ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে হংকং। গত শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক ঘোষণায় শহরটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের পরিপন্থি।
ডব্লিউটিও’তে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে চীনের দেখানো পথেই হাঁটলো হংকং। এর আগে, বেইজিং ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে ডব্লিউটিও’তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছিল।
এক বিবৃতিতে হংকং সরকারের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থা ডব্লিউটিওর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং আমাদের পৃথক কাস্টমস অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি উপেক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক এবং আমাদের আইনগত অধিকার রক্ষায় ডব্লিউটিওর বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার দ্বারস্থ হয়েছি।
পাশাপাশি, ওয়াশিংটনকে ‘ভুল সংশোধন করতে’ তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান হংকং সরকারের মুখপাত্র।
হংকংয়ের বিশেষ মর্যাদা ও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি
হংকং ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ডব্লিউটিওর সদস্য, যেখানে চীন ২০০১ সালে এই সংস্থায় যোগ দেয়। তবে, ২০২০ সালে চীনের চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে বিশ্বে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, ট্রাম্প প্রশাসন হংকংয়ের বিশেষ বাণিজ্যিক মর্যাদা প্রত্যাহার করে। ২০২০ সালের ১৪ জুলাই তিনি ‘হংকং অটোনমি অ্যাক্ট’ ও নির্বাহী আদেশ ১৩৯৩৬-এ স্বাক্ষর করেন, যার ফলে হংকংয়ের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ব্যবসায়িক আস্থার অবনতি
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য দ্বন্দ্বের ফলে হংকংয়ের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাপানি ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে হংকংয়ে ব্যবসায়িক আস্থার সূচক মাইনাস ৩ দশমিক ১-এ নেমে এসেছে, যা ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের মাইনাস ০ দশমিক ৫ থেকে আরও খারাপ।
ব্যবসায়ীদের মতে, হংকংয়ের বাইরে রপ্তানি স্থবিরতা ও মূল ভূখণ্ড চীনে রপ্তানি কমার শঙ্কা তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স হংকং পরিচালিত এক পৃথক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অবনতিই ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭০ শতাংশই বলেছেন, আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। মাত্র ৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী উন্নতির আশাপ্রকাশ করেছেন, যা আগের বছরের ২২ শতাংশ থেকে অনেক কম।
এমন পরিস্থিতিতে, হংকংয়ের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন