নরওয়ে-সুইডেন-ডেনমার্কে মাস্টার্স করতে গিয়ে চাকরি খুঁজবেন যেভাবে

gbn

বিদেশে মাস্টার্স করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশের প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো। বিশ্বখ্যাত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরির ভালো সুযোগও রয়েছে এসব দেশে। তবে পুরোপুরি অপরিচিত একটি দেশে গিয়ে একা একা চাকরি খোঁজার পথে নামাটা অনেকের জন্যই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তো আমরা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে মাস্টার্স করতে যাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরি খোঁজার ধাপগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। নিচে এগুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হলো-

 

১. ভাষাগত দুশ্চিন্তার কিছু নেই

যেহেতু আপনি ইংরেজি মাধ্যমে মাস্টার্স ডিগ্রি খুঁজছেন, তাই এটাও ধরে নেওয়া যায় যে স্থানীয় ভাষা জানাটা আপনার কাছে বড়ো চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ভাগ্য ভালো, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে ইংরেজি জানা লোকের সংখ্যা কম নয়। তবে স্থানীয় ভাষা জানা ভালো, কিন্তু তা কোনো চাকরির জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

 

অতএব, আপনি যদি সুইডিশ, নরওয়েজিয়ান, ড্যানিশ বা আইসল্যান্ডিক ভাষা না-ই জানেন, তবুও কোনো সমস্যা নেই। ভাষার এই বাধা না ভেবেই আপনি আপনার পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আপনি বিবেচনায় রাখতে পারেন:

আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়, ডেনমার্ক

 

রোসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ডেনমার্ক

ইউনিভার্সিটি অব জ্যভাস্কিলা, ফিনল্যান্ড

এলইউটি বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনল্যান্ড

 

বিআই নরওয়েজিয়ান বিজনেস স্কুল, নরওয়ে

নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, নরওয়ে

ইউনিভার্সিটি অব বোরাস, সুইডেন

বিজ্ঞাপন

লিনিয়াস ইউনিভার্সিটি, সুইডেন

২. পড়াশোনার বিষয় অনুযায়ী চাকরি খুঁজুন

এটা অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয় হলেও অনেকেই এটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবে না। আপনার ডিগ্রি যদি অনেকটা চাপের হয়, তাহলে তার সঙ্গে নিয়মিত চাকরি করার আগে একটু ভেবে নেওয়া-ই ভালো। মাস্টার্স ডিগ্রি নিজেই একটি ফুলটাইম কমিটমেন্ট। তাই পড়াশোনার ক্ষতি না করে সময়সীমা অনুযায়ী ছোটখাটো কাজ নির্বাচন করাই উত্তম।

 

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার সীমাবদ্ধতায় একটি পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজে নেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে ‘ক্যাজুয়াল জব’ বা ইচ্ছেমতো সময় নির্ধারিত কাজও পাওয়া যায় যেমন- কনফারেন্স সাপোর্ট স্টাফ, ক্যাম্পাস অ্যাসিস্ট্যান্ট, লাইব্রেরি সহকারী ইত্যাদি। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আপনার পড়ার চাপ ও কাজের ভারসাম্য বজায় রাখা।

অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, তিনি পড়ালেখা, কাজ ও অন্যান্য বিষয়গুলো খুব সহজেই সামলাতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ১০ জনে ৯ জন-ই এই ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খান।

চাকরির আইনি সীমাবদ্ধতা জেনে নিন

 

আমরা আপনাকে নিরুৎসাহিত করতে চাই না, কিন্তু আইন না জানার কারণে আপনি ও আপনার নিয়োগকর্তা- দুজনই সমস্যায় পড়তে পারেন।

৩. বিভিন্ন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশে কাজের অনুমতি ও সময়সীমা:

সুইডেন: কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, কিন্তু পড়াশোনাকে অবহেলা করে চাকরিকে বেশি প্রাধান্য দিলে ভালো চোখে দেখা হয় না।

নরওয়ে: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও ওয়ার্ক পারমিটের বিষয় রয়েছে। দেশটিতে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করা যায়। তবে ইউরোপীয় শিক্ষার্থীরা তিন মাস পর্যন্ত পারমিট ছাড়াই কাজ করতে পারেন, তবে তাদের জন্যও ২০ ঘণ্টা সীমা প্রযোজ্য।

ফিনল্যান্ড: ইউরোপীয় শিক্ষার্থীরা যত ইচ্ছা কাজ করতে পারেন, কিন্তু বাইরের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৫ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। তাও অবশ্যই পড়াশোনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারিগরি প্রশিক্ষণ হিসেবে।

ডেনমার্ক: ইউরোপীয়দের জন্য কাজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, তবে অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার সীমা প্রযোজ্য।

আইসল্যান্ড: ইউরোপীয়রা পারমিট ছাড়াই কাজ করতে পারেন, কিন্তু অন্যান্যদের জন্য পারমিট বাধ্যতামূলক ও কাজের সময়সীমা মাত্র ১৬ ঘণ্টা/সপ্তাহ।

৪. কত বেতন পাবেন, তা আগেই হিসাব করতে পারেন

অনেকেই মনে করেন, বাইরে গেলে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে ভালো অঙ্কের বেতন পাওয়া যায়। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, উচ্চ বেতন’ কথাটার মানে দেশভেদে ভিন্ন। যেটা পোল্যান্ডে অনেক, সেটা নিউজিল্যান্ডে হয়তো রুটি কেনার টাকাও না।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাসিক গড় বেতন:

সুইডেন: ৭৩০–১০০০ ইউরো

ডেনমার্ক: ৮০০–৯৬০ ইউরো

ফিনল্যান্ড: ৫৬০–৮৪০ ইউরো

নরওয়ে: প্রায় ৮৫০ ইউরো

আইসল্যান্ড: তুলনামূলক কম এবং নির্ভরযোগ্য উৎসগুলোতে তথ্য নেই বললেই চলে।

৫. নিজের সাবজেক্টের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজ খুঁজুন- দীর্ঘমেয়াদী লাভ

আপনি যদি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে চান, তাহলে আপনার পড়াশোনার বিষয়ের সঙ্গে মিল আছে এমন কাজ করাই সবচেয়ে ভালো। যেমন- আপনি যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েন, তাহলে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ইন্টার্নের চাকরি খুঁজতে পারেন। আবার আপনি যদি বিজনেস স্টাডিজ কিংবা এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে আগে থেকেই মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট ও রিসার্চ ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করুন।

৬. কোথায় পাবেন এই ধরনের কাজ?

অ্যাকাডেমিক ওয়ার্ক (ওয়েবসাইট), জব টিজার (ওয়েবসাইট) কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার পোর্টাল।

দেশভিত্তিক চাকরির ওয়েবসাইট- nav.no (নরওয়ে), arbetsformedlingen.se (সুইডেন), jobindex.dk (ডেনমার্ক)

শিক্ষক কিংবা সুপারভাইজরের মাধ্যমে

যে কোনো কোম্পানির ওয়েবসাইটের ‘ক্যারিয়ার’ পেজে।

তাছাড়া স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই নিজেদের অভ্যন্তরীণ সহকারী বা ইন্টার্নশিপ পজিশনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে।

৭. চাকরি খোঁজার বদলে আগে প্রতিষ্ঠান খুঁজুন

এটা একটু কৌশলী পদ্ধতি। আপনি যদি আগে সম্ভাব্য নিয়োগদাতা কোম্পানি খুঁজে নিতে পারেন, তাহলে তাদের ইন্টার্নশিপ বা স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের খোঁজ করতে পারেন।

উদাহরণ: হ্যাংকেন স্কুল অব ইকোনমিকস তাদের ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্যালেন্ট প্রোগ্রাম’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন পার্টনার প্রতিষ্ঠানে প্লেসমেন্ট করে। এলইউটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সার্ভিস সরাসরি চাকরিতে জয়েন করার অফার দেয়।

নিয়মিত শিক্ষার্থী নিয়োগ করে এমন কিছু স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোম্পানি:

কেপিএমজি (অডিটিং ও ফাইন্যান্স), পিডব্লিউসি (কনসাল্টিং), ওয়ার্টসিলা (ইঞ্জিনিয়ারিং), নাভা (গ্রিন টেকনোলজি), স্টোরা এনসো ওইজ (টেকসই প্যাকেজিং ও ফরেস্ট প্রোডাক্টস)

৮. সংক্ষিপ্ত পরামর্শ, সফল হতে যা করবেন:

আগেই গবেষণা করুন।

যে দেশে যেতে চান, সে দেশের আইনি কাঠামো ও বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।

একটি ভালো সিভি ও কভার লেটার তৈরি করুন (দেশভেদে আলাদা ফরম্যাট হতে পারে)।

আপনার ক্লাস শিডিউলের সঙ্গে মিল রেখে কাজের সময় ঠিক করুন।

ইংরেজি দক্ষতা ঝালাই করে নিন, পারলে স্থানীয় ভাষাও শিখুন।

ক্যারিয়ার অফিস ও মেন্টরদের সহায়তা নিন।

নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার রাখুন- টাকা, অভিজ্ঞতা না ক্যারিয়ার।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন