আমি গানের মানুষ ; গানেই বেঁচে থাকতে চাই

GBnews24.com ||
অসংখ্য মরমী কবি সাধকের পূর্ণভূমি সিলেট। যুগে যুগে সিলেটের মাটিতে জন্ম নিয়েছেন রাধারমণ,হাসন রাজা,দূরবিন শাহ,শীতালং ফকির,শাহ আব্দুল করিমসহ কিংবদন্তী পুরুষরা। তাদের পেয়ে যেমন ধন্য সিলেটবাসী। টিক তেমনি ধন্য গোটা বাংলা। এ সকল গুণী মানুষরাই সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ভান্ডার। এরাই ছিলেন বাংলা বাউল গানের বিরাট সম্পদ। তারা মরেও অমর হয়ে আছেন তাদের সৃষ্টি কর্মের মধ্য দিয়ে। দেশ এবং দেশের বাহিরে এসকল মরমী কবিদের কথা ও সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন সিলেটের অসংখ্য বাউলরা। মরমী সাধক কবিদের বাণী, কথা ও সুরের প্রচার প্রসারের প্রতিনিধিত্ব করছেন যারা। তাদের মধ্যে বাউল ইকরাম উদ্দিন হচ্ছেন অন্যতম একজন। ছোট বেলা থেকেই গানের প্রতি টান ভালবাসা তার। চেষ্টা আর মেধা বুদ্ধিতে সংগীত চর্চায় নিজেকে গড়েছে তুলেছে শিল্পী হিসেবে। গান বাজনা আর সুরের ভূবনে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন উজাড় করে। তাইতো পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি। অল্পদিনে গড়েছেন নিজের অবস্থান। পেয়েছেন অসংখ্য গুণীজনের সরাসরি সান্নিধ্য। ভাটি অঞ্চলের প্রাণ পুরুষ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের সামনে বসে গেয়েছেন গান। পেয়েছেন উৎসাহ অনুপ্রেরণা ও আর্শীবাদ। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার পানিউমদা গ্রামের আবুল হোসেন ও আছমা বেগম দম্পতির দ্বিতীয় পুত্র বাউলশিল্পী ইকরাম উদ্দিন। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য। বাউল সিরাজ উদ্দিনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তার হতে শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে বাউল লোকগান ও সংগীতের বিশাল ভুবনে যাত্রা শুরু। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে এবং দক্ষতার সাথে গেয়ে যাচ্ছেন গান। দেশ বিদেশে একাধিক অনুষ্টানে পরিবেশন করেছেন গান। পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও সংবর্ধনা। নিজের সুরলিত কন্ঠে গান পরিবেশন করে মুগ্ধ করে রেখেছেন ভক্ত শ্রোতাদের। সিলেট অঞ্চলের তরুণদের আইডল হিসাবে পরিচিত এই সংগীত শিল্পী। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর আমন্ত্রনে ঢাকা বাসভবনে এক অনুষ্টানে গান পরিবেশন করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মন্ত্রী তার গানে মুগ্ধ হয়ে এবং নিজ দায়িত্বে বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত শিল্পী হিসাবে তালিকাভুক্ত করান। এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দক্ষ বাউল সংগীত শিল্পী ইকরাম উদ্দিনের বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা ও সম্ভাবনার গল্প শুনাচ্ছেন বদরুল আলম চৌধুরী।
প্রশ্ন; আপনার বাউল গানের শুরু কবে? কেন বাউল গানকে সঙ্গী করলেন?
ইকরাম: বাউল গানের শুরুটা আসলে ছোটবেলা থেকে। মরমী কবিদের কথা ও সুরের ছন্দে নিজেকে হারিয়েছি বাল্য কালে। তাদের কথা অন্তরে তীরের মত গেতেছে। ভাবার্থ মর্মকথা জানতে বুঝতে এই পথে আসা। বাউল গান কিন্তু অন্তরের গান এই গানগুলো অন্তর থেকে আসে। বাউল হয়ে গেছে বলতে পারবো না,তবে সেই পথে এখনও হাঁটছি। বাউল গান জানার বুঝার এবং শিখার,তাই শিখতে বাউল গানকে সঙ্গী করেছি।
প্রশ্ন; বাউলদের জীবন কেমন?
ইকরাম: এখানে ভিন্ন মত আছে। আমি আমার মত বলি,যুগে যুগে বাউলদের জীবন ধারণ লক্ষ্য করলে আমরা দেখি। তার খুব সহজ সরল জীবন ধারণ করেছেন। হিংসা নিন্দা বিবাদ ভুলে সবাই আপন করে নিয়েছেন। গুণীরা বলেছেন অহিংসা পরম ধর্ম। বাউলরা এই শিক্ষা দিয়েছে সহজ সরল ও সাধারণ জীবন ধারণ। নিজেকে নিয়ে ভেবেছেন এবং নিজের মধ্য হতে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজেছেন।
প্রশ্ন; বর্তমানে বাউল গান নিয়ে আপনা মতামত কি? গানে আধুনিকরণে বাউল চেতনা থাকছে?
ইকরাম: বর্তমান সময়ে বাউল গান আর আগেকার সময়ের গান অনেক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন গানগুলোতে নতুন ছন্দ,নতুনত্ব দেখা যায়। এর জন্য আগেকার গানের মত অন্তরে দাগ কাঁটেনা। এটা সময় পরিবর্তন করেছে! গীতিকার,সুরকার ও শিল্পীরা আন্তরিক হলেই এটা দূর করা সম্ভব। গানে আধুনিকরণ গীতিকার ও সুরকাররা করে থাকেন যেভাবে শ্রোতারা গ্রহণ করে। তবে যার সৃষ্টি, তার চিন্তা চেতনা ধ্যান নিয়ে তিনি গান সৃষ্টি করেন। সকলের উচিত সৃষ্টিকর্ম তার নিয়ম অনুসারে গাওয়া। যাতে প্রচার করতে গিয়ে কথাগুলো নষ্ট না হয়।
প্রশ্ন; বাউল গানে আদর্শ কি আপনার দৃষ্টিতে?
ইকরাম: বাউল গানের জগত হচ্ছে বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার। এখান থেকে জ্ঞান অর্জন করা যায়। নিজেকে জানা যায়, চিনা যায়। আপনকে খুঁজতেই প্রসিদ্ধ স্থান বাউল জগত।
প্রশ্ন; আপনি প্রতিবাদী শিল্পী হিসাবে সালমান শাহকে নিয়ে গান রচনা করেছেন এবং গেয়েছেন কেমন সাড়া পেলেন?
ইকরাম: প্রথমে বলি আমি সালমানের চরম ভক্ত! সালমানের হত্যাকা–টা দু:খজনক আমরা সিলেটবাসীরা মানতে পারিনা। সালমান হত্যার বিচার দাবি নিয়ে? ভিডিও এবং অডিও গান করেছি। আমার ভক্ত শ্রোতারা গ্রহণ করেছে এবং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে গান গুলো।
প্রশ্ন; আপনি একজন শিল্পী ও গীতিকার কোন পরিচয়টি ভাল লাগে?
ইকরাম: জটিল প্রশ্ন! আসলে আমার শুরু গান দিয়ে,গান গাইতে বেশি পছন্দ করি। গান রচনা করি অন্তর থেকে গান গাইও অন্তর দিয়ে। তাই আলাদা কোন পরিচয়ের প্রয়োজন হয়না। তবে প্রশ্নের উত্তর শিল্পী হিসাবে নিজেকে ভাল লাগে।
প্রশ্ন; আপনার প্রকাশিত অ্যালবাম সংখ্যা কত?
ইকরাম: গান করেছি অনেক। তবে প্রকাশিত অ্যালবাম হিসাব অনুসারে ২৭টি একক অ্যালবাম রয়েছে বাজারে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন; দেশের বাহিরে কোথায় কোথায় গান করেছেন? পদক সম্মাননা পেয়েছেন?
ইকরাম: দেশের বাহিরে বলতে ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন,রাজস্থানে,জয়পুর,যাদবপুর, হাওরাসহ মালোশিয়াতে গান করেছি। সম্মাননা ও পদক হিসাবে ভারতের বিখ্যাত বাউল শিল্পী ভজন দাশ সম্মাননা পদক পেয়েছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মাননা ও সংবর্ধনা পেয়েছি।
প্রশ্ন; বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন?
ইকরাম: বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা শুধু গানকে নিয়ে। বেশ কিছু গান হাতে আছে। সময় সুযোগে শ্রোতা ভক্তদের সামনে নিয়ে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। আর স্টেজ প্রোগ্রামতো আছেই। ভক্তদের জন্য রাতের পর রাত চলছে গানের আসর।
প্রশ্ন; গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ইকরাম: এই গানকে নিয়ে অনেক ভাবনা পরিকল্পনা থেকে ২০১২ সালে প্রতিষ্টাতা করি গীতিমাল্য বাউল একাডেমি। চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে করে মরমী কবিদের কথা ও সুরের শুদ্ধ চর্চা করে যেতে। আমি যা শিখেছি সবটাই দিয়ে যেতে। যাতে করে বাউল জগত অতিথের নেয় প্রাণ ফিরে পায়। তরুণরা যাতে শুদ্ধ গানের সুন্দর সুস্থ সংগীতে থাকতে পারে।
প্রশ্ন; আপনার ব্যক্তিগত ভাবনা কি?
ইকরাম: আসলে আমি গানের মানুষ,গানেই বেঁচে থাকতে চাই। শুদ্ধ গান গাইতে চাই। শুদ্ধ গানের মাঝে নিজেকে শেষ অবধি রাখতে চাই।
প্রশ্ন; দেশের তরুণ যারা বাউল গান করছেন তাদের উদ্দ্যেশে কি বলবেন?
ইকরাম: তরুণ যারা সংগীতে মনোনিবেশ করেছেন গান করছেন। তাদের কাছে চাওয়া একটাই শুদ্ধ গানের চর্চা করা। সুস্থ মন মানসিকতা নিয়ে সংগীতের জগতে উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা।
প্রশ্ন; সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ?
ইকরাম: আপনাকেও ধন্যবাদ সাক্ষাৎকাটি নেওয়ার জন্য।