গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে কয়েক মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা জাতিসংঘের। এর মধ্যেই উপত্যকার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর এল-বালাহ শহরের বাতাসে সোমবার শোনা যায় উদযাপনের শব্দ।
বাস্তুচ্যুতদের একটি অস্থায়ী শিবিরের এদিন উত্তরাঞ্চল থেকে আসা এক ফিলিস্তিনি দম্পতির বিয়ে হয়। সে উপলক্ষেই যুদ্ধের মধ্যেও মানুষকে জড়ো হয়ে উদযাপন করতে দেখা যায়।
২৩ বছর বয়সী মাহমুদ এবং ১৮ বছর বয়সী শাইমা খাজিক আট মাসেরও বেশি আগে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করতে হয়।
এক সময় তাঁরা পরিবারসহ গাজা শহরের শুজাইয়া পাড়া থেকে পালাতে বাধ্য হন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা এই অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছেন।
তাঁবুর ভেতরে শাইমাকে তাঁর মা, বোন এবং বন্ধুরা ঘিরে রেখেছে এবং অন্য নারীরা গান গাইছেন। ছবি : আলজাজিরা
মাহমুদ আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বোমাবর্ষণ ও বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে বিয়ে স্থগিত করে বাড়ি ছেড়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি।
উদযাপনের জন্য যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ না দেখতে পেয়ে আমরা অনাড়ম্বরভাবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিই।’
এ দম্পতি বাস্তুচ্যুত প্রতিবেশি ও বন্ধুদের হৃদয়ে কিছু আনন্দের আভাস নিয়ে আসার আশা নিয়ে একটি জাঁকজমকহীন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তাঁবুর নিচে পরিবারের সদস্য এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা জড়ো হয়েছিল। শাইমাকে তাঁর মা, বোন এবং বন্ধুরা ঘিরে রেখেছিল।
অন্য নারীরা গান গাচ্ছিলেন। এ সময় শাইমার হাত ধরে মাহমুদের মুখে খুশি ভেসে ওঠে।
কিন্তু এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা ছিল। মাহমুদ আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের আনন্দ আজ অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। আমরা প্রশান্তির আশা করেছিলাম। কোনো বড় হলে জমকালোভাবে উদযাপন করে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম, যা এখন বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।’
ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়ে বাস্তুচ্যুত দম্পতির বিয়ে উদযাপনে করে। ছবি : আলজাজিরা
অন্যদিকে শাইমা তাঁদের আনন্দকে ‘তিক্ত মিষ্টি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সুন্দর পোশাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু যুদ্ধের তাণ্ডব আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাদের বাড়ি, জিনিসপত্র—সব ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও আমরা হতাশাকে জয়ী হতে দিইনি। ধ্বংসের মধ্যেই আমরা উদযাপন করছি।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন