বাবলা চৌধুরীকে আনুস্টানিক ভাবে উৎসাহিত করলে অন্যায়ের অনিয়মে আপোষহীনরা উৎসাহিত হবে

নজরুল ইসলাম ||
 লন্ডনে COVID-19 করোনা কালীন সময়ে আমি আমার হাসপাতালে COVID-19 করোনা রোগীদের সংস্পর্শে থেকে কাজ করে যাচ্ছি, এখনো করছি। প্রথমে একটু ভীতি ছিল, এখন আর তা নেই। অদ্য আমার হাসপাতাল কতৃপক্ষ করোনা কালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ববোধ, সাহস ও করোনা রোগীদের সংস্পর্শে থেকে করে যাওয়া কাজের ভুযশী প্রসংসা করেছেন। My Chief Executive- আমাদের কার্ড দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। লিখেছেন, আপনার দুর্দান্ত সমর্থনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। লিখেছেন, আপনি অসামান্য, এবং আপনি  Royal Marsden Hospital কে যে বিশ্বাস করেন তার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে  কৃতজ্ঞ। আমার ভাল কাজ ও সাহসের প্রসংসা করায় এতে করে আমি গর্ববোধ করছি। সাহস ও দৃঢ় মনোবল রেখে আগামী দিন গুলোতে কাজ করতে উৎসাহিতবোধ করছি। হাসপাতালে কতৃপক্ষের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরো পজেটিব হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলো প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে প্রায় অনেকটা উধাও। ভাল কাজের আনুস্টানিক প্রসংসা করা বা কাউকে পুরস্কৃত করার মানসিকতা আমরা তৈরি করতে পারি নাই। যারা দায়িত্বে আছেন তারা বড়ই উদাসীন।

আমি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হলে বাবলা চৌধুরীর বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রিকে অবহিত করতাম। বাবলা চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী কতৃক পুরস্কৃত করার সুপারিশ করতাম। বাবলা চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে আসতাম, কৃতজ্ঞতা জানাতাম। বাবলা ও তিনির মত যারা আমাদের সমাজে আছেন -যারা অন্যায় অনিয়মে রুখে দাড়ায় তারা সত্যি এই সমাজের হিরো। তাদের স্থানীয় হিরো উপাধি দেওয়া উচিত। ভাল কাজের প্রসংসা করতে হয় , উৎসাহ দিতে হয়। ধর্ষণের মত সামাজিক ব্যাধি রোধে আমাদের কাজ করতে হবে হাতে হাত রেখে।

সিলেটের এম সি কলেজের ধর্ষণকারীদের নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হচ্ছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা, যিনি বাবলা চৌধুরী নামেই পরিচিত। ধর্ষিতার পাশে সাহস নিয়ে দাঁড়ান। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম গর্জে উঠেছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ঘঠনার বিবরন করেছেন স্পস্ট ভাযায়।

সেই দিন স্বামী ও স্ত্রীর কাছ থেকে বাবলা চৌধুরী ঘটনা শুনেই বলেছেন- এমন জঘন্য ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এদের ছাড় দেয়া উচিত হবে না। শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা বলেন। পুলিশ আসার আগেই বাবলা ওই নির্যাতিতা ও তার স্বামীকে নিয়ে ছাত্রাবাসের দিকে রওয়ানা দেন। সাইফুর-রবিউল এর কাছ থেকে গাড়ির চাবি উদ্ধার করেন। গেইটে দাঁড়িয়ে পুলিশের জন্য অপেক্ষা করেন। পুলিশ আসে, কয়েকজন নেতা ও সেখানে আসে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়, তর্ক হয়, অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা করতে চান। কিন্তু বাবলা চৌধুরী ছিলেন অনড়, রাজী হননি। এই সুযোগে পালিয়ে যায় ধর্ষকরা। বাবলা বলেছিলেন তাদের ছাড় দেয়া উচিত হবে না। তিনি নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ান। মেয়েটি ও তার স্বামী ধর্ষণকারীদের ফেইস চিনলেও নাম জানতেন না। বাবলাই বলে দেন তারা কারা। দৃঢ় কন্ঠে বলেন  তাদের বিচার হওয়া উচিত। বাহ! এমন সুনাগরিক, এমন সোনার ছেলে দেশে আছে ! বাবলা চৌধুরী তা প্রমান করেছেন। 

ধর্ষণের সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক থাকার কথা না। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছেলে পেলে কুকর্মে সম্পৃক্ত আছে সেটা এড়িয়ে যাবার সুযোগ কম।  মেধাবীরা যে লম্পট হবে না ইহা একটি ভ্রান্ত ধারনা। এম সি কলেজের এই অনভিপ্রেত ঘঠনা আমাদের ইংগিত দেয়। ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের ছেলে মেয়েদের পারিবারিক শিক্ষা ,মানবিক মুল্যবোধ, নৈতিকতাবোধ -এমন শিক্ষার উপর গুরুত্বরোপ করতে হবে। ইসলামিক লেবাসে এই দেশে ভন্ডামী সহজ এক ব্যবসায়ের নাম। এম সি কলেজের ধর্ষক পোলার দাড়ি দেখে মনে হয়েছে নুরানী চেহরায় আর লম্বা দাড়ীর অন্তরালে শয়তান বাসা বাঁধতে পারে যা আমরা 
টের নাও পাইতে পারি। আমাদের সমাজে এমন পুলাপাইন মেলা।

সমাজে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা বর্বরতা। ধর্ষণ ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে নারীরা। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন  ধর্ষণের জন্য পোশাকের কোনো দায় নেই। বরং দায়ী হচ্ছে ধর্ষকের মানসিকতা আর বিচারহীনতা। হিজাব পরে চলাফেরা করা মেয়ের গায়েও ছেলেরা হাত দেয়, বোরখা পরা মেয়েরাও ধর্ষণের শিকার হয়। তাই বলছি যতক্ষণ পর্যন্ত ছেলেদের মানসিক অবস্থার উন্নতি হবে না ততদিন এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। মানবাধিকার কর্মীদের সাথে একটু হালকা ভাবে দ্বিমত পোষণ করছি  যা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। মানুষের দৃষ্টি কাড়ে এমন আধুনিক পোশাক পরিচ্ছেদ করেন কু-স্বভাবের লোকদের দৃষ্টি কাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের একটু অন্য ভাবে চিন্তা করতে হবে। আচার আচরণে সৃজনশীল মন মানসিকতায় আপনি যদি সুন্দর আকর্ষণীয় না হন, যতই আধুনিক পোষাক পরিচ্ছেদ পরেন না কেন আপনাকে সুন্দর দেখাবেনা।

বিচারহীনতার কারণে ধর্ষনের ঘটনা বেশি ঘটছে। সমাজে একটি অন্যায় কাজ সম্পাদিত হল- সমাজপতিদের মুখ বন্ধ, জনপ্রতিনিধিরা আকাশ থেকে মাটিতে নেমেছেন এমনটাই ভাব। ধর্ষণের মত ঘটনা তারা যেন এই প্রথম শুনলেন। বিচার কার্যে দীর্ঘতা সৃষ্ট জটিলতার কারণে প্রতিটা অপরাধ দুর্বল হয়ে যায়। যখন একটি দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে রাজনৈতিক instability বিরাজ করে তখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অপরাধীরা মনে করে দুর্বল নারীরা কিছু করতে পারবে না। তাই নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয় বেশি। সারা দেশে প্রতিনিয়তই এসব ঘটনা ঘটছে -একটা দু’টো ঘটনা যখন আলোচিত হয় তখন সবার নজরে আসতে থাকে। দেশের প্রধানমন্ত্রিকে ধন্যবাদ দিতেই  হয় ,তিনির আন্তরিক তার অভাব নেই। সবাই মিলে এই ব্যাধি রোধে কাজ করতে হবে।

অপরাধীরা যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে শাস্তির বিধান করলে নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন অনেক কমানো সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব, ফোনকল, স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি জিরোতে নিয়ে আসতে হবে একটি মানবিক কারনে যে, সমাজে এই সব দুষ্ট লোকের কাছে আমাদের কারো স্ত্রী বোন কেউই নিরাপদ নয়।

নজরুল ইসলাম
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট
ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস, লন্ডন।
মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন