নগরের খালগুলোর ‘রুগ্ন’ দশা বহুদিনের। স্বাভাবিক স্রোতপ্রবাহ হারিয়েছে। দূষণ বিষে খালে পানির রঙ এখন কুচকুচে কালো। প্রতিদিনকার ফেলা আবর্জনায় কয়েকটি খালের বেশ কিছু অংশ প্রায় ভরে গেছে, চাইলে মাঝখানে হেঁটে চলা যায়। পাশাপাশি দখলদারদের হাত কিছু স্থানে এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, টান পড়েছে খালের শেকড় পর্যন্ত, অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া দায়!
সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নগরের খালগুলোতে তিনটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করা গেছে। প্রথমত ও প্রধানত, খালের অনেক অংশই এখন অবৈধ দখলে চলে গেছে। দ্বিতীয়ত, নগরের প্রতিদিনের বর্জ্যসহ শিল্প কারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে উঠেছে খালগুলো। এছাড়া অসচেতন নগরবাসীর ফেলা প্রতিদিনকার ময়লা-আবর্জনার কারণে ব্যাহত হচ্ছে খালের স্বাভাবিক স্রোতপ্রবাহ। নগরে এমন জায়গাও আছে যেখানে খালে শুধু প্লাস্টিক সামগ্রী ও পলিথিনের দেখা মেলে, পানির দেখা বলতে গেলে পাওয়াই যায় না।
জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর প্রধান দুই শাখা খাল হচ্ছে রাজাখালী ও চাক্তাই খাল। কিন্তু কর্ণফুলীর নদীর পাশাপাশি দখল হয়ে গেছে এ দুই খাল ও এর শাখা খালগুলোর অনেক জায়গা।
এদিকে শুধু দখলই নয়, দূষণেও বিপর্যস্ত নগরের খালগুলো। খালের পাড়ে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের পাশাপাশি নগরবাসীর ফেলা দৈনন্দিন আবর্জনায় খালের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। খালের অনেক অংশেই জমেছে ক্ষতিকর পলিথিনের স্তর। আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে বর্জ্য দূষণ ঠেকাতে অধিকাংশ কারখানায় নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। এছাড়া নগরবাসীর প্রতিদিনকার পয়ঃবর্জ্যও খাল দূষণের অন্যতম কারণ।
অন্যদিকে নগরের বেশ কয়েকটি খাল এখন রীতিমতো ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ময়লা পরিষ্কার না করায় খালের ওপরে দুই-তিন ফুট ময়লার স্তর জমে গেছে। এতে একদিকে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে এসব ময়লা-আবর্জনায় তৈরি হচ্ছে মশা ও ছড়াচ্ছে মারাত্মক দুর্গন্ধ। নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে খালপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খালের খোলা অংশে ময়লা-আবর্জনার কারণে অনেক স্থানে বোঝার উপায় নেই এটি খাল। হঠাৎ করে যে কেউ দেখলে মনে হতে পারে এটি ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন।
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরের খালগুলোর সংস্কারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে খালের ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশন, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালের পাড়ে সড়ক নির্মাণ, খননসহ সব ধরনের কাজই করছে চউক। তাই তারাই এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে চউক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলীর নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৬টি খাল এবং এসব খালে সংযুক্ত আরও ২০টি খালসহ মোট ৩৬টি খালের পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
চউকের প্রকল্পে খালের প্রশস্ততা রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর পাড় ঘেষে ৮৫.৬৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা খাল পরিষ্কারের কাজে ভূমিকা রাখা ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ ও ৬টি কালভার্ট নির্মাণও রয়েছে চউকের প্রকল্পে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন