মৌলভীবাজার প্রতিনিধি \ টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে মৌলভীবাজারের বিস্তৃর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বন্যা। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ। টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদী বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি নদ-নদীতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে নদ-নদী ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম। শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জানা যায়, সোমবার ভোরে মৌলভীবাজার জেলা সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় ৫ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মৌলভীবাজার শহর রক্ষা বাধের উপর দিয়ে পানি উপছে পরছে। এতে নাগরিকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসক ড,উর্মি বিনতে সালাম জানান জেলাবাসী বন্যার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে এবং মাকিং করে জেলাবাসীকে সতর্ক থাকার সতর্ক করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি পরিমান নিধারনের জন্য সংলিষ্ট প্রশাসনকে নিদেশ প্রদান হয়েছে। জেলা ত্রান পূর্নবাসন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সুত্র জানায় জেলায় দূযোগ ও ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় ২৩৫ মেঃটন) চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলার বড়লেখা উপজেলায় ৪০মেঃটন) চাল,কুলাউড়া উপজেলায় ১৫মেঃটন),জুড়ি উপজেলায় ৩০মেঃটন), রাজনগর উপজেলা ৩০মেঃটন),মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৫০মেঃটন),¤্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০মেঃটন),কমলগঞ্জ উপজেলায় ৫০মেঃটন) প্রদান করা হয়েছে। মনু নদীর ভাঙনে রাজনগর উপজলোর টংেরা, কামারচাক,মনসুরনগর, রাজনগর সদর ইউনয়িনরে বেশ কয়কেটি গ্রাম প্লাবতি হয়ে গেছে। উপজলো নর্বিাহী অফসিার সুপ্রভাত চাকমা বলনে, আমরা নজিরবীহিন পানবিন্দি হয়ে পড়ছে। যে এলাকাগুলোতে কোনোদিন পানি আসেনি সইে এলাকাগুলো প্লাবতি হয়ে গেছে। গত বুধবার (২১ আগস্ট) নিয়মিত বুলেটিনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার জানায়, সাগরের লঘুচাপের প্রভাব ও ভারতের অতিবৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে। জেলার জুড়ী নদে বিপদসীমার প্রায় ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপর, ধলাই নদে বিপদসীমার ৮ সেমি ও মনু নদীর চাঁদনীঘাটে ৭০ সেমি ও রেলওয়ে ব্রিজে ১০৫ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। এদিকে তিন দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে হাওর ও নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়িঘর প্লাবিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ভয়ানকভাবে পানি বাড়ছে। নদ-নদীর বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। নদ-নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা টিলাগাঁও এলাকায় মনু নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাজনগর এলাকায় কমদহাটা এলাকা মনু নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদ-নদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে কতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। বন্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় গত সোমবার রাত থেকেই ধলাই, লাঘাটা, ক্ষীরণী নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এরফলে পাহাড়ি ছড়ার পানি উপচে ধলাই নদীতে পড়তে শুরু করে। বুধবার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিকাল থেকে ধলাই নদীতে বাঁধ ভাঙ্গন শুরু হয়। ধলাই নদীর চারটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদর, আলীনগর, শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সিবাজার, রহিমপুর এবং পৌরসভার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পরে পুরো উপজেলার সব কটি ইউনিয়নে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল। সেগুলোতে এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। মাঠে ঘাটে ক্ষেতে পানি উঠায় চরম গো খাদ্য সংকটে পড়ছেন তারা। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ইসলামপুরে ২০টি, আদমপুরে ২০টি, শমশেরনগরে ২০টি গ্রাম, মুন্সিবাজারে ২৬টি গ্রাম, পতনঊষারে ১৬টি, আলীনগরে ১৬টি, রহিমপুর, সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার আরো প্রায় ২৫টি গ্রাম বন্যাপ্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কৃষকদের রোপিত বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত ও শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটও রয়েছে। নিম্নাঞ্চলের শমশেরনগর, মুন্সিবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নে বন্যার অবনতি হচ্ছে। ফলে পুকুর ও মৎস্য খামার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ চাষীরা। বুধবার উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি একেবারে নগন্য ছিল। পানিবন্দি থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে ৬০ মে:টন জিআর চাল ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার সার্বক্ষনিক নজরদারি রয়েছে। বরাদ্ধ এসেছে, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার বিতরণও শুরু হয়েছে। গত ৩দিনের টানা বর্ষনে ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গত মঙ্গলবার সকালের দিকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন এর কুরমাঘাট চেক পোস্ট এলাকায় দুটি জায়গায় ভাঙন দেয়, এরপর দুপুরে শামসুর দোকান ও মকাবিল এলাকায় আরো দুটি ভাঙন এবং সন্ধ্যার পর আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধটি মাধবপুর ইউনিয়ন এলাকা দিয়ে ভাঙ্গন দিয়ে মুহুর্তেই প্রথমে ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ ইউনিয়নগুলোর কিছু কিছু স্থানে মঙ্গলবার বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেলেও শমশেরনগর, রহিমপুর ও পতনঊষার ইউনিয়নের নির্মাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার টিলাগাঁও, জয়চণ্ডী, সদর, রাউৎগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সড়ক পথেও অনেক গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ দিকে রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় মনু নদীর ভাঙ্গনে মৌলভীবাজার জেলা শহরের সাথে কুলাউড়া-বড়লেখা –জুড়ি রাজনগর উপজেল্ধাসঢ়;র সড়ক যোগাযোগ বন্দ রয়েছেএবং কমলগঞ্জ উপজেলার নদীর নদীর ভাঙ্গনে মৌলভীবাজার কমলগ্ধসঢ়;জ শমসেরনগর সড়কে যোগাযোগ বন্দ রয়েছে, এদিকে রাজনগর- কুলাউড়া- সিলেট -ফেন্ধসঢ়;জুগঞ্জ আ্ধসঢ়;ঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ বন্দ রয়েছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ৭টি উপজেলার ৬টি উপজেলা প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রোপ আমন ফসলের । জেলা ও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানিবন্দিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। পাউবো জানিয়েছে, টানা বর্ষণে মনু ও ধলাই নদীর অন্তত ৭ টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জেলার ৭০ ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। পাউবো জানিয়েছে, মনু নদীর রেলওয়ে ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও মনু নদী শহরের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদী রেলওয়ে ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে ২ ও জুড়ী নদী ভবানীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, পিআইও মো. শিমুল আলী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক প্রমুখ। তিনি জানান, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। পানিবন্দিদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রতি মুহূর্তে পানির পরিমাণ বাড়ছে। গত কয়েক বারের চেয়ে এবারের পানির স্রোত খুবই ভয়াবহ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্যখাতে। রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে পানিতে। বাড়িঘরে পানি উঠায় লোকজনরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন