একটু নমনীয় থাকলেই দেখবে সবাই হাসিমুখে আপনার ওপর কাজ চাপিয়ে দেয়
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
সমস্যা কার? আমার। প্রয়োজন কার? আমার। দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা কার? আমার। আমার সমস্যা, দুঃখ-বেদনা অন্যকেউ ঘুচিয়ে দেবে সেই আশায় কেন বসে থাকি? আমার প্রয়োজন অন্য কেউ মিটিয়ে দেবে- এমন আশায় কেন বুক বাঁধি? কেন অন্যের ওপর মিছে আশা পুষে রাখি? বিপথ ও বিপদ থেকে উত্তরণের পথ আমাকেই আবিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনের সময় কাছে পাওয়া যায় এমন মানুষের সংখ্যা গোটা দুনিয়াতেই কম।
সুখের সময়ে যারা ঘেঁষে থাকে, সম্পদের ঘ্রাণে যারা ছুটে আসে তাদের অনেকেই ঘোর দুর্দিনে থাকে না। শুধু না থাকলেও হতো কিন্তু কেউ কেউ তো বিপদের সাক্ষাৎ কারণ হয়ে ওঠে। অচেনা মানুষের মতো অভিনয় করে। সমস্যা যাতে আরও লম্বা হয়, অন্ধকার আরও বেশি ঘনীভূত হয় এবং যাতে আরও বেশি দগ্ধ করে হৃদয়- সেজন্য আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। ফোড়ন কাটার স্বভাব অনেকের মধ্যে চরমভাবে আছে।
জীবনে আলু হলে মুশকিলে পড়বেন। করলা ভাজির সাথে খাপখাওয়াতে, খিচুরির স্বাদ বাড়াতে আপনি দুনিয়ায় আসেননি। যতবার হ্যাঁ বলবেন তত আরও বেশি হ্যাঁ শোনার জন্য চারপাশের মানুষজন উঠেপড়ে লাগবে। আপনার সামর্থ্য আছে কি না, আপনি সক্ষম কি না কেউ ভাববে না। আপনি আপনার সমস্যার কথা না বললে কেউ আপনাকে আমলে নিয়ে একটুও ছাড় দিবে না।
একটু নমনীয় থাকলেই দেখবে সবাই হাসিমুখে আপনার ওপর কাজ চাপিয়ে দেয়, দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। গাধার মত প্রশ্ন ছাড়াই সব মেনে গেলে আপনি ভালো। একবান না মেনে বেঁকে বসলে আপনি বদ! কাজেই শুরু থেকে দৃঢ়ভাবে 'না' বলার অভ্যাস করুন। সংকোচ ছাড়াই 'না' বলুন। জীবন অনেক অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবে। 'না' আপনার অপারগতা নয় বরং সুরক্ষার হাতিয়ার। মতামত দিতে না পারলে দুনিয়া আপনাকে পাপেটিং-এর মত ব্যবহার করে ছাড়বে।
নিজেকে সময় দিন, যত্ন করুন। আপনি-ই আপনার দুনিয়া। আপনি তাবৎ দুনিয়ার জন্য সবকিছু করলেও আপনার জন্য কেউ কিছু করবে না। নিজেকে চেনার চেষ্টা করুন, নিজেকে গুছিয়ে রাখুন। সুস্থ দিনে সবাই আপনার সঙ্গী। অসুস্থ হলে মুখে মুখে খোঁজ নেওয়ার মানুষও মিলবে না। অথচ চারদিকে আপনার আপন মানুষ তো কম ছিল না। সুসময়ের মাছিরাই একসময় ভ্রমর হয়ে হুল ফুটিয়ে আঘাত করে যাবে।
যতদিন অন্যের স্বার্থের গুটি হয়ে থাকতে পারবেন ততদিন আপনি ভদ্র হিসেবে সুনাম শুনবেন। একদিন প্রতিবাদ করুন, আপনার দুর্নামে ছেয়ে যাবে শহর। তখন আপনি যে কত বদ তা জানতে পারবেন আপনার সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করা লোকটির মুখ থেকেই। আপনি যে কত খারাপ তা মাপার জন্য টাকা দেওয়া লাগবে না। যাদের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন তারাই আপনাকে ঘাঁটিয়ে ছাড়বে। কাজেই মেরুদণ্ডহীন হবেন না। তাহলে আর সহজভাবে বাঁচতে পারবেন না।
সমালোচনা ভয় পান? কে কি বলবে, কার সাথে অখাতির হবে এই ভেবে পা ফেললে আপনি এক ইঞ্চিও সামনে আগাতে পারবেন না বরং রোজ পিছিয়ে যেতে হবে। আপনাকে থামিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত চলে। অন্যের মনের মতো হয়ে স্বকীয়তা মেনে ও স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবেন না। আপনি কারো মনোরঞ্জন করতে গেলে আর সুখের নাগাল পাবেন না। তখন কেবল দিতেই হবে সংসারে। আপনারও যে কিছু প্রয়োজন থাকতে পারে তা কেউ আমলেই নেবে না।
আপনি কাউকে ছাড়িয়ে যান, আপনার ভালো কিছু হোক কিংবা সুনাম বাড়ুক এটা অনেকেই মন থেকে চায় না বা সহ্য করতে পারে না। মুখে মুখে প্রশংসা অনেকেই করে কিন্তু আপনার প্রাপ্তিতে মনে জ্বালা ধরে না, আপনার নামে বদনাম করে না এমন মানুষ ধরাধামে কম। নিঃস্বার্থ উপকার এখানে মেলে না বললেই চলে। কেউ প্রশংসা করলে ধরে নিবেন সেখানে মতলব আছে। প্রশংসার পরেই একটা আবদার করে বসবে। নেতার, বসের জন্মদিনের উইশ নিঃস্বার্থে নয়!
আপনার জীবনকে আপনাকেই সাজিয়ে-গুছিয়ে নিতে হবে। কেউ এসে জীবন রঙিন করে দেবে না। যারা তাদের মন খারাপে আপনার সঙ্গে'র কাঙাল হবে তারা আপনার মন খারাপে আপনার চৌহদ্দিতেও ঘেঁষবে না। স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে আসল রূপ বেরিয়ে আসে। আঘাত না পেলে কারো মনের অন্ধকার দেখা যায় না। আপনার যা কিছু ভালো লাগে, উপভোগ করেন তা আপনাকেই বেছে নিতে হবে। আপনার যত বাঁধা তা আপনাকেই সাফ করতে হবে। কারো আশায় থাকলে শেষবেলাতে শোকাহত হওয়া ছাড়া গতি কম। যার যার দুনিয়ায় তার তার স্বার্থই প্রাধান্য পায়। আপনাকে রাঙিয়ে দেওয়ার মানুষ কোথায়?
নিজের মতো বাঁচুন। শখ-আহ্লাদ পূরণ করে বাঁচুন। যা-কিছু উপভোগ করেন তা ছিনিয়ে আনুন। সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আপনার ওপর থাকা অন্যের হক-অধিকার আদায় করুন। তবে কারো প্রতি কখনোই অতিরিক্ত আশা দেখাবেন না। কারো প্রতি দূর্বলতা দেখানো মানে সে আপনাকে নিয়ে খেলতে শুরু করবে। আপনার আবেগ-অনুভূতিকে পুঁজি করে তার স্বার্থ উদ্ধারের অপপ্রয়াস করবে। নিজেকে সংযত রাখুন। কারো ওপর নির্ভর না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করুন। তবেই নির্ভার জীবনের সুখ পাবেন। সম্মৃদ্ধিতে স্থিতি হবে পথচলা। অর্থবহ হয়ে উঠবে কথা বলা। কখনো কখনো 'না' কোটি 'হ্যাঁ'য়ের চেয়েও শক্তিশালী।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন