জিবিনিউজ24ডেস্ক//
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রের প্রসঙ্গে নিজ দেশের এই সংবাদমাধ্যমটির পক্ষে সাফাই দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের আশা, সাম্প্রতিক এই তথ্যচিত্রের জেরে ভারত ও যুক্তরাজ্যের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
বৃহস্পতিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মুখপাত্র সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বিবিসি একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং যুক্তরাজ্য বরাবরই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে।’
‘তবে ভারত যে দিন দিন আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদার হয়ে উঠছে — এটাও সত্য। আগামী দশকগুলোতে ভারতের বিভিন্ন খাতে আমাদের বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে এবং আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে।
অবশ্য প্রায় একই কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভঅরলিও। দু’দিন আগে, মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সে এমপিদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতের কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাকে বলেছি— বিবিসি একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম; সংবাদ পরিবেশনই তার পেশা; কিন্তু যুক্তরাজ্য ভারতকে সমসময়ই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদার মনে করে এবং আগামী দশকগুলোতে ভারতের বিভিন্ন খাতে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’
গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে বিবিসি২ টেলিভিশন চ্যানেল। মূল বিবিসিরই একটি শাখা এই বিবিসি২ চ্যানেল।
তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।
এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ভারতের বিচারব্যবস্থা তাঁকে সাহায্য করেছে, তা ও দেখানো হয়েছে ছবিতে।
প্রায় এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রটির সবচেয়ে বড় ‘এক্সক্লুসিভ’ বা অতীতে প্রকাশ্যে না আসা বিষয় হলো, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি গোপন প্রতিবেদন, যেটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত (অর্থাৎ দাঙ্গার সময়ে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকা জ্যাক স্ট্র। তথ্যচিত্রে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।
জ্যাক স্ট্র বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের গভীর সম্পর্কের কারণে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। সে কারণে তিনি প্রতিবেদনটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
বলেন, ‘আমরা একটি দল গঠন করেছিলাম, যে দলটি গুজরাটে যাবে এবং দাঙ্গার তদন্ত স্বাধীনভাবে করবে। তারা একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল,’ বিবিসিকে বলেন স্ট্র।
তথ্যচিত্র থেকে এটা অবশ্য পরিষ্কার নয় যে এই গোপন প্রতিবেদনের কতটা বিবিসির হাতে এসেছে; তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে রীতিমতো ঝড় শুরু হয়েছে ভারতের রাজনীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন