শায়েস্তাগঞ্জ(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি |
হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের পূর্ব কাটাখালী গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া (৪২)। তিনি হবিগঞ্জের মাটিতে নানান জাতের আম ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষি বিভাগকে। তাঁর দেখাদেখি এলাকায় আম চাষে উৎসাহী হয়েছেন অনেকে।
সেলিম মিয়ার নয় বিঘা জমিতে আমের বাগান।বাগানে রয়েছে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই, আম্রপালি, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গাসহ কয়েক প্রজাতির আম। তিনি বলেন, ‘বাগানের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। গতবার ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকার আম বিক্রি হয়েছিল। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এবার ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে। তবুও বিক্রি ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
আম বাগানের পাশেই মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, বরবটি, শশা, কাঁচা মরিচ লাগিয়েছেন সেলিম । এছাড়া লিচু, মুকি,আলু, সিম, কলা, আদা, ধনিয়াপাতা থেকেও প্রতি বছর ভালো টাকা আয় হয় তাঁর। আম বাগানে মৌসুমে লালশাক ফলিয়ে বাড়তি আয় করেন তিনি। এক ফসলের মাঝে সাথি ফসল চাষ করে দেখেছেন লাভের মুখ।
পূর্ব কাটাখালী গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে কৃষক কৃষক সেলিম । প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এরপর আর পড়ালেখা এগোয়নি। চার বছর ধরে মন দিয়েছেন কৃষিতে। বাড়ির পাশে পৈতৃক জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন তিনি । তাঁর ভাষায়, ‘সঠিক পরিকল্পনা, যথাযথ পরিচর্যা ও পরিশ্রম করতে পারলে কৃষিকে লাভজনক করা যায়। আগে যে জমিতে বছরে ৫০ হাজার টাকার ধান হতো এখন সেখানে ৫ লাখ টাকার আম হচ্ছে। সেলিম জানান, তার বাগানে ১৭শ আমের গাছ রয়েছে। সব গাছে আম ধরলে বছরে ১৫ লাখ টাকার বিক্রি হবে।
সেলিমকে দেখে কৃষিকাজে আগ্রহী ব্যক্তিদের একজন পূর্ব কাটাখালী গ্রামের লিটন মিয়া। তিনি বলেন, পতিত জমিতে আম বাগান করেছেন এবং বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। একই গ্রামের বিলাল মিয়া বস্তায় আদা চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন।
সেলিম মিয়া জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিউটন বিহারী অধিকারী বিনামূল্যে ৩৫টি আমের চারা দিয়ে উৎসাহ দেওয়ায় সেলিম কৃষিতে নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছেন।
কৃষক সেলিম মিয়া সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর অফিসার শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘তিনি উপজেলার একজন অগ্রগামী ও আধুনিক কৃষক। তাঁর আম বাগানটি হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় আমবাগান । রাজশাহীর মতোই আমের ফলন হয়েছে তাঁর বাগানে। তিনি একটি ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আরেকটি ফসল আবাদ করেন। এতে করে ভূমির সঠিক ব্যবহার হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার একেএম মাকসুদুল আলম বলেন, কৃষক সেলিম একটি উদাহরণ। তাঁর কৃষির প্রতি আগ্রহ রয়েছে। আমরা তাঁকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সিলেট অঞ্চলে কৃষি প্রকল্পের আওতায় তাঁকে একটি 'ড্রিপ সেচ' মেশিন প্রদান করা হয়েছে। যেটি সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চলে। যার সাহায্যে শুকনো মৌসুমে সহজেই প্রতিটি গাছের গুড়ায় পানি দেওয়া যায়। তাঁর বাগানের আমগুলো আঁশবিহীন, বিষমুক্ত,সুস্বাদু ও রসালো।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন