‘জেতার সামর্থ্য ছিল, কোচের ভুল কৌশলেই হেরেছে বাংলাদেশ’

gbn

অনেক প্রত্যাশা ছিল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে। দীর্ঘ ৫৫ মাস পর দেশের প্রধান ভেন্যু ঢাকা স্টেডিয়ামে ফুটবল ফেরা এবং হামজা চৌধুরী, শামিত সোম ও ফাহামিদুল ইসলামদের নিয়ে নতুন শক্তির বাংলাদেশ দল ও ৪৫ বছর পর এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করা মিলে এই ম্যাচে খুব করেই জয় চেয়েছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা।

অনেক দিন পর ফুটবল নিয়ে তৈরি হয়েছিল উন্মাদনা, উৎসব। সেই উৎসবে পানি ঢেলে ম্যাচটি জিতে নেয় সিঙ্গাপুর। আফসোস আর বেদনায় ম্যাচের পর মাঠের সবুজ ঘাসেই শুয়ে পড়েন খেলোয়াড়রা।

 

ফুটবলে হার-জিত থাকবেই। সেই চিরন্তন সত্য মেনে নিয়েও কিছু প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সবার মনে। সাবেক ফুটবলার, কোচ, এমনকি সাধারণ দর্শকও মনে করেন জেতার মতো দলটিকে কি বেছে নেওয়া হয়েছিল? আরও ক্ষুরধার শক্তি থাকতে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা কেন উল্টো পথে হাঁটলেন।

তাহলে কি বাংলাদেশ দলের জয়ের সামর্থ্য ছিল না? ম্যাচের পর কোচ ক্যাবরেরাকে শুনতে হয়েছিল এমন প্রশ্ন, ‘দলের সামর্থ্য নাকি কোচের কৌশল, হারের জন্য দায়ী কোনটা?’

 

কোচ এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আমতা আমতা করেছেন। শুধু এতটুকুই বলেছেন, ‘সিঙ্গাপুরকে হারানোর মতো খেলতে পারিনি আমরা।’

কেন সিঙ্গাপুরকে হারাতে পারলো না বাংলাদেশ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে মতামত নেওয়া হয়েছে কোচ ও সাবেক ফুটবলারদের। সবার বিশ্লেষণে এ কথা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সিঙ্গাপুরকে হারানো সামর্থ্য ছিল বাংলাদেশের। কোচ সেই সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারেননি।

ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে দর্শক হয়ে ছিলেন কানাডা থেকে আসা শামিত সোম। দলের দ্বিতীয় বড় এই তারকা সিঙ্গাপুরের ম্যাচে থাকবেন, এটি ছিল অনুমিতই। যে কারণে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে এক পরিবর্তন ছিল অবধারিত।

 

ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের পর থেকেই সবার কৌতুহল ছিল, শামিতের জন্য কাকে জায়গা ছাড়তে হবে। কারণ, ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের সবাই ভালো খেলেছিলেন।

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশ দেখে সবার তো চক্ষু চড়কগাছ। ঘরের মাঠে খেলা, গ্যালারিভর্তি দর্শক, জয়টা বাংলাদেশের প্রয়োজন; এমন ম্যাচে ক্যাবরেরা দল সাজালেন রক্ষণভাগকে প্রাধান্য দিয়ে।

কয়েকদিন ধরেই নানা দিক থেকে শোনা গিয়েছিল, বাংলাদেশ দলে অবশ্যই একজন প্রথাগত স্ট্রাইকার রাখা উচিত। কিন্তু ক্যাবরেরা সেটা করলেন না। ৯ নম্বর হিসেবে কাউকে না রেখেই ম্যাচ শুরু করলেন ডিফেন্সিভ মুডে। যেটা কাল হয় প্রথমার্ধে। বিরতির বাঁশি বাজার আগমুহূর্তে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে এবং দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি। বাংলাদেশ পিছিয়ে যায় ২-০ গোলে।

 

ক্যাবরেরার টনক নড়েছিল সিঙ্গাপুর ব্যবধান ২-০ করার পর। খেলোয়াড় বদলি করেন, আক্রমণে শক্তি বাড়ান এবং প্রথাগত স্টাইকার আল-আমিনকে মাঠে নামান। বাংলাদেশ ব্যবধান কমিয়ে ২-১ করে। ২-২ হওয়ার সুযোগও এসেছিল কয়েকবার। যখন গোল দরকার, তখন দলের একমাত্র গোলদাতা রাকিব হোসেনকে তার পজিশন থেকে সরিয়ে একটু নিচে নামান। গোল আর হয়নি। ম্যাচ হেরে এশিয়া কাপে খেলার স্বপ্ন হয়ে যায় আরও ধূসর।

ভুটানের ম্যাচের একাদশে তিনটি পরিবর্তন। কারো কাছেই এটা বুদ্ধিদ্বীপ্ত সিদ্ধান্ত মনে হয়নি। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে গোল করা সোহেল রানার জায়গায় শামিতকে খেলান কোচ। আর ভুটান ম্যাচে শুরু করা জামাল ভুঁইয়াকে বেঞ্চে রেখে হোল্ডিং মিডফিল্ড পজিশনে খেলান হৃদয়কে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, ‘নিজেদের মাঠে যেকোনো দলের লক্ষ্য একটাই থাকে, জয়। তাই জয়ের জন্য ফরম্যাশনও থাকবে আক্রমণাত্মক। অথচ কোচ চারজন ডিফেন্ডারের সামনে দুইজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার রাখলেন। হামজার মতো পরীক্ষিত হোল্ডিং মিডফিল্ডার থাকতে কেন দুইজন লাগবে? নিজেদের অর্ধে ৬ জনকে ব্যবহার করলে আক্রমণভাগ দুর্বল তো হবেই। রাইট উইংয়ে অভ্যস্ত নন, সেই কাজেমকে খেলালেন। আবার রাকিবও বারবার তার প্রিয় পজিশন; মানে ডান দিকে চাপছিলেন, ক্রস ফেলছিলেন। লাভ কী? বল কানেক্ট করবে কে?’

 

বাংলাদেশ ব্যবধান কমিয়েও কেন দ্বিতীয় গোল পেল না? এমিলির কথা, ‘এক গোল দেওয়ার পর প্রয়োজন ছিল আরেকটি গোল আদায় করে নেওয়া। অবাক করার মতো বিষয় হলো- কোচ গোলদাতা রাকিবকে আক্রমণ থেকে নিয়ে গেলেন রাইটব্যাক পজিশনে! ডিফেন্ডার নির্বাচনেও কোচ ইচ্ছে মতো যা খুশি করেছেন। জেনুইন রাইটব্যাক বসিয়ে রেখে সেন্টারব্যাককে খেলিয়েছেন সেই পজিশনে। ঈশা ফয়সাল এ মুহূর্তে দেশসেরা লেফটব্যাক। অথচ তাকে স্কোয়াডেই রাখেননি কোচ!’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ী মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘কাবরেরা ম্যাচটা জয়ের কৌশল নেননি। বড়জোর এক পয়েন্ট ছিল তার লক্ষ্য। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের জন্য ছিল সিঙ্গাপুর ম্যাচের প্রস্তুতি। সেই ম্যাচে যাদের যথেষ্ট গেম টাইম দেওয়া হয়েছে, তাদেরকেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলানো উচিত ছিল। কাজেম কোনো অবস্থাতেই একাদশে আসে না। সে রাইট উইঙ্গার নয়। তাকে সেখানে খেলানো হয়েছে। অথচ এই পজিশনে রাকিবকে রেখে একজন প্রকৃত নাম্বার নাইন খেলানো যেতো। সুমন রেজা অথবা আল আমিনকে দিয়ে গোলের চেষ্টা করানো যেতো।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, কোচ এক পয়েন্টের জন্য খেলেছে। শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ছিলেন। অথচ এই ম্যাচটা আমাদের জয়ের জন্য খেলা উচিত ছিল। আরও অ্যাটাকিং কৌশলে খেলা উচিত ছিল। আমার মনে হয়েছে, এই ম্যাচে হৃদয়কে না খেলিয়ে অভিজ্ঞ সোহেল রানাকে খেলানো ঠিক ছিল। সর্বোপরি, এই দলের জেতার সামর্থ্য ছিল। তবে কোচ তা কাজে লাগাতে পারেননি।’

দল নির্বাচনে ঘাটতি দেখছেন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচে গোলরক্ষক নির্বাচনে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি ক্যাবরেরা। নিঃসন্দেহে মিতুল মারমা এ মুহূর্তে দলের সেরা। মিতুল ভুটান ম্যাচের দুই দিন পরই তার বড় ভাইকে হারিয়েছেন। ভাই হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার যথেষ্ট সময় কিন্তু পাননি। মানসিকভাবে যে মিতুল প্রস্তুত ছিলেন না, তা খেলাতেই প্রমাণ হয়েছে। শুরু থেকেই ছোট ছোট ভুল করছিলেন তিনি। আর দুটি গোলের পেছনেই তার দায় রয়েছে। দলে তো আরও দুইজন গোলকিপার ছিলেন। তাদের জন্য বিবেচনায় না এনে কেন তাকে নেওয়া হলো?’

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন