বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ ইউকে'র সংবাদ সম্মেলন : মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে গুরুত্বপুর্ণ সুপারিশমালা উপস্থাপন

gbn

জিবি নিউজ ডেস্ক, ১৩ নভেম্বর ২০২৫||

 বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ ইউকে'র উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকার ও ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি জনগুরুত্বপুর্ণ কিছু দাবী তুলে ধরা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল রোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে এই সংসাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । লিখিত বক্তব্যে দাবীগুলো উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভপতি মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন । শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাফওয়ান আহমেদ হিমেল । এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার কাজী আনোয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ একেএম কামরুল হাসান চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিদারুল আলম মজুমদার  ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আল আমিন মিয়া।

  লিখিত বক্তব্যে জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । এই সংগঠনের মুল লক্ষ্য বাংলাদেশে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতরণে কাজ করা।  বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও ফ্রান্সে আমাদের তিনটি শাখা আছে। আমাদের মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয় যুক্তরাজ্যে। এটি সম্পুর্ণ অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন । বাংলাদেশের মানুষ আজ কিছু মুষ্টিমেয় লুটেরার কাছে জিম্মী । বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকার ও আগামী সরকারের কাছে আমাদের কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে মানুষের মৌলিক অধিকার কিছুটাও হলে বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার হিসেবে শিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে ব্যবসায়ীকভাবে গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ সহ সামষ্টিক গুণগত মান যাচাই করতে হবে । শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে সর্ম্পূণ ব্যবসায়িকভাবে পণ্যের মতো ছেড়ে দেয়া যায় না । আমরা  শিক্ষাখাতকে ভালোভাবে যাচাই বাচাই করে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের কাছে দাবী জানাই। তিনি বিগত বছরগুলোতে শিক্ষা প্রশাসনে দলঘেঁষা যোগ্যতাবিহীন নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে বলেন,  বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে দেখা যায়, কমপক্ষে ৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষপদে (ভিসি/প্রো-ভিসি/ট্রেজারার) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগ করা হয়েছে । সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে ২০২০ সালের পর নিযুক্ত ভিসিদের প্রায় ৬০শতাংশই কোনোনা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। ভালোভাবে খোজ নিলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শীর্ষ প্রশাসনিক পদে অন্তত ৫০ থেকে ৭০টি নিয়োগ রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রভাবে হয়েছে । পাশাপাশি, টিআইবির গবেষণায় ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা স্বজনপ্রীতি ধরা পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতার তোয়াক্কা না করে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকিং খাত প্রঙ্গগে জনাব মামুন বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে ব্যাংকিং খাত । বিগত সরকারের সময়ে নামে বেনামে লোন দেয়ার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে, যার কারনে ৮/৯টি ব্যাংক গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা দিতে পারছেনা । যারা এই ব্যাংকিং দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদেরকে সম্পূর্ণ বিচারের আওতায় এনে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ব্যাংকিং খাতের এই সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিং খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে দৈনিক কালের কন্ঠ শিরোনাম করেছিলো, ঋণের নামে ব্যাংক থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে গত ১৫ বছরে ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবং এই টাকা বিভিন্ন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী ও গোটী কয়েক পরিবার আত্মসাৎ করেছে। তিনি বলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হিসেবে এদেশের যাকাত ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালনা করতে হবে । সরকার যদি ইমামদের বেতন রাষ্ট্রিয়ভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করে তাহলে ইমামসমাজ তাদের মেধা যোগ্যতা দিয়ে সমাজকে পরিবর্তন করতে পারবেন। একজন যোগ্য ইমাম চাইলে খুব কম সময়ের একটি এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। তাই সরকারের উচিত ইমামদের দায়িত্ব গ্রহন করা। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, কাতারে সরকারিভাবে নিযুক্ত ইমামদের বেতন ৪,৮০০ কাতারি রিয়াল এবং মুয়াজ্জিনের বেতন প্রায় ৩,৮০০ রিয়াল। তাদের সুযোগ সুবিধার মধ্যে বয়েছে সরকারিভাবে বিনামূল্যে বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ, এবং সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা। এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে বার্ষিক ৪০ দিনের ছুটিকালিন বেতন এবং ১০ বছরের জন্য পেনশন সুবিধা থাকে। চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগীদের রোগ নির্ণয়ের নামে কিছু কিছু চিকিৎসকের অহেতুক টেস্ট ও কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে । মানুষ আজ এক শ্রেণীর চিকিৎসকদের কাছে জিম্মি । মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে এ খাতকে প্রধান্য দিয়ে রোগীদেরকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে । প্রয়োজনে এ ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের আইডিয়া কাজে লাগানো যেতে পারে । পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো ফার্মেসীগুলোতে ওষুধ বিক্রি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে । যাতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসীগুলো ওষুধ বিক্রি করতে না পরে।   তিনি চিকিৎসকরা চিকিৎসার নামে রোগীদের কীভাবে জিম্মী করে অর্থ আদায় করেন তার একটি চিত্র তুলে ধরেন।  দৈনিক প্রথম আলো'র ১৫ মার্চ ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের একটি অংশ তিনি উল্লেখ করেন। "ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২০২৩ সালে হৃদরোগ আক্রান্ত এক রোগীর করুণ মৃত্যু ঘটে । তাকে জরুরি চিকিৎসার পরিবর্তে ১২টি অপ্রয়োজীয় ল্যাব টেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয় । টেস্ট রিপোর্ট আসতে তিনদিন সময় লাগায় রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মৃত্যু হয়।  

বিচার ব্যবস্থার সংস্কার প্রসংগে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক আদালত মিথ্যা মামলায় সয়লাব। বিগত ১৬/১৭ বছর ধরে মিথ্যা মামলার এক বিশাল বিচারের ব্যবস্থা বহন করেছে কিছু নিরীহ সহজ সরল মানুষ । বাংলাদেশ সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত আহবান, যদি কেউ মিথ্যা মামলা করে তাহলে তা প্রমাণীত হওয়ার পর প্রতিপক্ষের সকল খরচ তাকে বহন করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে তার অন্যান্য শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রসংগে জনাব মামুন বলেন, ৫ আগষ্টের বিজয়ের পর অন্তবর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে থাকি । কিন্তু আস্তে আস্তে সেই স্বপ্ন  দুঃস্বপ্নে পরিনত হচ্ছে । রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রত্যেক দলীয় কর্মীদের দেশপ্রেম থাকা অবশ্যক । দলগুলো তাদের কর্মী যখন অন্যায় করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে কিন্তু যে অন্যায়ের মূল হোতা তাকে আইনের আওতায় আনা হয়না । মূলহোতাদের যতদিন আইনের আওতায় আনা না হবে, ততদিনই অন্যায় কমবে না । সেজন্য প্রত্যেক দলের প্রধানের কাছে অনুরোধ, কোনো কর্মী কোনো অন্যায় করলে তার মূল হুকুমদাতাকে বহিষ্কার সহ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসরত পথশিশুদের প্রসংগে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখের বেশি শিশু গৃহহীন, যারা রাস্তায় বসবাস করেন । দারিদ্র্য, নগরমুখী অভিবাসন, পারিবারিক ভাঙন ও দুর্যোগজনিত বাস্তুচ্যুতি প্রধান কারণ। বিদ্যমান সহায়তা– ব্যবস্থা চাহিদার তুলনায় সীমিত । তাদের আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনেক দুর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী, এমপি সরকারের খাস ভুমি, খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয় অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন । খাল কিংবা নদীর পারে এসব পথশিশুর জন্য ছোট ছোট ঘর, কিংবা কলোনি তৈরি করে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। তারাও এই রাষ্ট্রের নাগরিক। এটা তাদের নাগরিক অধিকার । নতুবা তারা এভাবে রাস্তাঘাটে জীবনযাপন করবে এবং সন্ত্রাসীরা তাদের কাজে ব্যবহার করবে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন