সম্পর্কের ভাঙন আর সুখের অভাব

gbn

ফটোসেশন করে সুখ প্রকাশক প্রজন্মের মনের দূরত্ব কত

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।  

ঘরভরা সব আছে—এসি-ফ্রিজ, খাট কিংবা পালঙ্ক। চাকুরি কিংবা ব্যবসা আছ, সঞ্চয় করা অর্থও আছে। অভাব শুধু সুখের। ব্যস্ত মানুষের দূরত্ব ঘোচানোর জন্য একসাথে দূরে কোথাও বেড়াতে বের হতে হয়। অথচ সম্পর্কের বয়স কত? বন্ধন কেটে যায় যায় অবস্থা! পাশাপাশি বিছানায় শুয়েও দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে মোবাইল হাতে পড়ে থাকে। শহরে, সমাজে কত সম্পর্ক যে তলানিতে গিয়ে কোনোমতে টিকে আছে—তা স্রষ্টা জানেন। কেউ সন্তানের সুতোয়, কেউ কেবল সামাজিকতায় দীর্ঘশ্বাসে বেঁচে আছে।

 

ফটোসেশন করে সুখ প্রকাশক প্রজন্মের মনের দূরত্ব কত— তা জানার আগ্রহ কারো নেই। টেলিস্কোপ দিয়ে দূরত্ব মাপা লাগে না বরং কথায় উৎপাদিত ব্যথায় অনুভব করা যায়। ব্যস্ততার অজুহাতে, ইগোর প্রত্যাঘাতে কিংবা সামাজিক অবস্থানের মাপকাঠিতে মানুষের সব জুটেছে। অভাব কেবল প্রশান্তির। ঘাটতি বিশ্বাসের এবং অসুখ অশান্তির। মোবাইলে ক্যামেরা জীবনকে যেমন রঙিন করে ধারণ করতে পারে, আসলে জীবন তার কাছাকাছিও নয়। ধূসররঙের বাস্তবতায় মোড়ানো। ক্ষতবিক্ষত, ছাল উঠে যাওয়া সম্পর্ক কেবল অজানা আঁশে কোনোমতে টিকে আছে।

 

সংসারের মধ্যে কেমন যেন ভাঙন চলছে। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে সন্তান। দূরত্বের দেয়াল উঁচু হচ্ছে। যেন শক্ত হচ্ছে। সবার আলাদা আলাদা জগৎ তৈরি হচ্ছে। নিজস্বতা স্বার্থবাদিতায় মোড়ানো। কারো ব্যক্তিজীবনে যেন প্রিয়জনের প্রবেশাধিকার পর্যন্ত নেই। সুন্দর-স্বাভাবিক জীবনের জন্য এত ব্যাকুল হয়ে ছোটার দরকার আছে? কারো অধিকার হরণ করার, অসততাকে বরণ করার কিংবা শুভ-ন্যায়কে বারণ করার কী প্রয়োজন? একজন মানুষের, একটা পরিবারের কত লাগে? ভোগ করা কিংবা ব্যয় করা যায় কত? মানুষ সুসময় অপব্যয় করে চলছে। কাউকে ঠকালে সে ঠক তো ফেরত আসে। দুদিনের দুনিয়ার তিনদিনের চারদিকে দখলের প্রতিযোগিতা কত অশান্তি বাসা বাঁধায়?

 

অল্পে তুষ্ট হলে জীবনের গল্প কত সুন্দর হতো। অথচ পারিপার্শ্বিক দুর্ঘটনাগুলোর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে অবাক হতে হয়। জীবনের থেকে অভিযোগ কমাতে পারলে চারদিকে কত রঙ ছড়িয়ে যেত! সুখী জীবনের চেয়ে সৌন্দর্যের আর কী হতে পারে? লোভ-ক্ষোভ ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই আনে না। সম্পর্কে যত্ন এবং সময়—রত্নের সন্ধান দেয়। ছোট্ট একটা জীবন অসুখে কাটিয়ে ফায়দা কী?

 

সবকিছুর কায়দা আছে। যার যেটুকু প্রাপ্য, তা পরিশোধ করতে হবে। যার কাছে যা ঋণ, তা আদায় করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা ছাড়া, প্রিয়জনের চোখে ভালো মানুষ ও ভরসার মানুষে পরিণত হওয়া ছাড়া বহি অশান্তিতে বেঁচে থেকে লাভ কী? জীবনের স্বতঃমূল্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকৃতি দিতেই হবে। সুখ-শান্তি মানবজীবনের সবচেয় বড় এ দামী সম্পদ। 

 

জীবন মোটেও অসুন্দর নয়। আমরা স্বার্থের মোহে চারপাশ নষ্ট করি। সুখের সমষ্টি অর্জন করতে গিয়ে সূক্ষ্ম উপলব্ধিগুলো উপেক্ষা করি। দাম্পত্য যদি লাম্পট্যের কাছে বিক্রি হয়ে যায়, প্রেম যদি পরকীয়ায় রূপান্তরিত হয়— তবে সুখ কীসে? এই যে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, অসীম দ্বন্দ্ব— তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়েই অনুযোগ বাসা বাঁধে।

 

পরস্পরকে দেখে রাখুন, আপনজনকে ভালোবাসুন। ভালোবেসে আগলে রাখলে অবহেলার অভিযোগ ওঠে না। সুখের চেয়ে বড় কিছু, বেশি কিছু মানবজীবনের নেই। ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন। রাঙিয়ে তুলুন জীবনকে। যতদিন বাঁচতে হবে তা যেন সুখের তালাশেই কাটে। সময়ের দোষ নাই; দোষ মানুষের, দোষ কর্মের! ভাগ্যকে অস্বীকার করে গন্তব্যে উপনীত হওয়া যায় না তবে দায়ী করার মন্তব্য করা যায়!

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন