ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে নীতি পরিবর্তন করছে ইইউ?

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক//
এতোদিন ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধীতা করে আসছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু এবার ফ্রান্স ও ডেনমার্কে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। সোমবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্ক সমর্থন জানিয়েছেন ইইউ-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ইতোমধ্যে ফ্রান্স এককভাবে দুই ইরানি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা সমর্থনের মধ্য দিয়ে ইরানের বিষয়ে ইইউ নীতি পরিবর্তন করছেবলে মনে করছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে বক্তব্য দেন ডেনমার্ক ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তারা ইরানের হামলার ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দেন। তবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি বা বিস্তারিত আলোচনাও করা হয়নি। পাঁচজন কূটনীতিক রয়টার্সকে এই খবর নিশ্চিত করেছে।
ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ইরানকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে এতদিন বিভক্ত ছিল ইইউ। এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এ বিষয়ে এটাই দেশটির বিরুদ্ধে ইইউ-র প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
গত মে মাসে ইরানের সঙ্গে ৬ বিশ্ব শক্তির করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখনও চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে কাজ করছে ইইউ। তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনার পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে কম আগ্রহী। তবে ইরান সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইইউ যদি তাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুবিধার সুরক্ষা দিতে না পারে তাহলে তারা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাবে।
ফ্রান্স বলে আসছে, গত জুন মাসে প্যারিসের কাছে ইরান থেকে নির্বাসিত দেশটির সরকারবিরোধীদের একটি সমাবেশে বোমা হামলার ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। ফ্রান্সের দাবি, ওই হামলার পেছনে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় আছে। তারপরই ফ্রান্স দুই ইরানি নাগরিক ও ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই ব্যক্তিদের একজনকে বেলজিয়ামে আটক রাখা হয়েছে। অন্যজন হলেন, ইরানের উপমন্ত্রী ও গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক সাইয়্যেদ হাশেমি মোঘাদাম। ফ্রান্সে দৃশ্যত কোনও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা না হলেও একজন ইরানি কূটনীতিককে বহিষ্কারও করেছে ফ্রান্স। কূটনীতিকরা বলছেন, ফ্রান্স চায় এই নিষেধাজ্ঞা ইইউ-র পক্ষ থেকেও জারি করা হোক।
গত অক্টোবরে ডেনমার্ক দাবি করেছে, ইরানি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মাটিতে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার চেষ্টা করেছে। এই দেশটিও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইইউ-কে আহ্বান জানিয়েছে। যদিও ইরান এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় ইরান তাদের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করেছে। বিনিময়ে তাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে তাদের কর্মসূচি পরিচালনা করছিল। চুক্তির পর থেকে পক্ষগুলো ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়িয়েছে।
গত মার্চ মাসেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন ও সিরিয়া যুদ্ধে দেশটির ভূমিকার কারণে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব তুলেছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। তবে ইইউ-তে প্রস্তাবটিতে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যায়নি। নিষেধাজ্ঞায় অনাগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইতালি। তারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করে নতুন কোনও নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে।
ব্রাসেলসে সোমবারের বৈঠকে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে ইইউ-র আইনে বিশেষ উপায় খোঁজার বিষয়েও আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।