স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, সম্পদের লোভেই খুন!

gbn

মনির হোসেন (৪৫)। প্রায় ২৭ বছর সৌদি আরবে জীবনযাপন করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে কেরানীগঞ্জে দুটি বাড়ি, আবাসন ব্যবসা, দূরপাল্লার বাসের ব্যবসাসহ রয়েছে অনেক সহায়-সম্পত্তি। প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে এসেছিলেন দেশে। ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা করাতে এসে হোটেলের খাবার খেয়ে মৃত্যু হয় মনির হোসেনের। শুধু মনির নন, একই খাবার খেয়ে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী ছেলেও মারা গেছেন।

একই সঙ্গে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ‘রহস্যের’ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, হোটেল থেকে আনা খাবারে বিষক্রিয়া ছিল। খাবারে কে বিষ মিশিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। মনিরের সহায়-সম্পত্তি দখল নিতে কেউ এটা করেছে। যাতে সম্পত্তি দখলে নেওয়া সহজ হয়।

 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যুর হয়েছে। তবে খাবারে কে, কখন, কীভাবে এবং কেন বিষ মিশিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া মনিরের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওপর কার লোভ ছিল সেটিরও তদন্ত চলছে।

এরই মধ্যে পুলিশ রাজধানীর মগবাজার মোড়ে অবস্থিত ভর্তা-ভাত হোটেলের ম্যানেজার ও বাবুর্চিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত সন্দেহের তীর মনিরের চাচাতো চাচা রফিককে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য, মনিরের পরিবার তথ্য ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মৃত্যুর রহস্য নিয়ে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে।

এক. মনিরের চাচাতো চাচা রফিক বিকেলের খাবার এনেছিলেন। সেখানে কোনো ‘স্লো পয়জনিং’ ছিল কি না। কারণ কেরানীগঞ্জে মনিরের যে দুটি বাড়ি রয়েছে সেখানে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন রফিক। সম্পত্তির ওপর তার লোভ হতে পারে।

দুই. রাতে মনির নিজেই হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছিলেন। হোটেলের কেউ খাবারে বিষক্রিয়া মিশিয়েছিল কি না?

 

তিন. সন্ধ্যা থেকে খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্ত মনির হোটেলের বাইরে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করেন। তারা কোনোভাবে এ মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত কি না। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে মনিরের কোনো লেনদেন ছিল কি না। এসব প্রশ্নের উত্তর মিললে স্ত্রী-সন্তানসহ মনিরের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হবে।

থানা পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়গুলো সামনে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। মগবাজারে আবাসিক হোটেলে ওঠা, খাবার এনে খাওয়া এবং মনির কার কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাদের সবার বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। এরই মধ্যে সিসি ফুটেজ ও মনিরের মোবাইলের কললিস্ট পর্যালোচনা শুরু করেছে পুলিশ।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন স্ত্রী স্বপ্না ও প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম হোসেনকে (১৮) সঙ্গে নিয়ে ঢাকার আদ্ব-দীন হাসপাতালে আসেন। শনিবার (২৮ জুন) হাসপাতালে এলেও সিরিয়াল না পেয়ে ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে পারেননি। পরদিন চিকিৎসক দেখাতে রাতে ঢাকায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী রাতযাপনে মগবাজারের ‘সুইট স্লিপ’ আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। সেখানে রাতের খাবার খাওয়ার পরই বমি করতে থাকেন তারা। পরে তাদের আদ্ব-দীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার (২৯ জুন) সকালে স্বপ্না, এর কিছুক্ষণ পর ছেলে নাঈম ও দুপুরে মনির মারা যান।

 

এ বিষয়ে মনিরের চাচাতো ভাই জাকির জাগো নিউজকে জানান, ঈদুল আজহার আগে দেশে আসেন মনির হোসেন। আগামী ৫ জুলাই তার সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, সেই অনুযায়ী বিমানের টিকিটও কাটেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সৌদি যেতে পারলেন না। স্ত্রী-সন্তানসহ মরদেহ হয়ে ফিরতে হচ্ছে গ্রামে। মর্গ থেকে তিনজনের মরদেহ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। মনির ভাইয়ের আরও দুই ভাই বিদেশে থাকেন। তারা দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। তারা পৌঁছালে মরদেহ দাফন হবে।

মনিরের সম্পত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার এত সম্পত্তি ছিল আমরা কেউ জানতাম না। এমনকি মনিরের বৃদ্ধ মা-বাবাও জানতেন না। শুধু মনির, তার স্ত্রী এবং কেরানীগঞ্জে বাড়ির কেয়ারটেকার রফিক জানতো। এ তিনজন ছাড়া আর কেউ জানে না কোথায় কি সম্পত্তি আছে। ব্যবসা কিংবা কোথাও ইনভেস্ট করলে সে পরিবারের কারও সঙ্গে শেয়ার করতেন না।

মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন মনির জানতে চাইলে জাকির জানান, গ্রামে মানুষদের অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করতেন তিনি। প্রতি বছর দু-তিনবার করে দেশে আসতেন। দেশে না থাকলেও তার স্ত্রী গরিবদের সাহায্য করতেন।

 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ এরই মধ্যে রহস্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু করেছে। কেয়ারটেকার রফিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মনির বেশ কয়েকবার হোটেলের নিচে নেমে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের খোঁজ চলছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় মনির হোসেনের স্বজনরা এসে মামলা করবেন। তবে আমরা সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, মগবাজারে অবস্থিত ‘সুইট স্লিপ হোটেলে’ স্ত্রী-সন্তানসহ ওঠেন মনির হোসেন। পাশের ভর্তা-ভাত হোটেল থেকে খাবার পারসেল এনে রাত ১০টার দিকে খান তারা। খাবার খেয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত মোবাইলে কথাও বলেন। আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি আমরা। কখন হোটেলে ঢুকলো, কখন খাবার এনেছিল এসব বিষয় বিশ্লেষণ চলছে। অনেকগুলো বিষয় আমাদের সন্দেহ মনে হয়েছে।

 

তিনি বলেন, খাবার হোটেলের ম্যানেজার ও বাবুর্চি এবং কেয়ারটেকার রফিকের মেয়ে ও মেয়ে জামাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন আমাদের কাছে শুধু রফিক আছে, তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কেরানীগঞ্জে দুটি বাড়ি করেছেন নিহত সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন।

 

 

 

এছাড়া দূরপাল্লার বাসের ব্যবসাও আছে। কোনো সম্পদ-সম্পত্তি, ব্যবসায়িক অথবা টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিল কি না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন