্ধ। এই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ তারা করছে আজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বর্জন করে।
জামায়াত-এনসিপি-হেফাজত মনে করছে, তারেক রহমানকে অন সাইডে রাখতে ড. ইউনুস তাঁর এখতিয়ার-বহির্ভুত কিছু কাজ করেছেন, যা মেনে নেয়া যায় না। এগুলো হচ্ছেঃ
ড. ইউনুস এখতিয়ার-বহির্ভূত কাজ করেছেন
১। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে কার্যত তারেক রহমানের মাথায় দেশের আগামী প্রধানমন্ত্রীর মুকুট পরিয়ে দিয়ে এসেছেন, যা বস্তুত তাঁর এখতিয়ারের মধ্যে নেই।
তিনি তারেক রহমানকে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করবে। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে এই কাজটি তিনি করতে পারেন না।
বিএনপি নেতার প্রতি ড. ইউনূসের বিশেষ পক্ষপাতিত্ব
২। ইউনুস-তারেক শীর্ষ বৈঠকের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ড. ইউনূসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা তথা সরকারের পক্ষে দুই নেতার বৈঠক সম্পর্কে যৌথ ঘোষণা পাঠ করেন।
জামায়াত ও তাদের সহযোগীদের বক্তব্য হচ্ছে, বৈঠকটি দুই দেশের সমমর্যাদার দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠক ছিলো না যে, বৈঠকের পর একটি যৌথ ঘোষণা দিতে হবে।
ড. ইউনুস দেশের মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে একযোগে বা পৃথকভাবে বৈঠক করেন। কিন্তু এসব বৈঠকের পর এ পর্যন্ত কখনোই যৌথ ঘোষণা বা বিবৃতি অথবা যুক্ত ইশতেহার- কিছুই তাঁর পক্ষ থেকে আসেনি। কিন্তু লন্ডনে সেই কান্ডটি তিনি ঘটিয়েছেন।
বিএনপি নেতার প্রতি তিনি, যে কোন কারণেই হোক, রাখঢাক না করেই বিশেষ পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন।
তারেক তো ইশরাককে থামালেন না, সহযোগিতা কোথায় হলো?
৩। ড. ইউনুস লন্ডনে তারেক রহমানকে দেশের আগামী প্রধানমন্ত্রী বলে প্রকারান্তরে ঘোষণা দিয়ে এসেছেন। এই প্রেক্ষিতে তারেক রহমানের দায়িত্ব ছিলো বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা দেয়া।
কিন্তু সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পরিচয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার পর জামায়াত, এনসিপি ও হেফাজত মনে করছে লন্ডনে ড. ইউনুসের সাথে তারেক রহমানের সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতার পর দলটির এখন উচিত ছিলো, ইউনুস সরকারের প্রতি সহযোগিতার আন্তরিক হাত বাড়িয়ে দেয়া। তারা ইচ্ছা করলেই এখন ইশরাক হোসেনের বিষয়টি থামিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু তা হলো না।
আসিফ নজরুলকে ইশরাকঃ আমি বাকিতে বিশ্বাস করি না
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিজে ইশরাকের সাথে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, লন্ডন সমঝোতা হয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে, এর মধ্য দিয়ে ইশরাক বিজয়ী হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, আশা করা হচ্ছে। কিন্ত ইশরাক হোসেন জবাব দিয়েছেনঃ আমি বাকিতে বিশ্বাস করি না।
তিন দল মনে করছেঃ তারেক রহমান ইশরাককে থামাতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। এটা সরকারের প্রতি সত্যিকারের সহযোগিতার পরিচয় নয়।
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া সিদ্ধান্ত একজন নেতার সাথে বসে পাল্টানো হবে কেন?
৪। প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিলেন। অথচ, ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি লন্ডনে একটি মাত্র দলের প্রধানের সাথে বৈঠক করে জানালেনঃ প্রয়োজনীয় সব আবশ্যিকতা সম্পন্ন করা গেলে ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরুর আগেই নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি সম্মত।
জামায়াত ও সহযোগী দুই দলের বক্তব্য হচ্ছেঃ বিএনপি স্পষ্টত সরকারের বিশেষ আনুকূল্য পেতে শুরু করেছে, যদিও প্রত্যাশিত সহযোগিতা তারা দিচ্ছে না।
জানা গেছে, জামায়াত, এনসিপি, জমিয়ত, খেলাফত, হেফাজত ও চরমোনাই পীরের দল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে। জামায়াত চেষ্টা করছে, সবগুলো ইসলামী দলের সমন্বয়ে শক্তিশালী একটি জোট গড়ে তোলা, যাতে নির্বাচনের সময় ইসলামী দলগুলোর ভোট এদিক-সেদিক না যায়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন