জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
সিলেটে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়েরকৃত একটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় হাজির হতে পারেননি। আদালত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দেন।
গতকাল মঙ্গলবার এই সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ‘তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ (আইন নং ১১)’ এর ধারা ৫ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির নির্দেশিত ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসারে এই সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে অবসরে থাকা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হারুন মজুমদার অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে তিনি ঢাকার ডেমরা থানায় উপস্থিত হয়ে থানার অফিসার ইনচার্জের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে যুক্ত হন। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আদালতের বিচারক সাক্ষ্য আমলে নেন।
সাক্ষ্য গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের প্যানেল আইনজীবী ফকরুল ইসলাম। আসামি পক্ষে প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষীকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল খালিক। সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের প্রতিনিধি চয়ন দাস।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো সিলেটে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সিলেটের আদালতের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিলেটের শাহপরান থানায় মামলা করেন তৎকালীন এসআই মো. আব্দুল মোতালেব। মামলায় আসামি করা হয় ছয়জনকে।
আসামিরা হলেন- মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার মুড়াউল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে কামরুল ইসলাম, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার আফালকাটি গ্রামের মৃত বজলু সিকদারের ছেলে মামুন সিকদার ও তার স্ত্রী রিনা বেগম, বগুড়া জেলার ছোট এলাংগী গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর মেয়ে কুহিনুর বেগম ও সুনামগঞ্জের ছাতক থানার বাগবাড়ি গ্রামের আলতাফ আলীর ছেলে সেলিম মিয়ার স্ত্রী রুনা বেগম। এদের মধ্যে কামরুল, মামুন ও রিনা ওই সময় সিলেট নগরীর ইসলামপুর এলাকায় এবং কুহিনুর শিবগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট রাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন এসআই মো. আব্দুল মোতালেবসহ পুলিশের একটি টিম। সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা আসামিদের ভাড়া বাসা থেকে তাদের কব্জায় থাকা তিন নারীকে ও এক শিশুকে উদ্ধার করেন। এসব নারীকে আসামিরা আটকে রেখে পতিতাবৃত্তি করাচ্ছিলেন।
২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন এসআই হারুন মজুমদার। চার্জশিটে দুই আসামিকে বাদ দেওয়া হয়। উপরোক্ত চারজনকে আসামি করা হয়।
দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় মামলাটি মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম চলছে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন