লালবাগে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায় ও দোয়া চাইলেন এলাকাবাসী

সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা |

সারাদেশে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। বৃষ্টির আশায় আকাশপানে তাকিয়ে আছে মানুষ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য রোদ, বৃষ্টির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু অনেক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও। অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষ, পশুপাখি, বৃক্ষ ও তরুলতা— সব কিছুই হাঁপিয়ে উঠেছে। এক চিলতে বৃষ্টির জন্য সর্বত্রই তীব্র হাহাকার বিরাজ করছে। খরতাপে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ খাল ও পুকুরের পানি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই এখন তীব্র গরম। আকাশে মেঘ নেই, পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে। এতে আরও বাড়ছে গরমের তীব্রতা। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তারা পড়ছেন বেশ অস্বস্তিতে। রোদ ও গরমের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে মানুষের বিভিন্ন রোগ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি। এমন অবস্থায় বৃষ্টি কামনায় জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশের আয়োজনে মুসল্লিদের নিয়ে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মুফতী মুহিববুল্লাহ (দাঃবাঃ)। 

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর লালবাগ শহীদ হাজী আব্দুল আলিম মাঠে সকাল সাড়ে ১০ টায় সালাতুল ইস্তিসকার সালাত আদায় করার সার্বিক ব্যবস্থাপনা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ হাসিবুর রহমান মানিক।

মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন। এতে ইমামতি করেন জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মুফতী মুহিববুল্লাহ (দাঃবাঃ)। পরে আরবিতে তিনি খুতবা দেন। যেখানে তীব্র গরমের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা করেন। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা নামাজে অংশ নেন। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তিসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়। 

নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি এবং গরম থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে মুসল্লিরা অঝোরে চোখের পানি ছেড়ে দেন এবং তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং দেশের সকল ইমাম-খতিব ও দায়িত্বশীলদের প্রতি সালাতুল ইস্তিসকার সুন্নাহ জিন্দা করার বিনীত আহ্বান জানান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, 'প্রচণ্ড গরমের ফলে মানুষ একস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, কোনো ধরনের কাজ করতে পারছে না। আমি কয়েকদিন ধরেই চিন্তা করছিলাম কি করা যায়। এরপর আমি ইমাম সাহেবদের সঙ্গে আলোচনা করি। এর আগেও এ অঞ্চলে বৃষ্টির আশায় নামাজ আদায় হয়েছিল। এর ফলে বৃষ্টি হয়। তখন আমি ইমাম সাহেবদের বলি যে, আপনেরা যদি বলেন, তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে পারি। তখন ইমাম সাহেবরা সম্মতি দেন এবং  খুশি হয়ে আজকে ইস্তিসকা তথা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায় করার কথা বলেন। এরপর আমরা মাইকিং করে পুরো এলাকায় জানিয়ে দিই এবং এলাকাবাসীকে নিয়ে এই সালাত আদায়ের আয়োজন করি। আশা করি খুব দ্রুতই আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। '

হাফেজ হারুন অর রশিদ (সিআইপি) জিবি নিউজ টুয়েন্টি ফোরকে জানান, 'আমরা পাপী, গুনাহগার তবুও আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাইলাম। এই গরমে মানুষ যেভাবে কষ্ট করছে সে কষ্ট থেকে সবাই যেন মুক্তি পেতে পারে। এর আগে ১৯৮০ সালে লালবাগ কেল্লার মাঠে হাফেজ্জি হুজুর (রহঃ) এই একই রকম বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করেছিলেন। সে সময় নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টির দেখা পেয়েছিল এই এলাকার মুসল্লিরা। আমরা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরি।  আমরা আশা করছি, আজকেও আমরা সেই রকম বৃষ্টির দেখা পাব ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি প্রার্থনা করেছি। আমাদের বিশ্বাস আমাদের ডাকে আল্লাহ তায়ালা সাড়া দেবেন এবং আমাদের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।''

এদিকে, দেশজুড়ে চলমান তাপমাত্রার পারদে খুব একটা হেরফের না হওয়ায় এখনো অস্বস্তি কমেনি। মাথার ওপর গনগনে সূর্যকে সঙ্গী করেই প্রচণ্ড দাবদাহে নাকাল পরিস্থিতি পার করছে মানুষ। যদিও কয়েকদিনের তুলনায় কিছুটা বাতাসের উপস্থিতি বেড়েছে। 

আপাতত বড় পরিসরে বৃষ্টি হয়ে তাপপ্রবাহ দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগে জারি করা তিন দিনের হিট অ্যালার্ট আজ শেষ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে আরও তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারির সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন