নিরবতা ভেঙে সরব কোহিনূর, যা বললেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে

gbn

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

অবশেষে সরব হলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক কোহিনূর আহমেদ। নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে তিনি দলে তার অবস্থান ও সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রেখেছেনন।

 

 

 

গত ১০ জুন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকের দল থেকে বহিস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি নিরব ছিলেন।

 

তবে নিজে নিরব থাকলে তার পক্ষ থেকে জোরালো প্রতিবাদ হয়েছে। অনেক অনুরাগী নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন।

 

 

তবে কয়েকদিনের নিরবতা ভেঙে বৃহস্পতিবার তিনি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে বিস্তারিক বক্তব্য দিয়েছেন।

 

 

‘দক্ষিণ সুরমায় বিএনপির রাজনীতিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা কখনও সফল হবে না’ শীর্ষক বক্তব্যে কোহিনূর নিজেকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অন্যতম সুসংগঠিত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় দলীয় রাজনীতিকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা চলছে। কিছু অদৃশ্য ও অশুভ শক্তি এ অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহর ইচ্ছায়, এ ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হবে না।

 

আমি, কোহিনূর আহমেদ, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে যেমন বিনয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলেছি, ভবিষ্যতেও তাই করবো। কারণ দলের আদর্শই আমার রাজনৈতিক জীবনের মূল প্রেরণা।

 

 

দলের প্রতি নিজের নিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়েছে আদর্শ ও ত্যাগের ভিত্তিতে। বিএনপির প্রতি যে অটল নিষ্ঠা, ত্যাগ ও সংগ্রাম দীর্ঘ সময় ধরে বহন করে চলেছি, সেটির মর্যাদা আমি নিজের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখি। তাই এ দলের ক্ষতি হোক, তা কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। দলের স্বার্থবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্রকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করাই আমার অঙ্গীকার। আমাদের নেতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত সঠিকভাবেই বলেছেন— ‘দলের ক্ষতি হলে কষ্টটা ত্যাগীরাই পাবে, সুবিধাবাদীরা নয়।’  আজ আমি সেই কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করছি।

 

 


তিনি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কিছু কুচক্রী মহল নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে গিয়ে দলের ভেতর মিত্র খোঁজার বদলে বাইরের অস্বচ্ছ ও অশুভ শক্তির সঙ্গে আঁতাত করছে। এদের অনেকেই গত দেড় দশকে আন্দোলন-সংগ্রামে, রাজপথে কিংবা বিপদে-আপদে দলের পাশে ছিলেন না। অথচ আজ রাজনৈতিক বাতাসের দিক পরিবর্তন হতে দেখে তারাই দলের সুসময়ে সুবিধা ভোগের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। এরা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, তাই পেছনের দরজা দিয়ে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে। এমনকি কেউ কেউ সরকারের দোসর হয়ে দলের ক্ষতি সাধনের হীনচেষ্টায় মেতে উঠেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক।’

 

নিজের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন পরীক্ষিত কর্মী। বিগত ১৭ বছর ধরে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম, নানা সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার আগে ও পরে অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছি। তারপরও দলীয় কর্মসূচি থেকে এক মুহূর্তের জন্যও পিছপা হইনি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে আমি জীবন বাজি রেখে অংশগ্রহণ করেছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে ছিলাম, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি। অথচ আজ কিছু সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারী গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।’

 

 

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দলীয় কার্যক্রমের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তবে ৫ আগস্টের পর থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একটি অদৃশ্য রাজনৈতিক শক্তি, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তারা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কিছু অনুপ্রবেশকারী ‘হাইব্রিড’ চক্র, যাদের গত ১৫ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা নেই। অথচ আজ তারা দলের সুসময়ে ভিড় জমিয়ে আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

 

 

নিজের আদর্শ দলীয় আনুগত্য প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘ আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শকে ভিত্তি করেই আমি রাজনীতি করেছি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আমি নির্বাচিত হয়েছি তৃণমূল নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ ভোটে—এটি আমার জন্য একটি বড় দায়িত্ব ও গর্বের বিষয়। আমার কাছে দলই প্রাণ। আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিগত সময়ে আমরা যেভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, ঠিক সেইভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিএনপির ৩১ দফা রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা জনমত গঠনে নিরলস পরিশ্রম করছি।’

 

অপপ্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই কর্মকাণ্ডই কিছু মহলের সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা প্রতিনিয়ত আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কিছু সুবিধাবাদী চক্র, যারা দলে প্রত্যাশিত পদ-পদবি না পেয়ে হতাশ, তারা এখন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে মরিয়া। রাজনীতিতে সদ্য আগত কিছু ব্যক্তি অতি দ্রুত সুবিধাজনক অবস্থান দখলের মানসিকতায় দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, বিশেষ করে অবরোধ কর্মসূচির সময়—তখন বহু পদবিধারী নেতাকে অনুরোধ, অনুনয় করেও একদিনের জন্য রাজপথে নামানো যায়নি। অথচ তারাই আজ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় সক্রিয় হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এদের কেউই আন্দোলনের সময় আমাদের পাশে ছিল না। অথচ এখন তারাই সোচ্চার হয়ে উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে, যারা রাজপথে একদিনও নামে না। আমার রাজনৈতিক জীবন দলনিষ্ঠা ও আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বিএনপির মূল্যবোধকে হৃদয়ে ধারণ করেই আমি সততার সঙ্গে রাজনীতি করে আসছি। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আমি নির্বাচিত হয়েছি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সরাসরি ভোটে। দলই আমার কাছে প্রেরণা, দলই আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।’

 

 

সম্প্রতি দুটি গোত্রের বিরোধ প্রসঙ্গে কোহিনূর বলেন, ‘সম্প্রতি আমার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় দুটি গোত্রের মধ্যে যে বিরোধ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমাকে জড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এই ঘটনায় নুন্যতমভাবে জড়িত নই, এমনকি আমি ওই ঘটনায় সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ওয়াকিবহালও নই।’

 

 

দলীয শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি খতিয়ে দেখার ব্যাপারে তার প্রত্যাশা প্রসঙ্গে বলেন,‘ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যথাযথভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং সত্য উদঘাটন করে আমার প্রতি সুবিচার করবেন।’

 

দলের প্রতি তার ত্যাগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে রাজনৈতিক ত্যাগ কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমি আমার পিতা-মাতাকে হারিয়েছি, চিকিৎসা বা সেবাও করতে পারিনি। এমনকি কারাবন্দিত্বের কারণে পিতার জানাজায়ও অংশ নিতে পারিনি। তারপরও আমি রাজনীতি থেকে সরিনি, নীতি ও আদর্শের পতাকা কখনো নিচে নামাইনি। একটি দমন-পীড়নমূলক সরকারের নির্দেশে যখন আমাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছিল, যখন চারদিকে তল্লাশি, গ্রেপ্তারের হুমকি, জীবন নিয়ে চরম উদ্বেগ—তখনও আমি সাহস হারাইনি। রাজপথেই ছিলাম, মাথা উঁচু করে, দলের পতাকা বুকে নিয়ে। আমরা যারা ত্যাগ করে তৃণমূলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছি, আমাদের সাময়িককভাবে সরিয়ে রাখা গেলেও, আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলা যায় না। আমরা বারবার উঠে দাঁড়াই—আরও দৃঢ়, আরও অপ্রতিরোধ্যভাবে।’

 

 

তিনি শেষ করেন এভাবে ‘অবশেষে বলবো, আমি দলের প্রতি অবিচল, আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হলেও, ন্যায় ও সত্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে দলীয় শৃঙ্খলার ভেতর থেকেই আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি—দক্ষিণ সুরমায় বিএনপির রাজনীতি আরও শক্তিশালী হবে, ইনশাআল্লাহ। যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের রাজনৈতিক পরিণতি হবে ভয়াবহ এবং ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।’

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন