ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে, দেশটির সাবেক ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর বিচার বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই ঘোষণায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়েছে।
ট্রাম্প তার সবশেষ ‘ট্যারিফ লেটার’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে বলেন, ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ‘আক্রমণ’ চালাচ্ছে এবং বলসোনারোর বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে, তা ‘উইচ হান্ট’ বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, বর্তমান ব্রাজিল সরকারের ‘ভয়ানক অবিচার’ সংশোধনের জন্যই এই শুল্ক জরুরি। তিনি জানান, তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়কে ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্য চর্চার বিরুদ্ধে তদন্ত (সেকশন ৩০১) শুরুর নির্দেশ দেবেন। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, যার আওতায় অতীতে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে।
ট্রাম্পের ভাষায়, বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলমান বিচার ‘আন্তর্জাতিক লজ্জা’। তিনি আরও বলেন, আমি তাকে (বলসোনারোকে) অত্যন্ত সম্মান করি।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বলসোনারো ও ট্রাম্পের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অনেকেই বলসোনারোকে ‘ট্রপিকসের ট্রাম্প’ নামে ডাকেন।
এর জবাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, যদি ব্রাজিলের পণ্যে শুল্ক বাড়ানো হয়, তবে তার সরকারও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ?
ব্রাজিলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে লুলার নির্বাচনী জয়কে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, বলসোনারো সেই সহিংসতার পেছনে মদত দিয়েছেন। তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন এবং এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ট্রাম্প এই বিচারের সঙ্গে তার নিজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার তুলনা করে বলেন, এটি স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ। এগুলো আমি খুব ভালো করেই জানি!
সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্রিকস ইস্যু
চিঠিতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ব্রাজিল ‘মুক্ত মতপ্রকাশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর’ ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। তার নিজের কোম্পানি ‘ট্রাম্প মিডিয়া’ও ব্রাজিলের আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে লড়ছে।
সম্প্রতি ব্রাজিলের আদালত এক রায়ে বলেছে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকেও বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের জন্য দায়ী করা যাবে। ব্রাজিলের আদালত ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) সাময়িকভাবে বন্ধও করেছিল। সংস্থাটি কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে এ সিদ্ধান্ত নেন ব্রাজিলিয়ান আদালত।
এ ছাড়া রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনকেও ট্রাম্প ‘আমেরিকাবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন এবং এই জোটের দেশগুলোর পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দেন।
ব্রাজিলের জবাব
ট্রাম্পের এই মন্তব্য ও হুমকির জবাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, যদি ব্রাজিলের পণ্যে শুল্ক বাড়ানো হয়, তবে তার সরকারও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি (ট্রাম্প) বুঝে নিক—বিশ্ব বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট চাই না।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন