ড. ইউনুসের ‘প্লাস থ্রি - মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা  .গঠিত হলো তিন দলের ‘কোয়ালিশন অব দ‍্য উইলিং’

gbn

মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, লন্ডন || 

প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদাসম্পন্ন দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস শুক্রবার লন্ডনে দক্ষতার সাথে তিনটি কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

১। শুক্রবার সকালে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়ে ড. ইউনুস এফেক্টিভলি তারেক রহমানকে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ফেলেছেন।

২। ড. ইউনুস ১৩ জুন শুক্রবার সকালে লন্ডন থেকে এফেক্টিভলি তারেক রহমানের নির্বাচনী ক‍্যাম্পইনের উদ্বোধন করে দিলেন। 

৩। ড. ইউনুস এফেক্টিভলি আওয়ামী লীগ বিরোধী ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এ যোগ দিতে তারেক রহমানকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছেন। এই ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর প্রধান পার্টনার এখন বিএনপি, আর প্রধান দুই সহযোগী থাকবে জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত এনসিপি। 

মেটিকুলাসলি ডিজাইন করা এই তিন দফা একশন প্ল্যানের মূল লক্ষ্য ‘ফ‍্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে চিরতরে অপাংক্তেয় করে দেয়া তথা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এর নেতৃত্ব দেয়া মূল রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের যে পরিণতি হয়েছিল, আওয়ামী লীগকেও সে রকমভাবেই রাজনীতির মাঠ থেকে ‘হাওয়া’ করে দেয়া। 

বিএনপির মতো প্রবল শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, তরুণ তুর্কি এনসিপির সার্বক্ষণিক লড়াকু মানসিকতা আর জামায়াতের মতো ডাই হার্ড কর্মী সম্বলিত দলের কোয়ালিশন ভেঙেচুরে আবারও শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করা আওয়ামী লীগের পক্ষে আর কখনো সম্ভব হবে না - ড. ইউনুসের হিসেব সেটিই বলছে। 

ড. ইউনুসের এই ‘প্লাস থ্রি - মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা অনুযায়ী ক্ষমতার দন্ড থাকবে বিএনপির হাতে, আর পার্লামেন্টারী রীতি মোতাবেক বিরোধী দলে বসবে জামায়াত ও এনসিপি। কিন্তু প্রধান প্রধান সব বিষয়ে তিন দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। আরও যারা উইলিং থাকবে এই কোয়ালাশনের সাথে থাকার, তাদেরও একোমোডেট করা হবে সেখানে।

সব মিলিয়ে একটি বিশাল জোটের কব্জায় চলে আসবে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গণ। এদেরই এক দল থাকবে ক্ষমতায়, অন্যরা সরাসরি ক্ষমতায় না থাকলেও উভয় পক্ষে থাকবে গভীর সমঝোতা। তাদের মূল লক্ষ্য থাকবে, কোনভাবেই আওয়ামী লীগকে আর মাথা তুলতে না দেয়া, অন‍্য কথায় তাদের ‘হাওয়া’ করে দেয়া। 

সম্প্রতিকালে যখন দেখা গেলো নির্বাচনের তারিখ ও আরও কিছু বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকার পক্ষের বিরোধে চব্বিশের জুলাইতে অর্জিত সকল সাফল্য ধূলিসাৎ হতে চলেছে, তখন ড. ইউনুস সাদা পতাকা ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, উদ‍্যোগ নিলেন বিএনপির সাথে সন্ধি করার।

বিএনপিকে নিজেদের সাথে রাখতে না পারলে সেই শূন‍্যতা ভরাট করতে এগিয়ে আসবে আওয়ামী লীগ। এনসিপিকে সাথে নিয়ে তা ঠেকিয়ে দেয়া সাধ‍্যে কুলোবে না জামায়াতের। ড. ইউনুস তা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। 

তাই রাজার দেয়া এওয়ার্ড নেয়ার চাইতেও ড. ইউনুসের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তারেক রহমানকে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এ নিয়ে আসা। সে কাজে আজ শুক্রবার ড. ইউনূস সফল হয়েছেন। 

এই মেটিকুলাস ডিজাইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় তারেক রহমানের ভূমিকা কী রকম? 

বিশ্লেষণ বলছে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতাকর্মীদের যে অপরিসীম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়েছে এবং দেশান্তরী হয়েও তারেক রহমানকে যে বিপুল প্রতিকূলতা ও মানসিক চাপের মুখে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে, তারেক রহমান সেটা মোটেও ভোলেননি। 

জুলাইয়ের পরপর বিএনপির কাছ থেকে জামায়াতের বেশ কিছুটা আলগা হয়ে যাওয়া আর তরুণ তুর্কিদের জুলাইয়ের একক মালিকানা দাবি করতে থাকা এবং আরও কিছু বিষয়ের প্রেক্ষিতে তারেক রহমান স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। তাঁকে নানা বিকল্প খোঁজায় মন দিতে হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সংবিধান বাতিলে সম্মতি না দেয়া, রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনে একমত না হওয়া, জুলাই সনদ করা নিয়ে কোন উৎসাহ না দেখানো - এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আওয়ামী লীগ খুব আশান্বিত হয়েছিল বিএনপির সাথে হাত মেলানো সম্ভব হতে পারে আর তা যদি হয়েই যায়, তাহলে বড় এই দুই দল মিলে ইউনুস সরকারকে ফেলে দেয়া সম্ভব হলেও হতে পারে। 

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকার আর বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে চলে এলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রমাদ গুনতে শুরু করে। তখনই আরেকটি মেটিকুলাস ডিজাইনের কাজ শুরু হয় দ্রুতগতিতে। 

সার্বিক আলোকে বলা যায়ঃ তারেক রহমান ও 
ড. ইউনুস- এই দুজনেই এখন ‘উইন - উইন’ অবস্থানে আছেন। 

আওয়ামী লীগকে হাওয়া করে দিতে পারলে ড. ইউনুসের লাভঃ তাঁর প্রতি শেখ হাসিনার সরকারের চরম নিবর্তনমূলক আচরণের উপযুক্ত জবাবটা দেয়া হবে। 

আর বিএনপির লাভঃ ১৬ বছরেরও বেশি সময় পর দেশের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন নিয়ে আবারও ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন।

এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে।

কিন্তু উইংসের পাশে রয়ে গেছে আরেকটি শক্তি - সশস্ত্র বাহিনী। তাদের কথা এই আলোচনায় আসেনি। আজকের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা কেমন হবে, তা জানতে আরেকটু অপেক্ষা করতে হতে পারে। 

তবে তারেক রহমান ডিসেম্বরের বদলে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন মেনে নিয়েছেন, সুতরাং, তাদের দিক থেকে, মনে হয় না আর কোন আপত্তি আসবে। 

বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতির চালচিত্র বদলে দেয়ার আকুল আকাঙ্ক্ষায় ড. ইউনূস আজ শুক্রবার ১৩ জুন তাঁর ‘প্লাস থ্রি - মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক সূচনা করলেন লন্ডনে। বাংলাদেশে এর বাস্তবায়ন কেমন হবে, কতোখানি হবে, সেটা দেখার অপেক্ষা এখন।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন