ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা, আপত্তি মানবাধিকারকর্মীদের

gbn

মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদদের আপত্তি সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে দেশটির ‘জাতীয় বীরের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সোমবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে এই খেতাব দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব কর্তৃক পঠিত এক ডিক্রিতে, দেশের জাতীয় বীরদের তালিকায় যুক্ত হওয়া ১০ জনের মধ্যে সুহার্তোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুহার্তোর সাবেক জামাতা ও প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো জাতীয় বীর দিবসের এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

 

সুহার্তো ১৯৯৮ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন। সেই আন্দোলন তিন দশক শাসনকাল শেষ করেছিল, যা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ছাপিয়ে ছিল।

যখন প্রাবোও সুহার্তোর মেয়ে ও ছেলেকে পুরস্কার তুলে দেন। তখন অনুষ্ঠানে সুহার্তোকে স্মরণ করে বলা হয়, ‘সেন্ট্রাল জাভা প্রদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, স্বাধীনতাসংগ্রামের নায়ক, জেনারেল সুহার্তো স্বাধীনতার যুগ থেকে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

 

১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডস এবং জাপানের কাছ থেকে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইন্দোনেশিয়া শাসন করা সুহার্তো ১৯৯৮ সালে অর্থনৈতিক সংকটের সময় গণবিক্ষোভ এবং মারাত্মক দাঙ্গার মুখে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ২০০৬ সালে ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

ইন্দোনেশীয় নাগরিক, যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, প্রতিবছর তাদের জাতীয় বীরের খেতাব দেওয়া হয়।

সোমবার সুহার্তো এই খেতাবপ্রাপ্ত ১০ জনের একজন হন। সেনা অফিসার সুহার্তো আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট হন। তখন তিনি দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতা নেতা সুকর্নোর কাছ থেকে ইন্দোনেশিয়ার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।

 

তিনি তিন দশক দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশিয়াকে পরিচালনা করেছিলেন। তবে ১৯৯৭-৯৮ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকটের সময় দেশ যখন অরাজকতার মধ্যে পতিত হয়, তখন তার অনেক কাজ বৃথা হয়ে যায়।

 

গত সপ্তাহে জাকার্তায় অনেকে মানুষ সুহার্তোকে জাতীয় বীরের খেতাব দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একত্রিত হন, যা দেশে ইতিহাস পুনর্লিখনের ব্যাপক উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে। এদের মধ্যে ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী তাদিয়ুস প্রিয়ো উতোমো। যিনি গত ১৯ বছর ধরে পূর্ব তিমুরে বসবাস করছেন। ১৯৯৮ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুহার্তোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা লাখো ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।

উতোমো রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের অতীত সংগ্রাম উপেক্ষা করা হবে… আমরা দেশের প্রতারক কারণ, আমরা সুহার্তোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আর এখন তিনি বীর হিসেবে বিবেচিত।’

সুহার্তোর শাসনের সময় ইন্দোনেশিয়া ১৯৭৫ সালে পর্তুগিজ শাসনের শেষে পূর্ব তিমুরে আক্রমণ করে এবং পরে সেই অঞ্চল দখল করে রাখে। সেখানে সামরিক উপস্থিতি সম্ভব হতো না। সুহার্তোর পদত্যাগের পরই পূর্ব তিমুর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সুহার্তো সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিক জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার ও বিরোধ দমন করতেন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও আনা হয়েছে।

যদিও কোনো মামলা প্রমাণিত হয়নি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তিনি কখনো বিচার কার্যক্রমে অংশ নেননি। উতোমো বলেন, বর্তমান সরকারে এমন ব্যক্তিরা আছেন, যাদের সুহার্তোকে ভালোবাসেন।

ইতিহাস মুছে দেওয়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেভিন ও’রুরকে ‘রেফরমাসি : দ্য স্ট্রাগল ফর পাওয়ার ইন পোস্ট-সুহার্তো ইন্দোনেশিয়া’ নামের বইয়ের লেখক। তিনি বলেছেন, ‘সুহার্তোকে জাতীয় বীর ঘোষণা করা ইতিহাস মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা হতে পারে এবং কিছু স্বৈরশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবেও দেখা যেতে পারে, যদিও এটি সহজ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তখন সেটিকে আবার বাক্সের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা বেশ কঠিন।’ 

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার অর্ধেক এমনভাবে জন্মগ্রহণ করেননি বা যথেষ্ট বড়ও নন, যারা সুহার্তোর শাসনকাল মনে রাখতে পারেন। তবুও অনেকেই সেই কষ্টের স্মৃতি মনে রাখে আংশিকভাবে।

‘আকসি কামিসান’ নামে পরিচিত একটি গ্রুপ প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার জাকার্তার রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের বাইরে নীরব প্রার্থনা করে আসছে। তখন তারা কালো পোশাক পরে এবং সুহার্তোর শাসনের সময় ভোগা অত্যাচারের ন্যায়বিচার দাবি করে। তাদের অনেকেই এখনো জানেন না যে, সুহার্তোর শাসনের সময় নিখোঁজ হওয়া প্রিয়জনদের কোথায় আছে।

সংস্কৃতিমন্ত্রী ফাদলি জোন বলেন, সরকার গবেষণা করেছে এবং সুহার্তোসহ সব প্রার্থী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘১৯৬৫ সালের গণহত্যায় সুহার্তোর ভূমিকা কখনো প্রমাণিত হয়নি।’ ইতিহাসবিদরা বলেন, প্রায় ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। ইন্দোনেশিয়া কখনো এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেনি।

সূত্র : রয়টার্স, এএফপি

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন