অশ্লীলতার রকমফের হয় না। অশ্লীলতা যে-কোনো মোড়কেই পাপ।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
একবারও কি ভেবেছেন, একটি অশালীন মন্তব্য কতখানি ক্ষতি করে? কারো পোস্টে, কোনো নারীর ছবিতে কিংবা কারো ইনবক্সে যে আপত্তিকর মন্তব্য ও মেসেজ করেন, ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন কিংবা বাজে ভাষায় মানহানি করেন সেটাও অশ্লীলতা। কারো কথা ও আচরণ তার পারিবারিক শিক্ষা, রুচি ও সভ্যতার নিদর্শন। কারো সামনে গোপনে অশালীনতা প্রকাশ করে অভিব্যক্তি দেখিয়ে ভাবলেন এ আর এমন কী? কেউ তো আর জানলো না। অথচ নিজেকে কত ছোট করলেন, নিচে নামালেন তা কেবল বিবেকবানরাই পরিমাপ করতে পারবে। আপনার কেউ নয়, পরিচিত নয় কিংবা স্বার্থ সংশ্লিষ্টও নয় অথচ সে-সব পোস্ট ও ছবিতে এমন মন্তব্য করেন যা আপনাকে বর্বরোচিত পশু মানসিকতার প্রমাণ করে। এসব কেন করেন এবং করে কী পান তা নিয়ে কখনো ভেবেছেন?
কেনো অশ্লীলতার পরিণতি ভালো না। আপনার শব্দচয়ন অশালীন হলে আপনার শিক্ষা ও সমাজ অর্থহীন। অন্যের জন্য উৎসারিত শব্দ যে সম্পর্কের নির্ধারক, আপনাকে মাপার মানদণ্ড- এই বোধ আপনার থাকা উচিত ছিল। কাউকে গালাগাল করে, আপত্তিকর শব্দে বকে কিংবা শূন্যে বাজে শব্দ ছুড়ে আপনার কোন উপকার হয় না বরং ভবিষ্যৎ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অশ্লীল কিছু দেখে আপনার চরিত্র ও শরীর দু’টোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনি যদি একান্তে বসেও অশ্লীল কোনো চিন্তা করেন তবে তাতে আপনার রক্ত দূষিত হয়। অশ্লীলতা শুধু বাক্য বা ভাষায় নয়, শব্দ বা কথায় নয় বরং তা ইঙ্গিতেও হতে পারে। যে অশ্লীলতা চিত্রায়িত এবং দীর্ঘকাল স্থায়ী থাকে তা মানুষকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অশ্লীলতাকে শিল্প যারা বলে তারা মূলত অন্ধ।
নগ্নতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সমানুপাতিকভাবে ক্ষতিকর। কারো মর্যাদাহানির জন্য আপনি প্রকাশ্যে বা ছদ্মবেশে গালাগালি করছেন, গুজব ছড়াচ্ছেন, বাবা-মা তুলে শব্দচয়ন করছেন বা নারীর অঙ্গকে বিকৃত ভাষ্যে উপস্থাপন করছেন? ভাবছেন এতে আপনি জয়ী হচ্ছেন? আলবত না। বরং দুনিয়ার যত ক্ষতি হচ্ছে সে-সবের ভাগীদার হচ্ছেন। আপনার পতন অনিবার্য হচ্ছে। ধর্ম বলছে, আপনি যার নামে মিথ্যা রটাচ্ছেন, কুৎসা করছেন এবং অশ্লীল শব্দচয়ন করছে তাকে জিতিয়ে দিচ্ছেন। তার পাপ আপনার পুণ্য দিয়ে মিটিয়ে দিচ্ছেন। আপনি অশ্লীলতার প্রবক্তা মানে অনেকের ঘৃণার বোঝা আপনার কাঁধে চাপছে। আপন কিংবা পরের কেউ আপনাকে পছন্দ করে না।
অশ্লীলতার রকমফের হয় না। অশ্লীলতা যে-কোনো মোড়কেই পাপ। একান্ত গোপনে যা করেন তাও আপনাকে ক্ষতিগ্রস্তই করবে। ইদানীং ভার্চুয়াল জগতে অশ্লীলতার পরিধি বাড়ছে। নামে-বেনামে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা। কেউ বিরুদ্ধে মতের, ভিন্ন গোত্রের কিংবা অন্য ধর্মের- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবা-মা, বউ-কন্যা তুলে ছড়ানো হচ্ছে অসামাজিক কথা। কারো চেহারা বিকৃত করে, কাউকে গোষ্ঠীগত আক্রমণ করে হেয় করার মানসে চলছে অথর্ববেদের অশালীন ভাষার আক্রমণ। এখানে নারীকে কী পরিমাণ হেনস্তা করা হচ্ছে তা ভুক্তভোগী মাত্রই সাক্ষ্য দেবে। কাগজ-কলমে শিক্ষার হার বেড়েছে বটে তবে মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ভদ্রলোকের মুখোশে আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিপাট ভণ্ড ও বক ধার্মিক।
অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে, কোনো স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে অশালীন শব্দ ও বাক্যের প্রয়োগে নিজের ধর্ম-জাত প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সম্প্রতি রাজনৈতিক স্লোগানেও অশ্লীলতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমরা কবে যে মানুষ হবো? কিংবা মানুষ হওয়ার চেষ্টা আদৌ করি কিনা সে প্রশ্নও উঠছে। কন্যাসম মেয়ের ইনবক্সে কাপুরুষের জাত চেনাই! নায়িকাদের ছবিতে জানাই তাকে বিছানায় চাই! ব্যক্তি না শোধরালে সে সমাজ শুধরাবে না। মানুষের কথা ও ভাষার চর্চা হোক নেয়ামতের সফল বাস্তবায়ন। মানুষের কথা ও কাজ শয়তানের ধৃষ্টতা ছাপিয়ে গেলে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। আমরা কি সম্মিলিতভাবে ধ্বংসের পথেই চলবো?

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন