হতাশা নয়, জীবনের জয়গান

gbn

তুমি কি জানো—ঋতুচক্রে কখনো রাত দীর্ঘায়িত হয়, আবার কখনো দিন দীর্ঘায়িত হয়?

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক। |

যুবক, হতাশায় ভেঙে পড়ছো? চাকরিটা এবারও হলো না? মনের মানুষকে পেলে না, কিংবা স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল? যে শান্তির জন্য সংসার পাতলে, সে সুখও ধরা দেয়নি? এর টিটকারি, ওর খোঁটা দেওয়া আর নিতে পারছো না? দাঁড়িয়ে দেখছো অনিশ্চিত ও অন্ধকার ভবিষ্যৎ? জীবনের মানে কী—এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে? জীবন শেষ করে দেওয়ার কথাও মনে মনে ভাবছো? তরুণ, তুমি কেবল রাতের অন্ধকার দেখেছো, দিনের ঝলমলে আলো এখনো দেখোনি।

 

তুমি কি জানো—ঋতুচক্রে কখনো রাত দীর্ঘায়িত হয়, আবার কখনো দিন দীর্ঘায়িত হয়? আজ যদি কেবল আজকের ফ্রেমেই জীবনকে মাপো, তবে মনে হবে রাত লম্বা, দিন খাটো। কিন্তু তুমি যদি একটি গোটা বছর নিয়ে রাত-দিনের হিসাব করো, তবে সেখানে আলো ও অন্ধকার সমান হয়ে দাঁড়াবে। কেন তবে অল্পতেই ভেঙে পড়ছো? সব পথ বন্ধ দেখছো মানে তোমার জন্য সুবহে সাদিক অপেক্ষা করছে। জীবনের যে হাল ধরেছো, সেটাকে শক্ত করে আরেকটুখানি ধরে রাখো। ক্লান্ত হলেও ঘুমিয়ে পড়ো না। কেউ আঘাত করলেও গন্তব্যের পথ থেকে সরে যেও না। তুমি যে ফুলের শোকে বিমূঢ় হয়ে আছো, সেই ফুলের গোটা বাগানটিই একদিন তোমার হতে পারে।

 

রব কাউকে পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল দেন, আবার কাউকে ফলাফল দিয়ে তারপর পরীক্ষা নেন। তুমি হয়তো প্রথম পক্ষের। তবে জেনো, তিনি তোমাকেও নিরাশ করবেন না। যারা চেষ্টা করে, সামর্থ্যের শেষ সীমা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে এবং ঐশ্বরিক পরিকল্পনায় আস্থা রাখে—তাদের ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত কোথাও নেই। এই যে সুন্দর পৃথিবী, পাখির কলরব, চাঁদ-তারার জোছনা—এসব তোমাকে ঘিরে সৃষ্টি। তুমি না থাকলে এই আয়োজনের মূল্যই বা কোথায়? তাই হতাশা তোমাকে মানায় না।

 

প্রত্যাশার পারদ সামঞ্জস্য রেখে চেষ্টা করে যাও। কখনোই ভাগ্যকে অস্বীকার বা দোষারোপ কোরো না। মানুষের ভাগ্য যিনি নির্ধারণ করেন তিনি ন্যায়বিচারক। তোমার বিচারে তুমি ঠকেছো, অথচ সেখানেও তোমার জন্য কল্যাণ লুকানো ছিল। বহু মানুষ হতাশায় মরতে গিয়েছিল, ব্যর্থতায় সমাজ থেকে পালাতে চেয়েছিল; অথচ প্রভু তাদের এমনভাবে দিয়েছেন যে তারা সন্তুষ্ট হয়েছে এবং শুকরিয়া জানিয়ে জীবন সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত হয়েছে। অভাব না থাকলে প্রাপ্তির মর্যাদা বোঝা যায় না। তাই কখনোই কামনায় কৃপণ হয়ো না। চাইবে মন খুলে, চেষ্টা করবে সর্বশক্তি দিয়ে—ভাগ্যই তোমাকে তৃপ্ত করবে।

 

জীবন সীমাহীন মূল্যবান। কোনো আঘাত কিংবা ব্যথায় জীবন থামিয়ে দিও না। যা চেয়ে না পেয়ে ভেঙে পড়েছো, তা হয়তো তোমার উপযুক্ত ছিল না। যে তোমাকে ছেড়ে গেছে, তাকে পেলে হয়তো আরও অসুখী হতে। আমরা বস্তু ও ঘটনার কেবল বাহ্যিক রূপ দেখি, অদৃশ্য ও অদৃষ্টের কারবার মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে। চার হাত-পা আছে, দেহ সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে—শুকরিয়া আদায় করো। এরচেয়ে বেশি কিছু বেঁচে থাকার জন্য দরকার নেই। জীবনকে এমনভাবে গড়ে তোলো, যাতে যারা ছেড়ে গেছে তারা আফসোস করে ফিরে তাকায়। যা তোমার নাগালে আসেনি, তা একদিন তোমাকে পেয়ে ধন্য হতে পারে। জীবন আসলে তোমার ধারণার চেয়ে হাজার গুণ সুন্দর। মন শান্ত করে, চোখকে মনের সাথে মেলাও, আকাশের দিকে তাকাও—বিশালতা উপলব্ধি করবে।

 

শত প্রতিকূলতার পরেও হাল ছেড়ো না। ঝড়-ঝঞ্ঝায় জীবন থেকে পালানোর পরিকল্পনা কোরো না। একবার ঘুরে দাঁড়াও। মন তোমাকে আলেকজান্ডারের চেয়েও বড় বীরের খেতাব দেবে। আত্মহত্যা তো যে কেউ করতে পারে, হাল ছেড়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। কিন্তু যে প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে, দুর্দিন জয় করে লড়াই করে বাঁচে—সেই জীবনের আসল সুখ পায়।

 

দুঃখ-সুখের মিশেলে যে সময়ের সৃষ্টি হয় সেটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। স্থূল সুখের ক্ষণিক আবেশ ম্লান হয়ে যায়, কিন্তু সূক্ষ্ম সুখ আসে উত্থান-পতনের জোয়ার-ভাটায়। ভাটার সময়ে যদি আশাহীন হয়ে পড়ো, তবে জোয়ারের সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য কখনোই পাবে না। তাই দাঁড়াও, লড়ো, আর বিশ্বাস রাখো—আলো তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন