চুয়াডাঙ্গায় প্রবাসীর ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণদাবী , ৪ জন আটক ,অবশেষে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

gbn

শামসুজ্জোহা পলাশ, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : ২৭.১২.২০ইং : মা আমার শরীরটা ভালো নেই। আমাকে খেতে দাও, ঘুমাবো। এরই মধ্যে বেজে উঠলো মোবোইলফোন। খাবার রেখে বাড়ি থেকে বের হয় সৌদিআরব প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে কিশারে শাকিব (১৫)। রাত শেষে ভোরের আলো ফুটে উঠলেও ছেলে শাকিবের দেখা পাননি মা শেফালী বেগম। পরদিন ছেলে শাকিবকে ফেরত পেতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়। ওই দিনই মা শেফালী বেগম দর্শনা থানা পুলিশকে জাননোর পর বিষয়টি সাধারণ ডায়রিভুক্ত করে পুলিশ। এরপর একে একে কেটে গেলো সাতটি দিন। এরইমধ্যে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তিতে সাতদিন পর উদ্ধার করা হয় কিশারে শাকিবের লাশ। বলা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার যদুপুর গ্রামের কিশারে শাকিবের কথা। অপহরণের সাতদিন পর আটকৃত অপহরণকারীদের শিকারোক্তিতে শনিবার গ্রামের আমবাগানে গর্তের ভেতরে জ্বালানি খড়ি ও পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে, এ ঘটনার মুলহোতা কুষ্টিয়ার রাজিবসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুক্তিপণ নাকি অন্য কারণে শাকিলকে ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানার বেগমপুর ইউনিয়নের যদুপুর গ্রামের মাঠপাড়ার সৌদি প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে শাকিব হোসেন ওরফে শাকিল আহম্মেদ (১৫) গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার রাত ৮ টার দিকে তার মাকে ভাত দিতে বলে। খাওয়ার আগ মুহূর্তে একটি ফোন পেয়ে খাবার রেখে বাইরে চলে যায় আর ফেরেনি। পরদিন সকালে শাকিলকে ফেরত পেতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে তার মা শেফালী বেগমের কাছে ফোন করা হয়। ফোন পেয়ে পরদিন ২১ ডিশেম্বর সকালে বিষয়টি দর্শনা থানা পুলিশকে জানানোর পর সাধারণ ডায়রিভুক্ত করা হয়। সন্তান হারানারে শােেক কাতর মা শেফালী বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ঘটনার রাতে শাকিব আমাকে ভাত দিতে বলে। ভাত দিই। খেতে বসবে, এমন সময় ফোন পেয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। সেই যে গেলো আর ফিরে আসেনি। নিহত শাকিবের পিতা সৌদিআরব প্রবাসী। মা ও ৮ বছরের বোনকে নিয়ে তাদের সংসার। পিতা প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে সংসার চালাতে কখনও রাজমিস্ত্রী আবার কখনও মাছ বিক্রির কাজ করতো শাকিব। মিষ্টভাষী শাকিব এলাকার মানুষের কাছে প্রিয়পাত্র ছিলো। তাকে হত্যা করা হতে পারে এটা কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। শাকিবের লাশ উদ্ধারের পর থেকে পরিবারজুড়ে যেমন চলছে শােেকর মাতম, তেমনি গ্রামে নেমে এসেছে শােেকর ছায়া। সেই সাথে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছে এলাকাবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরকদের গ্রেফতার ও শাকিবকে উদ্ধার করতে অভিযান শুরু করা হয়। সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারািেক্ততে শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে যদুপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ির আমবাগানের একটি গর্তের ভেতর থেকে শাকিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুষ্টিয়া মিরপুরের কামিরহাট ক্যানালপাড়ার কুদুস ম লের ছেলে হত্যাকা -রে মুলহাতো রাজিব মন্ডল (২৪), যদুপুর গ্রামের আকরাম বকাইলের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (৪২), যশােেরর শার্শা উপজেলার উলাশি গ্রামের ঈমন আলীর ছেলে আকাশ (২৫) ও ওমর আলীর ছেলে সােেয়বকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত চারজনকে আজ রাবেবার আদালতে সাপের্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পিতা প্রবাসে থাকায় কখনও রাজমিস্ত্রী আবার কখনও মাছ। বিক্রি করতো নিহত শাকিব। দ্#ু৩৯;মাস আগে যদুপুর গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে সুমনের সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে ঝিনাইদহে যায় সে। সেখানে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয়। কুষ্টিয়া মিরপুরের কামিরহাট গ্রামের রাজিব মন্ডলসহ সমবয়সী কয়েকজনের সাথে। তাদের মধ্যে রাজিব কয়েকদিন আগে যদুপুর গ্রামে সুমনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলা। দর্শনা থানার ওসি মাহাব্দুর রহমান কাজল জানান, ঘটনার রাতেই অপহরণকারীরা শাকিবকে কোমল পানীয়্#৩৯;র সাথে ২৫ টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে যদুপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ির আমবাগানে নিয়ে যায়। পরে সেখানে শাকিবের গায়ের গেঞ্জি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরাধে করে হত্যা করে। হত্যার পর শাকিবের মায়ের কাছে মাবোইলফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে থাকে। অপহরণকারীরা একবার কুষ্টিয়া, একবার যশারে, একবার ঢাকার ঠিকানা বলে তাকে ঘুরাতে থাকে। তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত রাজিব একজন পেশাদার অপরাধী। শাকিলের পিতা প্রবাসী। তাকে অপহরণ করলে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা পাওয়া যাবে এমন ধারণা থেকেই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। আরও তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, অপহরণের বিষয়টি জানার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়। তারা ঘটনা স্বীকার করেছে। তাদের কথা মতো লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রকৃত ঘটনা জানতে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, এটা কি মুক্তিপণের কারণে হত্যা, না কি অন্য কিছু এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। # #

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন