মৌলভীবাজার প্রতিনিধি \ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার মনু ও ধলাই নদীর ১৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি প্রবেশ করে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। উজানের ভারত অংশে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার ৪টি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে করে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। হঠাৎ করে নদীর দুইপাড় উপচিয়ে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় অনেকেই আটকা পরেন বাড়ি-ঘরে। অনেকেই বাড়ি-ঘরের মূল্যবান জিনিস রেখে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ত্রাণ নিয়ে গেলেও পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় ভেতরে ত্রাণ নিয়ে যেতে পারছেননা। বন্যা দূর্গত এলাকায় খাদ্যসংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বানবাসিরা উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বানের পানিতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে এমন খবরে জেলার রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মেদেনীমহল গ্রামের শৌখিন মাছ শিকারি সোনাহর মিয়া তার ছেলে হৃদয়কে নিয়ে একই উপজেলার বন্যাকবলিত রাজনগর সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান নামক স্থানে মাছ ধরতে আসেন। পরে ওই স্থানে মাছ ধরা শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত অবস্থান করেন । পরে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাজনগর ফায়ার সার্ভসের ষ্টেশন অফিসার মোঃ আলী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মনু নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের দুটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পানি কিছুটা কমলে সড়ক দিয়ে আবার যান চলাচল খুলে দেওয়া হয়েছে। মনু নদের পানি কমায় মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক দিয়েও সিলেটে যাতায়াত আবার চালু হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.শফিকুর রহমান আজ শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার ৩টি উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় ১৫ শত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। এই প্রতিবেশীদের নিয়েই আমাদের চলতে হবে। অনেক কিছু বদলাতে পারলেও প্রতিবেশী বদলানো যায়না। ভারতকে এবারকার মতো বলে দেব, তারা ভবিষ্যতে আর করবেনা। করলে এদেশের জনগনকে নিয়ে প্রতিবাদ করবো। তিনি সাংবাদিকদের আরও এক পশ্নের জবাবে বলেন, এই মুহুর্থে আমাদের রাজনীতি নির্বাচনে না। এখন বিপন্ন মানুষের পাশে দাাঁড়ানো ও শহীদ পরিবারে পাশে দাড়াঁনো। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দূর্ভোগে যারা আছেন তাদের অংশীদার হওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মৌলভীবাজার জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী সহ অন্যন্যরা। মৌলভীবাজার জেলার বন্যা দূর্গত এলাকায় অসহায় মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য দলের সকল স্থরের নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। তিনি দেশ-বিদেশে সকল সামর্থ্যবান দলীয় নেতা কর্মী, সমর্থক ও বিত্তশালীদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষদের সাহায্য এগিয়ে আসার আহব্বান জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় আজ বিকাল ৩ টায়, মনু নদীর পানি শহরের কাছে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার, জুড়ী নদীর পানি ১৮২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ২২৮ সেন্টিমিটার নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন