মোস্তফা কামাল মিলন,লন্ডন।
সদ্য সচিব পদমর্যাদায় (গ্রেড-১) অবসরে যাওয়া বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সিনিয়র ডেপুটি কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল ড. শ্যামল চৌধুরী, বিশ্বনন্দিত নেতা, বাঙ্গালীর নয়নমনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১২টি গানের সংযোজনে অডিও সিডি অ্যালবাম চিরভাস্বর মুজিব প্রকাশের কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অতিসত্বর এ অ্যালবামটি প্রকাশ পাবে। তার কথা, সুর ও সংগীতে অ্যালবামটিতে দেশ, বিদেশের বিভিন্ন শিল্পী গান গেয়েছেন।
অ্যালবামটিতে যাদের গাওয়া গান থাকছে, তারা হচ্ছেন, মো. রফিকুল আলম, ফাহমিদা নবী, সাজেদ আকবর, প্রদীপ সরকার, ড. শ্যামল চৌধুরী, কলকাতার শুভমিতা, লন্ডনের শিল্পী লুসি রহমান ও মোস্তফা কামাল মিলন এবং কানাডা প্রবাসী শিল্পী তপন চৌধুরী।
গত ৩১শে মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যালবামটির বিস্তারিত তুলে ধরেন ড. শ্যামল চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মো. রফিকুল আলম ও প্রদীপ সরকার।
ড. শ্যামল চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রত্যয়ের ব্যানারে এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবন, কর্ম, আদর্শ ও তাঁর সুদীর্ঘ আপোষহীন সংগ্রামের ধারাবাহিকতা, গুরুত্ব, তাৎপর্য, যথার্থতা, সাফল্য, সার্থকতা এবং সারাবাংলা ও বিশ্বে এর প্রভাবকে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বাংলাভাষী নতুন প্রজন্মের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা আর তাদের অন্তরে গ্রোথিত করা।
এই গানমালার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এগুলোর বেশীরভাগ মুজিব শতবর্ষশীর্ষক গান। সেই সাথে আছে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং দৃষ্টিনন্দন, অবিশ্বাস্য অথচ বহুল কাঙ্খিত ও তাৎপর্যপূর্ণ অনবদ্য অগ্রগতি নিয়ে বাস্তবধর্মী কিছু গান।
এই উদ্যোগ শুধুমাত্র মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান উন্নয়নকে কথা ও সুরের সমন্বয়ের মাধ্যমে সব বাঙ্গালীর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া ও তাদের অন্তরে ও মননে চিরজাগরুক রাখার একান্ত আন্তরিক প্রয়াসমাত্র।
যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সাবেক মিনিস্টার পলিটিক্যাল শ্যামল চৌধুরী জানান, ব্যাক্তিগত একান্ত বাসনা থেকে প্রাথমিকভাবে নিজের পেনশনের টাকার উপর অনেকটা নির্ভর করে ২০২০ সালে এই অ্যালবামটির কাজ শুরু করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক জনাব মোঃ রফিকুল আলম বলেন যে, বর্তমানে আমাদের সঙ্গীতের ক্ষেত্রে দুঃসময় যাচ্ছে। একাডেমিক ভাবে সাউন্ড গীতিকারের অভাব বেশ অনুভূত হচ্ছে। এদিক থেকে ডক্টর শ্যামল চৌধুরীর গান সে অভাব কিছুটা হলেও পূর্ণ করবে। এই মিউজিক অ্যালবামের সবগুলো গান শুনে আমার তাই মনে হয়েছে। অথচ তিনি ডেভেলপমেন্ট ও পলিসির উপর একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
নতুন শিল্পীদের অনেকেই মেধাবী এবং তারা খুব ভালো গান গায়। মৌলিক বাংলা গানের চর্চায় টিভি চ্যানেলগুলোর আরও আনুকূল্য এবং সঙ্গীতানুরাগী স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ী মহল থেকে আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এরা সঙ্গীতাঙ্গনে বিরাজমান সুস্থ-সঙ্গীতের শূন্যতা পূরণে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবে।
আমাদের দেশের সংস্কৃতি চর্চার সবচেয়ে বড় ঢাল বা সুরক্ষা বা ট্রামকার্ড হলো আমাদের লোকজ সঙ্গীত ও লোকজ সাহিত্য। যার মাধ্যমে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে যে কোন আগ্রাসী অনুপ্রবেশ বা প্রভাব অতীতেও ঠেকানো গেছে, আগামীতে তা সম্ভব হবে।
গান লিখা ও সুর করার ক্ষেত্রে তথ্য ও বিনোদনের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়। এটি ডক্টর শ্যামল চৌধুরীর আজকের আলোচ্য অ্যালবামের সবকটি গানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইতিপূর্বের শ্যামলের যে কয়েকটি এলবামে তার সুর ও কথায় গান গেয়েছি সেগুলোতেও তা সমভাবে পরিলক্ষিত হয়েছিল।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ঢাকার অত্যন্ত দক্ষ বাদ্যযন্ত্রীদের অংশগ্রহনে, দেশী বাদ্য-যন্ত্রের প্রাধান্য দিয়ে অন্যান্য যন্ত্রের যথাযথ প্রয়োগে স্বয়ং শ্যামল চৌধুরীর আয়োজন ও পরিচালনায় শ্রুতিমধুর মিউজিক ট্র্যাকগুলো অপূর্বভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যয় ২০০৯ সাল থেকে মৌলিক গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা ১১টি অ্যালবাম বের করেছে। ”চিরভাস্বর মুজিব” হতে যাচ্ছে প্রত্যয়ের দ্বাদশ অ্যালবাম।
২০১১ সাল শ্যামল চৌধুরী নিজের লেখা ও সুরে এবং স্বীয় পরিচালনা ও প্রয়োজনায়, একান্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন, তাঁর কর্ম ও আদর্শ ভিত্তিক ১১টি গানের অডিও অ্যালবাম (সিডি) “ধ্রুবতারা তুমি দেখাও নিশানা” প্রকাশিত হয়। এতে কন্ঠ দিয়েছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী প্রয়াত সুবীর নন্দী, বিশিষ্ট শিল্পী প্রয়াত শাম্মী আগতার, প্রখ্যাত শিল্পী মোঃ রফিকুল আলম, সাদী মহম্মদ, সুজিত মোস্তফা, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, মঞ্জু সাহা, প্রদীপ সরকার ও অন্যান্য শিল্পীবৃন্দ। এর সবগুলো গান বিটিভিতে বহুবার প্রচারিত হয়ে এসেছে। এ অ্যালবামের একটি গান ভারতের অহমিয়ায় ভাষান্তরিত করে ভারতের বিশিষ্ট শিল্পী কতৃক গীত হয়েছে এবং গানটাকে নৃত্য-সঙ্গীতে রূপান্তরিত করে আগরতলার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে।
এছাড়াও, ড. শ্যামল চৌধুরীর কথা ও সুরে আরো বেশ কয়েকটি বিষয় ভিত্তিক মৌলিক গানের এলবামে দেশের বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ কন্ঠ দিয়েছেন, যার মধ্যে লালন গীতির বিশিষ্ট শিল্পী ফরিদা পারভীন, কিংবদন্তি লোকসংগীত শিল্পী প্রয়াত ইন্দ্রনোহন রাজবংশী ও রথীন্দ্রনাথ রায় এবং সুবীর নন্দীর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই মহতি উদ্যোগে তিনি সবার সমর্থন, সহযোগিতা ও শুভেচ্ছা কামনা করেন। ইতোমধ্যে এ ক্ষেত্রে যাঁরা তাকে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন , তাঁদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন