অখাতির !  আমরা কাউকে যখন কিছু বলি তখন অতিরিক্ত বলি; হোক সে প্রেমে কিংবা দ্রোহে

gbn

মোঃ রাজু আহমেদ। কলামিষ্ট। |

 আমরা কাউকে যখন কিছু বলি তখন অতিরিক্ত বলি; হোক সে প্রেমে কিংবা দ্রোহে। সামনে থাকার ভালোবাসায় ন্যাকামির শেষ রাখি না অথচ সঙ্গী  যখন চোখের আড়াল হয় তখন মন তাকে মনেও রাখে না। আলগা পিরিত পিচ্ছিল করতে করতে আমরা দিক হারিয়ে ফেলি আর সব দোষ লেপ্টে দেই কিপ্টা সাথীর সঙ্গে। কবিতা আর গান লিখে অল্প দিনের জন্য পারলে নিজেই বাউলাবেশে গাইতে শুরু করি, ‘বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো, আজ কেনো গো এমন হলো।’ 

ঝগড়া কিংবা মনোমালিন্য কিংবা অভিমান আমাদের যাপিত জীবনের নিত্যাকার অনুষঙ্গ। জীবনের সাথে এসব সরলরেখায় না চললে চারপাশকে বড্ড আলুনী মনে হয়। বিশ্বাস রাখতেই হবে, এসবে প্রেমে বড়ায়। জোয়ারের জন্য যেমন ভাটির অপেক্ষা করতে হয় তেমনি তীব্র প্রেমের দরিয়ায় ঝাঁপ দিতে মন-অভিমানের স্রোত থাকা চাই। কিন্তু বিপত্তি তো অন্যখানে। সে বিপত্তির উৎপত্তি দু-অংশে কিছুটা বিবৃত হচ্ছে। 

যা বলি তা অকাজের, যা বলার দরকার তা আদৌ বলি না :

দাম্পত্যে কিংবা বাকি সম্পর্কে যখন আমাদের সাথে বিপরীতজনের কিংবা স্বার্থে জড়িত কারো কোন বিপত্তি ঘটে; হোক সে নিজের দোষে কিংবা পরের দোষে তখন আমরা নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতে এমন কিছু শব্দ ও বাক্যমালার ব্যবহার করে বসি যার দন্ড হওয়া উচিত কেবল বাঁশ থেরাপি। কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় বিপরীতপক্ষ যে কোনভাবে নিজেকে সংযত রেখে এড়িয়ে যান বটে কিন্তু টেনে দেন আন্তরিকতার রেখা, তুলে দেন দূরত্বের দেয়াল। দিনে দিনে কমনে থাকে ভালোবাসা আর শুঁকোতে থাকে সম্প্রীতির সাগর। ফলাফলে, সে মরুভূমিতে আর নতুন কিছুর সৃষ্টি হয় না। কেবল খস খস করে!

অথচ পথটা ভিন্নও হতে পারতো। দোষে-গুণেই মানুষ। কারো না কারো দোষ না ঘটলে তো আর বিপত্তি বাঁধে না। কাজেই বোঝানো যেত, আরেকটু কোমলভাবে বলা যেত কিংবা নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখিত হওয়া যেতো, ক্ষমা প্রার্থণা করা যেতো। মানুষ যতোই প্রতাপশালী কিংবা অসহায় হোক-সবাই আসলে ক্ষমা করতে চায়। কেননা ক্ষমায় মহত্ব এবং বড়ত্ব লুকিয়ে থাকে। যেটা শাস্তির মধ্যে থাকে না বরং শাস্তিতে অশান্তির সলতে থাকে। যা ধিকি ধিকি করে জীবনকে পোড়ায়, থরে থরে ধর ক্ষয়ে দেয়।

 

কুবুদ্ধি এবং অশান্তির চারাগাছ রোপনে সহায়তা :

 

আপনি সুখে শান্তিতে আছেন এটা সহ্য করার ক্ষমতা ও মানসিকতা আপনার চারপাশে ঘিরে থাকা বহু আপনজনদেরও নেই; দূর তো আরো দূর! এ গুণ মনুষ্যের প্রবৃত্তিতে থাকার কথা নয়; অর্জন করতে হয়। কাজেই এরা সবসময় ছোট ছোট ছিদ্র আবিষ্কার করার ধান্ধায় থাকে। আপনি যদি তাদের সুযোগ দিয়ে বসেন তাহলে আপনাকে আর কিছুই করতে হবে ন। দেখবেন আপনার সুন্দর জীবন ক্ষত-িবিক্ষত হয়ে কখন হারিকেন জ্বলতে শুরু করেছে তা আপনি টেরই পাননি অথচ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে জীবনাকাশের বহুখানি। সুতরাং আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী কারা এবং কারা আপনার সর্বনাশ তালাশ করে- এ দুই শ্রেণীকে আপনার স্বার্থের জন্য আপনাকেই চিহ্নিত করতে হবে এবং এড়িয়ে চলতে হবে কঠোরভাবে। বানরের কাছে রুটি ভাগের দায়িত্ব দেয়া বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ হবে না। 

জীবনের সর্বক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষকে এড়িয়ে চলতে পারলে স্বস্তির জীবন উপহার পাবেন; যে জীবন আপনার কল্পিত জীবনের চেয়েও সুন্দর। এরা মিঠা শয়তান প্রকৃতির। আপনার কথা ওকে, ওর কথা তাকে, তার কথা আপনার কানে তুলে তুলে এরা মন-মস্তিষ্ক বিষিয়ে তুলবে। অথচ তাদের সবচেয়ে বড় গুন(!) তারা কোন ভালো কথা, উপকারী ব্যথা ছড়াবে না। রঙ-চঙ মিশিয়ে যেটুকু দিয়ে বন্ধু-বন্ধুতে দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে, ঘরে-ঘরে শত্রুতা বাড়ানো যাবে কেবল সেটুকুই প্রচার-প্রসারের কাজ করবে। অবৈতনিক কর্মী বলা চলে!

জগতে খাতির যেহেতু আছে কাজেই অখাতির থাকতেই হবে। তবে কেবল সতর্ক থাকতে হবে, অখাতিরের গর্ত যাতে খাতিরের বিস্তৃতিকের ছাড়িয়ে না যায়। আমরা সুখের তালাশী। দুঃখ এড়িয়ে সুখের নাগাল পেতে চাইলে বহুকিছুর ক্ষতিকর স্পর্শ থেকে নিজেকে সামলে রাখতে হবে। আর কেউ যদি নিছক দুঃখী হতে চায় তবে তাকে কিছুই করতে হবে না; চার হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকলেই হবে! 

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন