প্রতিবেশীদের কটূক্তি, ১৮ স্বর্ণপদকজয়ী মেয়েকে গুলি করে হত্যা করলেন বাবা

gbn

হরিয়ানায় হৃদয়বিদারক এক ঘটনা সামনে এসেছে। টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে নিজের বাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছেন তারই নিজের বাবা দীপক যাদব। ‘মেয়ের টাকায় দিন কাটাচ্ছেন!’ আত্মীয়-প্রতিবেশীদের কটূক্তি সইতে না পেরে টেনিস খেলোয়াড় মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছেন বাবা। 

হরিয়ানার গুরগাঁও জেলার সুশান্ত লোক-টু এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন দীপক।

নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার দিয়ে গুলি করেন তিনি রাধিকাকে। এ সময় তার মা অন্য কক্ষে ছিলেন।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রান্নাঘরে থাকা অবস্থায় দীপক পিছন থেকে পরপর পাঁচটি গুলি চালান রাধিকার ওপর। তিনটি গুলি লাগে তার শরীরে।

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ দীপককে গ্রেপ্তার করে এবং তার দুটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। 

 

পুলিশ জানিয়েছে, দীপক চেয়েছিলে তার মেয়ে টেনিস অ্যাকাডেমি চালানো বন্ধ করে দিক। কিন্তু রাধিকা সে প্রস্তাবে রাজি হননি।

 

জিজ্ঞাসাবাদে দীপক খুনের কথা স্বীকার করে বলেন, রাধিকা তার কথা শুনতেন না। বার বার নিষেধ করার পরও সামাজিক মাধ্যমে রিল বানাতেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। সবাই বলত আমি মেয়ের টাকায় খাচ্ছি। মেয়ের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হতো।

তাই রাগের মাথায় গুলি চালাই।’

 

তবে তদন্তে উঠে এসেছে, সম্প্রতি রাধিকা খেলার সময় কাঁধে ব্যাথা পান। কোর্টে তেমন ভালো ফল করতে পারছিলেন না। তাই নিজের এলাকায় শিশুদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি টেনিস অ্যাকাডেমি চালু করেন। এই উদ্যোগই বাবা দীপকের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। কারণ, রাধিকাই সংসারের মূল উপার্জনকারী হয়ে উঠেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দীপক বারবার রাধিকাকে অ্যাকাডেমি বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু রাধিকা তাতে রাজি হননি। দীপকের দাবি, ওয়াজিরাবাদ গ্রামে দুধ কিনতে গেলে লোকজন তাকে নিয়ে উপহাস করত। তাকে বলত, তিনি মেয়ের রোজগারে দিন কাটাচ্ছেন। এমনকি মেয়ের চরিত্র নিয়েও কুৎসা রটানো হতো। বৃহস্পতিবারও এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। 

দীপক জানান, অতিরিক্ত মানসিক চাপে এবং অপমানে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তিনি গুলি চালান। তার স্ত্রী মঞ্জু যাদব যদিও এই বিষয়ে লিখিত কিছু জানাতে অস্বীকার করেছেন। তবে দীপকের ভাই কুলদীপ যাদব থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ২৩ মার্চ রাধিকার জন্ম হরিয়ানার গুরুগ্রামে। একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন। ছোটবেলা থেকেই টেনিসের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। সেই উৎসাহ জুগিয়েছিলেন রাধিকার বাবা দীপকই। ২৫ বছর বয়সী রাধিকা হরিয়ানার সেরা পাঁচ টেনিস খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন ছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশন-এর মহিলাদের ডবলসে রাধিকার র‌্যাংক ছিল ১১৩। ৫৭টি প্রতিযোগিতায় ১৮টি সোনার পদক জিতেছিলেন হরিয়ানার এই টেনিস খেলোয়াড়।

এই ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উঠেছে প্রশ্ন—সমাজের মানসিকতা, নারীর আর্থিক স্বাধীনতা ও আত্মসম্মানের পথে সবচেয়ে বড় বাধা কি পরিবারের ভেতরের মানুষই?

সূত্র : আনন্দবাজার

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন