শ্রীমঙ্গলের সাত রঙের চা এলো কীভাবে?

চা বাগানে সমৃদ্ধ পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গল। সবকটি ঋতুতেই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। এসব ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা সারাদিন পথে-প্রান্তরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে খুঁজে ফেরেন এককাপ চা। তাদের এই চায়ের তৃষ্ণা মেটায় সাত রঙের চা। বাহারি রঙের এই চায়ে রয়েছে অদ্ভূত এক মায়াময় মাদকতা। চায়ের কাপের চুমুকেই যেন পাওয়া যায় এই অঞ্চলের ঐতিহ্য।

 

 

 

শ্রীমঙ্গল বিজিপি ব্যাটালিয়ান ক্যান্টিনের পাশে অর্থাৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোডে নীলকণ্ঠ আর আদি নীলকণ্ঠ নামে রয়েছে দুটি চায়ের কেবিন। সাজানো গোছানো প্রশস্ত জায়গা জুড়ে সারিবদ্ধ চেয়ার আর জৌলুস ছড়ানো সামিয়ানা। যা দেখে সবারই মন ভরে যাবে।

রমেশ রামগৌড় নামে এক ব্যক্তি এই কেবিন দুটির মালিক। তিনিই সাত রঙের চায়ের আবিষ্কার করে বদলে দিয়েছেন চায়ের ইতিহাস আর ঐতিহ্য।

 

 

অনেকেই মনে করেন রমেশ চা জনগোষ্ঠীর মানুষ। মূলত তিনি বাঙালি, হিন্দু পরিবারের সন্তান। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় তার বাড়ি। কাজের সন্ধানে এখন থেকে দুই দশক আগে চলে আসেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। এরপর থেকেই বিভিন্ন পেশা বদলে একসময় একটি চায়ের স্টল খোলে বসেন।

 

 

২০০২ সালের দিকের কথা। তখন তিনি এক গ্লাসে দুই রঙের চা বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। তারপর একেএকে বিভিন্ন স্তর বা চায়ের লেয়ার তৈরি করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন। ক্রমেই বাড়তে থাকে তার চায়ের সুনাম। সংসারেও ফিরে আসে স্বচ্ছলতা।

 

গ্লাসভরা বিশেষায়িত এই সাত রঙের চা অনেকটা রংধনুর মতো দেখতে। স্তরে স্তরে তাক লাগানো বাহারি রঙের পাশাপাশি, স্বাদেও রয়েছে অনেক বৈচিত্র। দ্বিতীয় স্তরটি লেবুর সুঘ্রানযুক্ত আর তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরে ঘনদুধের সাথে কালো চায়ের রঙ, ক্রমশ সাদা হয়ে ওঠে। নানা স্বাদের এই সাত রঙের চা একটি অনন্য পানীয়।

 

 

তবে গেল কয়েক বছর ধরে দশ লেয়ারের চাও তৈরি করে আসছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার কেবিনে রয়েছে অন্তত ১৯ পদের বাহারি চা। একেকটি, একেক নামে পরিচিত।

 

 

গন্ধে ভরা এ চায়ের স্বাদ নিতে সন্ধ্যা থেকেই তার জমজমাট হয়ে ওঠে কেবিনের আড্ডা। বৈচিত্রময় স্বাদে মুগ্ধ হন সবাই। প্রতিদিন কম করে হলেও কয়েক হাজার গ্লাস চা বিক্রি হয়। প্রতি গ্লাস চায়ের দাম সর্বনিম্ন দশ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পঁচাশি টাকা পর্যন্ত।


 
সাত রঙের চায়ের আবিষ্কারক রমেশ রামগৌড় বলেন, আমার উদ্ভাবিত এই সাত লেয়ারের চা তৈরি করে অনেকেই নিজ নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। এমন হতে থাকলে চায়ের এই ঐতিহ্য ধরে রাখা যাবে না, মৌলভীবাজারের চায়ের নিজস্বতা থাকবে না।  

 

 

ভেজাল রোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন