ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশে হামলার ঘটনায় ৬ সিক্রেট সার্ভিস সদস্য বরখাস্ত

gbn

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গত বছরের জুলাই মাসে নির্বাচনী সমাবেশে চালানো হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের ছয় সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে। গাফিলতির দায়ে তাদের ১০ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত বেতন ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সংস্থাটি জানিয়েছে। এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশে ওই হামলার এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

সিক্রেট সার্ভিস জানায়, অভিযুক্ত এজেন্টদের নাম গোপন রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আইনের কারণে।

তবে হামলার পরপরই তাদের সীমিত দায়িত্বে রাখা হয়েছিল এবং বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হয়। সেবার ২০ বছর বয়সী এক বন্দুকধারী ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালায়। গুলির একটি ট্রাম্পের কান ছুঁয়ে যায়—১৯৮১ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো বর্তমান বা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হামলায় আহত হন।

 

হামলায় একজন স্বেচ্ছাসেবী দমকল কর্মী কোরি কম্পেরাটো নিহত হন এবং আরো দুইজন দর্শক আহত হন।

সিক্রেট সার্ভিস পরে বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করে। হামলার পরপরই সিক্রেট সার্ভিসের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা শুরু হয়। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন তদন্তে সংস্থাটির বেশ কিছু গঠনগত সমস্যার কথা উঠে আসে এবং ৪৬টি সুপারিশ দেওয়া হয়।

 

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই ছয় এজেন্টের মধ্যে একজন তরুণ সদস্য সর্বোচ্চ ৪২ দিনের বরখাস্তাদেশ পেয়েছেন।

তিনি এই টিমের একমাত্র সদস্য যাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, শাস্তির মাত্রা প্রতীকী ও পর্যাপ্ত নয় এবং শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বরখাস্তগুলো মূলত পিটসবার্গ ফিল্ড অফিসে কাজ করা কর্মীদের ওপর চাপানো হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের মূল নিরাপত্তা টিম বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। হামলার সময় ট্রাম্পের নিরাপত্তা টিমের নেতৃত্বে থাকা শন এম. কারান বর্তমানে সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক।

তিনিই ট্রাম্পকে গুলির পর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। জানুয়ারিতে ট্রাম্প তাকে সংস্থার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন।

 

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত ১৩ জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা আমি কখনো ভুলিনি। সংস্থায় ইতোমধ্যেই বহু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে এমন ঘটনা আর কখনো না ঘটে।’ তবে অনেকের প্রশ্ন—এই নতুন নেতৃত্বের, বিশেষ করে কারান ও তার টিমের, প্রতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা যথেষ্ট কি না। কারণ তারা কেউই সিক্রেট সার্ভিসের সদর দফতরে শীর্ষ পদে ছিলেন না, যা অতীতে বেশিরভাগ শীর্ষ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ছিল প্রচলিত রীতি। এ ছাড়া নতুন প্রধান আইন উপদেষ্টা রিচার্ড গিউডিটা একজন বেসরকারি আইনজীবী, যিনি আগে কোনও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় কাজ করেননি।

সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, কংগ্রেসের দেওয়া ৪৬ সুপারিশের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং ৯টি বিষয় সংস্থার বাইরের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশেষভাবে নজরে এসেছে নিরাপত্তা আয়োজনের সময় দায়িত্ব বন্টনের অস্পষ্টতা। বাটলারের সমাবেশের দিন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা টিম ও পিটসবার্গ ফিল্ড অফিসের এজেন্টদের মধ্যে যোগাযোগে ঘাটতি ছিল এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সাথেও তথ্য আদানপ্রদান সঠিকভাবে হয়নি।

সমালোচনার মধ্যেই সেপ্টেম্বর মাসে, ফ্লোরিডায় গলফ খেলতে যাওয়ার সময় ট্রাম্পের ওপর দ্বিতীয় হামলার চেষ্টা হয়। গলফ কোর্সের প্রান্তে লুকিয়ে থাকা এক সন্দেহভাজনের দিকে এজেন্টরা গুলি চালান। তবে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এসব ইস্যুতে রাজনীতিবিদদের আগ্রহ কমে গেছে, যারা একসময় সিক্রেট সার্ভিসে সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন।

এজেন্টদের একজন আইনজীবী ল্যারি বার্গার বলেছেন, ‘আমরা আরো বড় শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ভাবছি।’ শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্টদের আপিল করার অধিকার রয়েছে।

সূত্র : দ্য নিউইর্য়ক টাইমস।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন