সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা,সে কি ভোলা যায়।আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/মোরা সুখে দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়। ঐতিহ্যবাহী আশরাফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের যেন হৃদয়ে হৃদয়ে নীরবে বেজেছে কবি গুরুর গানের এই কথাগুলো। পুনর্মিলনী মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে। খুঁজে ফিরেছেন শিক্ষাজীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকথা।উৎসবে শামিল হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন দেশ-বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আর তাঁরাই যেন ফিরে যান সেই উচ্ছল তারুণ্যভরা দিনগুলোতে।
গত ২৫ শে এপ্রিল (শুক্রবার) রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ার বেলনা ইকো রিসোর্টে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আশরাফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ । দীর্ঘদিন পর পরিচিত মুখগুলো কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। সবাই যেন খুঁজে ফিরছিলেন পুরোনো সব স্মৃতি এবং শৈশবের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। গানে-কবিতায়-আড্ডায়-স্মৃতিচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রিসোর্ট প্রাঙ্গণ। মিলনমেলার এই আয়োজনকে ক্যামেরাবন্দি করতে ভুলেননি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। আনাড়ি হাতেই সবাই যেন হয়ে উঠেন এক একজন আলোকচিত্রী। দীর্ঘদিন পর অগ্রজ ও অনুজদের দেখা হওয়ায় ক্যামেরায় সেই স্মৃতি ধরে রাখেন। কুশল বিনিময়, আলিঙ্গনে সবাই ফিরে যান প্রাণের বিদ্যালয় জীবনে।
অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় সোমদ্দার বলেন, ‘সমাজে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আমার প্রত্যাশা, বাসযোগ্য একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে তোমরা তোমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।আমি চাই, এই প্রতিষ্ঠান আগামীতেও গৌরবের সঙ্গে এগিয়ে যাক। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উচিত বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদান বা দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করা।’
রিইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক হাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম (ব্যাচ-২০১৬) বলেন, "ঐতিহ্যবাহী আশরাফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য সততা ও শৃঙ্খলা, যা দিয়ে তাঁরা জয় করেছে পুরো বিশ্ব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই মূল্যবোধের চর্চা অব্যাহত রাখবে এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করবে। এই বিদ্যালয়ের আঙিনায় কাটানো দিনগুলো আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর মধ্যে একটি। আমরা এখানে শুধু পড়াশোনা করিনি, বরং শিখেছি নৈতিকতা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী। প্রতিটি ক্লাসরুমের স্মৃতি, শিক্ষকদের স্নেহ, বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্ত—সবকিছু আজও হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে ।"
রিইউনিয়ন কমিটির সদস্য সচিব মাহফুজুর রহমান (ব্যাচ-২০০৬) বলেন, "আজকের এই দিনে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণকে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দিকনির্দেশনা এবং ভালোবাসা ছাড়া আমরা আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না। তাঁরা শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দেননি, বরং জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আমাদের এই বিদ্যালয় শুধু আমাদের বিদ্যার আলোয় আলোকিত করেনি, এটি আমাদের দ্বিতীয় পরিবার। তাই আমাদের দায়িত্ব বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা।"
দিনব্যাপী সবার চোখেমুখে ছিল পুনর্মিলনীর উচ্ছ্বাস। এ সময় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী আশরাফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান বলে ঘোষণা দেন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মোহাম্মাদ নিজাম উদ্দিনের অসাধারন সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আড্ডায়-স্মৃতিচারণায় কাটে দিনটি। সকালে আলোচনা সভা ও সম্মামনা প্রদান, স্মৃতিমন্থন, বিকালে গান-আবৃত্তি,খেলাধুলা এবং সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র-এর মাধ্যমে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি সফল ভাবে শেষ হয়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন