বুদ্ধিমান জীব হিসেবে সত্যতা যাচাই করার সক্ষমতা থাকা উচিত
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
যে ধর্মীয় লেবাস পরিধান করে আবার দুর্নীতি-অন্যায়ও করে, সে মানুষকে বোকা বানানোর জন্যই ধর্মকে বেছে নিয়েছে। ধার্মিক সাজলে মানুষের সহানুভূতি পাওয়া সহজ হয়। যে নীতি-নৈতিকতার কথা বলে, আবার সুযোগ পেলে ভণ্ডামি-গুণ্ডামিতেও লিপ্ত হয়, সে আসলে মুখোশধারী স্বার্থপর শয়তান। প্রয়োজন মেটাতে এই লোকেরা পৃথিবীকে জাহান্নামে পরিণত করতেও দ্বিতীয়বার ভাবে না।
দাঁড়ি-টুপি পরে আবার অন্যের জমি দখল করে, হাত বাড়িয়ে ঘুষ নেয়, মানুষকে অসম্মান করে—এই তারাই মসজিদে প্রথম কাতারে দাঁড়ায় কিংবা মন্দিরের সেবায়েত সাজে। কপটতার কূটচালে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে, তারা নিজের প্রয়োজনে যে কোনো হীনকর্ম করতেও দ্বিধা করে না।
মানুষ চেনার দায়িত্ব আপনার। শিক্ষকদের মধ্যেও কিছু অশিক্ষক মানসিকতার ধান্ধাবাজ লুকিয়ে থাকে। শুধু লেবাস দেখে ভিক্ষা দিলে, ছলচাতুরী না বুঝে সাহায্য করলে, মিষ্টি কথায় ভুলে গিয়ে বিশ্বাস করলে আর পরে ঠকলেই, এর দায় আপনি অন্যের ওপর চাপাতে পারেন না। মানুষ ঠকাতে, ধোঁকা দিতে এবং নিজের স্বার্থ আদায়ে কত রকম কৌশল খাটায়—তা অনুধাবন করা জরুরি।
বুদ্ধিমান জীব হিসেবে সত্যতা যাচাই করার সক্ষমতা থাকা উচিত। আমরা নীতি-নৈতিকতার কথা শুনলেই মানুষকে ফেরেশতা ভাবতে শুরু করি, অথচ ভণ্ডদের প্রধান অস্ত্রই হচ্ছে সাধুত্বের ভান। মানুষ কেমন তা মুখে নয়, প্রমাণ হয় তার কর্মে। মুখ ও মুখোশের তফাৎ বোঝার জন্য বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়।
মানুষকে মূল্যায়নের একটি বড় ভুল পদ্ধতি আমরা লালন করি—একজন খারাপ মানে সবাই খারাপ, একজন ভালো মানে সবাই ভালো। এই মানদণ্ডে মানুষ প্রতারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জীবন ও বাস্তব জীবনের পার্থক্য বিস্তর। ভার্চুয়ালে যেকোনো কিছু বলা যায়, কিন্তু বাস্তবজীবনে প্রমাণ দিতে হয়। এখানেই ভণ্ডামি ধরা পড়ে, ধোঁকাবাজ চিহ্নিত হয়। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ভারসাম্য বাস্তবেই তৈরি হয়।
মানুষ ভার্চুয়াল জগতে বেশি ঠকে, কম জেতে। একটা মানুষ কেমন হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি তার সামনে কেমন—তার ওপর। আপনি বিশ্বাস রাখলে, ভালো আচরণ করলে এবং সত্য বললে—even ঠকলেও আপনি জিতে যান। কারণ দৈবিক পুরস্কার ও শাস্তির ধারণা চিরন্তন। কেউ কাউকে ঠকিয়ে সারাজীবন সুখে থাকবে—এমনটা হয় না। ঠক সবচেয়ে বেশি ঠকে।
মানুষ বাহ্যিক সাজসজ্জা ও কথাবার্তার চাকচিক্য দেখতে পায়, কিন্তু হৃদয়ের প্রশান্তি বা ক্ষত বোঝে না। শান্তি ও অশান্তি নির্ধারিত হয় কর্মফলে। যে ভালো কাজ করে, বিপদে পাশে থাকে, উপকৃত ব্যক্তি তা স্বীকার না করলেও প্রকৃতি তাকে বঞ্চিত করে না। ভালো মানুষের সম্মান ঈশ্বরীয় ব্যবস্থায় নিশ্চিত হয়।
যে মানুষকে ঠকায়, সে আসলে জেতে না। অভিশাপ ও দীর্ঘশ্বাস কাউকে শান্তি দেয় না। শত্রু চিহ্নিত না হলেও, ক্ষতি প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও বা পরাজয় ঠেকানো না গেলেও মানুষ হেরে যায় না। ব্যর্থতাই অনুপ্রেরণার উৎস। পতনই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা দেয়। শান্ত সমুদ্র কখনো দক্ষ নাবিক গড়ে না।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—ব্যর্থতাকে কখনো মেনে নেওয়া যাবে না। মানুষকে একবার চেনার পর তার সঙ্গে সেই অনুযায়ী আচরণ করতে হবে। দূরত্ব যদি কল্যাণকর হয়, তবে সম্পর্ক ছিন্ন করাই উত্তম। কৌশলে সুবিধা নেওয়াদের ফাঁদে যেন না পড়ি, সে বিষয়ে সদা সচেতন থাকতে হবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন