সম্মান যেখানে শ্বাস নেয়, সেখানেই বাঁচো

gbn

খেয়াল রাখবেন, আত্মসম্মান যেন অহংকারে পরিণত না হয়

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

যার সাথে কথা বলছেন, সে মোবাইল টিপছে, অন্যমনস্ক কিংবা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না—কথা থামিয়ে উঠে পড়ুন। যেখানে আপনার গুরুত্ব নেই, সেখানে এক মুহূর্তের অপচয় নয়। কেউ অবহেলা, অপমান করবে, তারপরেও সেখানে থাকতে হবে—দুনিয়াটা আপনার জন্য এতটা সংকীর্ণ হয়ে যায়নি। যেখানে সম্মান নেই, সেখানে যাবেন না। যে আপনার গুরুত্ব বোঝে না, তার সাথে মিশবেন না।

 

যেখানে আপনার উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে বিশেষ কিছু আসে-যায় না, সেখানে সময় না দিয়ে নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত হোন। নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে এমন এক উচ্চতায় উপনীত করুন, যাতে আপনার কথা শোনার জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। যে আসরে আপনার গুরুত্ব আছে, সে আসরে বসুন। তাদের সাথে মিশুন যারা আপনাকে সম্মান না করলেও অন্তত অসম্মান করে না। সেই আড্ডায় মাতুন, যেখানে আপনি তুচ্ছ নন।

 

আত্মসম্মান জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে খেয়াল রাখবেন, আত্মসম্মান যেন অহংকারে পরিণত না হয়। “আমি কিছু একটা”—এমন দম্ভে সাধারণের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করবেন না। অসাধারণ হওয়ার দরকার নেই, বরং সাধারণ থাকুন। তবে কারও অবজ্ঞায় আটকে থাকবেন না। অন্তত অবহেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।

 

যার-তার থেকে যখন-তখন অপমান জীবন থেকে অপসারণ করুন। বাঁচুন—সম্মানের সাথে। যারা বিশ্বাস নষ্ট করে, কথার পিঠে ব্যথা দেয় এবং ভর সমাজে অপমান করে—তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। যারা ইশারা-ইঙ্গিতে আপনাকে অপমানিত করে, পর ভাবে কিংবা মিশতে চায় না—তাদের চৌহদ্দিতেও পা ফেলবেন না। দুনিয়াটা বিশাল। লক্ষ দুয়ার আপনার পক্ষ নেওয়ার অপেক্ষায়। কোথাও জায়গা না পেলে নিজের জগতে বাঁচুন, তবুও অসম্মানের পথে হাঁটবেন না।

 

আত্মসমালোচনা করুন, তবে আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে নয়। প্রত্যেকের ভুল হয়। আত্মসমর্পণ মানে এই নয়—যে যা ইচ্ছা বলতে ও করতে পারবে। বিনীত থাকা ভালো, কিন্তু যারা বিনয়কে দুর্বলতা ভেবে পেয়ে বসে—তাদের শিক্ষা পাওয়াটাও জরুরি।

 

কারও উপকার করার সুযোগ পেলে আজকেই করুন, কেননা আগামীকাল এই সুযোগ নাও আসতে পারে। ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষায় কোনো কাজ করবেন না। তবে কারও জীবন রক্ষা পায়, ভয়ানক বিপদ থেকে বাঁচে—এমন যদি হয়, এজন্য যে কারও কাছে এক জীবনে দু-একবার ছোট হবেন। এতে আপনি বিশালতা পাবেন। অন্যের দোয়া যে মানুষকে কত বড় বানাতে পারে তা ভাবতেও পারছেন না!

 

কখনোই কাউকে অসম্মান করা, অবজ্ঞা ও অবহেলা করা—এই ভুল করবেন না। সম্মান দেওয়া এবং নেওয়ার জন্য একজন আছেন যিনি ন্যায্যতার প্রতীক।

 

পূর্ণাঙ্গ মানবজীবনের যাত্রায় আশেপাশের কেউ তুচ্ছ নয়। যার যতটুকু সম্মান, ততটুকু রক্ষার জন্য প্রয়োজনে সংগ্রাম করতে হবে, জীবন দিতেও হতে পারে। কথা ও আচরণ মানুষের মর্যাদা বাড়ায় বা কমায়। ভালো আচরণ মানবজীবনে আলো হয়ে ফেরত আসে। কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, অসম্মানের পরিকল্পনা করা মানে নিজের পতনের নিমিত্তে গর্ত খোঁড়া।

 

চিন্তাতেও অন্যের উপকার রাখবেন। কাজে শুভের বাস্তবায়ন ঘটাবেন। কারও অসম্মান করে কোনো আচরণ করবেন না—তাতে যদি কোথাও কোথাও নিজেকে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা লাগে, তবুও। অবস্থান তৈরি করুন, যাতে আপনার অনুপস্থিতিতে মানুষ আপনার শূন্যতা অনুভব করে। লোকেদের স্মৃতিতে আপনার জন্য সম্মান জমা করে যান। যদি চান তবে না থেকেও থাকতে পারেন!

 

উপকারের হাত প্রশস্ত রাখুন। দানে সম্পদ কমে না, বরং মান-সম্মান বাড়ায়। জীবনের বিরুদ্ধে যত পারেন, কম অভিমান করবেন।

 

অভিযোগ শান্তির হন্তারক। অল্পে সন্তুষ্ট জীবন সুখী। কিছু ত্রুটি এড়িয়ে যাবেন, কিছু কথা গোপন রাখবেন এবং অন্যের প্রশংসা জারি রাখবেন—দেখবেন, আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

 

অবস্থা তৈরি করে নিতে হয়। আপনার সরল চিন্তা, সাদামাটা জীবন এবং মানুষের মঙ্গলকামনা—আপনাকে লাখে একজন ‘এক’ হিসেবে তৈরি করবে। নিজেকে বিক্রি করে, বিবেককে বন্ধক দিয়ে কিংবা সত্যকে আড়াল করে অন্যায়ের পক্ষ নেবেন না। পরের হক ভক্ষণ করবেন না।

 

মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তার কাজ ও কথা থেকে যায়। পাছে যা থাকবে, তা যাতে অগ্রে দোয়া পাঠাতে পারে—সুযোগ রেখে যান। নিজেকে অমূল্য করুন, তবে ন্যায়ের মূল্য হারিয়ে নয়। সম্মানের সাথে থাকুন, সসম্মানে বাঁচুন। অসম্মানের চেয়ে অপমানের আর কিছুই নেই। আত্মসম্মান জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন