লন্ডন, ৩০ জুন ২০২৫ ||GBNEWS24.COM ||
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের সঙ্গে তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে 'বাংলাদেশি হেরিটেজ মাস' উদযাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই বিশেষ উদ্যোগটি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হবে।
ইউরোপের প্রথম নির্বাচিত মুসলিম ও অশ্বেতাঙ্গ মেয়র লুৎফুর রহমান, হাইকমিশনার ইসলাম এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কার্যালয়ে আজ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র; এর বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদন ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড, যার ৬ বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট এবং ১২,৫০০ কর্মচারীর বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে। এই বিষয়গুলো জেনে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম মেয়র লুৎফুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মেয়র লুৎফুর রহমানও 'বাংলাদেশি হেরিটেজ মাস' উদযাপনের প্রস্তাবকে সানন্দে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রস্তাবিত কার্যক্রমসমূহ
এই 'হেরিটেজ মাস' উদযাপনের অংশ হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (হস্তশিল্প, রন্ধনশৈলী, চলচ্চিত্র উৎসব, চিত্র প্রদর্শনী, এবং সামগ্রিক শিল্প ও ঐতিহ্য প্রদর্শন), ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, তরুণ ও বয়স্কদের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক কর্মশালা, তরুণদের জন্য নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ প্রদান, তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিশেষ কর্মসূচি এবং সেমিনার (মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি) আয়োজন।
এই সব কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো সংস্কৃতি, শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের যৌথ সমন্বয়ে একটি কোর গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ভূমিকা
টাওয়ার হ্যামলেটস বরোতে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংখ্যক (৩৫%) ব্রিটিশ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাইকমিশনার ইসলাম GCSE (General Certificate of Secondary Education) পরীক্ষায় বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি, যাতে তারা নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণরা যুক্তরাজ্যের মূলধারার বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুব ভালো করছে এবং তারা বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।
মেয়র লুৎফুর রহমান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ চাই।” তিনি আরও যোগ করেন, টাওয়ার হ্যামলেটস একটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুধর্মীয় জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি।
এই ধরনের উদ্যোগ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে আরও নিবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন