বিনয়ের ভূষণে মানবিক মহিমা 

gbn

আবার তুমি যা সঞ্চয় করছো, তা নিজে ভোগ করতে পারবে

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক। 

কিছুতেই অহংকার করো না— না চাকরিতে, না বেতনে। অনেক আয় করছো মানেই সবটাই তোমার যোগ্যতায়— ঘটনা কিন্তু মোটেও তা নয়। তুমি যা আয় করো, তার কতটুকু নিজের প্রয়োজন মেটাতে খরচ করো? পাঁচ ভাগের এক ভাগ?

 

আবার তুমি যা সঞ্চয় করছো, তা নিজে ভোগ করতে পারবে— এর কোনো গ্যারান্টি আছে? তোমার আয় দিয়ে আরও অনেক মানুষের প্রয়োজন মেটানো হয়। তুমি যা সঞ্চয় করছো, শেষ পর্যন্ত তা কে ভোগ করবে, সেটা তুমি জানো না। কাজেই যা তুমি উপার্জন করো, তা একমাত্র তোমার ‘রিজিক’— এ দাবি করার সুযোগও নেই।

 

এমনও তো হতে পারে, আরেকজনের রিজিক তোমার হাত দিয়েই আসছে। তার উসিলায় তুমি নিজেও পাচ্ছো। কাজেই, কোন যোগ্যতা বা দক্ষতা নিয়ে দম্ভ করবে? কোন জ্ঞান বা বুদ্ধি নিয়ে অহংকার করবে? কোন সাহসে বিনয়ের পরিবর্তে ঔদ্ধত্য দেখাবে?

 

তোমার চেয়ে অনেক মেধাবী মানুষ অকালে ঝরে গেছে। অনেক বলবান সকালে মারা গেছে। তুমি উচ্চশিক্ষিত—এ কথা ঠিক। কিন্তু তোমার সার্টিফিকেট চাকরি এনে দিয়েছে বলে নিজের শ্রেষ্ঠত্বে গর্ব করবে? তোমার চেয়ে যোগ্য অনেকেই এখনো বেকার, হতাশায় জর্জরিত—তাদের দেখো না?

 

মানুষ হিসেবে তোমার সৃষ্টি— অনুগ্রহ করে দানব হয়ে যেয়ো না।

 

যিনি মহাপরিকল্পনাবিদ, তাঁর অনুগ্রহে তুমি আছো। তাঁর নিয়ামত অস্বীকারের ধৃষ্টতা দেখিয়ো না। তোমার চেয়ে আরও গুণে গুণান্বিত মানুষ অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। তিনি কাউকে সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে কিছু না দিয়েও যাচাই করেন।

 

তুমি এখন কেবল জীবনের মধ্যভাগে। যে সুখ কিংবা দুঃখে আছো, তা স্থায়ী নয়। সামনে কী আছে, তা তুমি জানো না। কত নায়ক, রথী-মহারথী পৃথিবীর বুক থেকে ঝরে গেছে! শত বছর আগের বাহাদুরদের কেউ মনে রাখে না। যারা একসময় দুনিয়া শাসন করত, ইতিহাস তাদের নাম ভুলে গেছে। কেউ চিরকাল বাঁচে না, কেউ চিরদিন শাসনও করে না।

 

বিনয়কে ভূষণ করলে মানুষের হৃদয়ে জায়গা পাবে। তাবৎ পৃথিবীর মালিক হওয়া থেকে ভালো, যদি মানুষের ভালোবাসায় তাদের মনে থাকতে পারো। শরীরের সৌন্দর্য, বংশের খ্যাতি, অর্থ-সম্পদ— এসব যেন তোমাকে অমানুষ করে না ফেলে।

 

স্রষ্টা চান, তুমি অনেক কিছু পেয়েও মানুষ থেকো। যারা ভ্রষ্ট হয়, তাদের ওপর খোদার লানত নেমে আসে। কত মেধা নষ্ট হয়, কত সম্ভাবনা অপচয় হয়—এসব এমনি এমনি ঘটে না। দম্ভ দাম্ভিককে একদিন নিশ্চিহ্ন করে দেয়। মানুষ মনে রাখে ভালো আচরণ। নরম কথায় মানুষ মোহিত হয়।

 

যে অন্যকে সম্মান করে, স্রষ্টা তাকে সম্মানিত করেন। যে মানুষের উপকারে আসে, প্রভু তার পাশে থাকেন। বিদ্যা যেন অহংকারের কারণ না হয়। অনেকেই সামান্য বুদ্ধির অভাবে শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা হারিয়েছে।

 

মানুষকে ভালোবাসো। হাসিমুখে কথা বলো। সুন্দর আচরণ, মার্জিত ব্যবহার এবং উপকারী মনোভাব মানুষকে মহৎ করে তোলে। নসীবে যা আছে, তা একদিন ঠিকই আসবে। অযথা লোভ, প্রতারণা বা মানুষের ক্ষতি করে কিছু লাভ হয় না—বরং ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি।

 

অন্যের জন্য ষড়যন্ত্র করলে সেই জাল একদিন নিজের দিকেই ফিরে আসে। তখন নিজের খোঁড়া কূপেই নিজেকে নাজেহাল হতে হয়। যতটুকু সম্ভব, অন্যের উপকারে নিজেকে উৎসর্গ করো। স্বার্থপরতা থেকে বেরিয়ে আসো।

 

শুধু নিজের ভালো থাকা মানেই ভালো থাকা নয়। দান-সদকা ও আচরণের সৌন্দর্যে পৃথিবীকে সুন্দর করো। উগ্রতা ও অশ্লীলতা থেকে নতুন প্রজন্ম দূরে থাক—এই হোক আমাদের চাওয়া।

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন