ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সব ধরনের সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধ, গত কয়েক বছরে দেশজুড়ে সংঘটিত সা¤প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার পথ সুগম করার দাবীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
রোববার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমানের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর এ স্মারকলিপি জমা দেন। এসময় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গাইবান্ধা জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি দেবাশীষ দাশ দেবুসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয়, গত কয়েক বছরে দেশে শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যার যতো ঘটনা ঘটেছে, অবিলম্বে তার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে তার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত, এসব ঘটনার পেছনের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, উস্কানিদাতা এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।এছাড়া, ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উষ্কানিমূলক বক্তব্য বা আলোচনা নজরদারিতে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
একইসাথে ভবিষ্যতে যাতে কেউ এধরনের ঘটনা না ঘটাতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননার নাম করে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এপর্যন্ত যতোগুলো শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন, নিপীড়ন বা সা¤প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রেই পুলিশ ও প্রশাসনের অবহেলা এবং সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের যুক্ত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তাই ভবিষ্যতে দেশের কোথাও কোনো সা¤প্রদায়িক হামলা ঘটলে সেটি প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায়ে সেখানকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে দাবী জানানো হয়, যেকোন সা¤প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, তা কোনোভাবেই সরকারি কোষাগার থেকে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেয়া যাবে না। বরং যারা হামলা করেছে তাদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
স্বাধীনতার অন্যতম মৌল চেতনা ছিল সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে একটি অসা¤প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত সমাজ গঠন করা উলেখ করে বলা হয়, এ কাজে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার আবহমান বাংলার চিরায়ত লোকসংস্কৃতি।
জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বাউল, মুর্শিদী, মারফতিসহ মাটির সুরের লোক গান বা যাত্রাপালার মতো সুস্থ ধারার সংস্কৃতি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় তা চর্চ্চার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসম্পন্ন সাংস্কৃতিক বলয়, কেন্দ্র ও মুক্তমঞ্চ গড়ে তোলার দাবি জানায় প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
এছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত অসা¤প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় ক্রিয়াশীল সংগঠনসমূহকে মুক্তভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাই, দেশের জনগণের মানবিক সমৃদ্ধি ঘটাতে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জাতীয় বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার দাবী জানানো হয়।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন