ধ্বংসের উল্লাস, বিবেকের অনুপস্থিতি

gbn

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবিরকে হেনস্তা করার লজিক কী? এক কথায়—অজ্ঞানতা।লেখা পড়ার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই। যারা টকশো দেখে না, বইপত্র–সাময়িকী পড়ে না তাদের নুরুল কবিরকে চেনার কথা নয়। এরা মোবাইলের পর্দায় বিদেশি প্রভুপাদদের বক্তৃতা দেখে উত্তেজিত হয়। পুরুষের লম্বা চুলকে বাউলের আলামত মনে করে। এমনও হতে পারে—নুরুল কবিরকেই তারা মাহফুজ আনাম ভেবে নিয়েছে! আচ্ছা, তারা কি জানে ডেইলি স্টার বা প্রথম আলোর সম্পাদকের নাম? জানার কথাও নয়। ফ্রান্স আর আমেরিকা থেকে দেশ সম্পর্কে যা শেখে, সেটুকুকেই চূড়ান্ত জ্ঞান মনে করে।

 

প্রথম আলো কিংবা ডেইলি স্টার পোড়ানোর লজিক কী? ছায়ানটে হামলা কিংবা নুরুল কবিরকে হেনস্তা— এর আসল উদ্দেশ্য কি খুঁজে বের করা যায়? হাদির মৃত্যুশোক কাটাতে না পেরে তারা এসব করেছে— এ কথা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। যদি তাই হতো তবে লুটপাট করে আইসক্রিম খেতে খেতে উল্লাস করত না। ল্যাপটপ চুরি করত না। এদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এই প্রজন্ম ধর্মের প্রিন্সিপাল জানে না। ম্যোরাল ভ্যালু এদের মধ্যে বিল্ডাপ করেনি। পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষা এরা পায়নি। মানুষ হওয়ার জন্য, বোধ–বুদ্ধি খাটানোর জন্য ন্যূনতম যে শিক্ষা দরকার— তা এদের মধ্যে নেই।

 

এর সমাধান কী? বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রজন্মকে এভাবে বাড়তে দিলে দেশটা টিকবে না। এদের পেছনে জুলাইয়ের যোদ্ধারা নেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মদদ নেই। জুলাই বিপ্লবীদেরকে এরা নেতা বা আদর্শ মানে না। এরা অন্য এক গোষ্ঠীর ক্রীড়নক। সেই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যারা দেশকে ধারণ করে না। এরা ধ্বংসকে উৎসব মনে করে। এরা না বাবা–মায়ের ভালো সন্তান, না সমাজের জন্য কল্যাণকর, না রাষ্ট্রের আদর্শ নাগরিক। এদেরকে অবাধ স্বাধীনতা দিলে সুন্দরের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। পশুপাখি হত্যায় যতটা ব্যথা অনুভূত হয়, এদের দ্বারা মানুষ হত্যার পরও তাদের মধ্যে সামান্য অনুশোচনা থাকে না। এরা আদিম মানুষের মতো আচরণ করে। মানুষ পুড়িয়ে উৎসব করে।

 

এদের তো দমন করতেই হবে। অতীতের সরকারগুলো যে পরিমান শক্তি প্রয়োগ করে বিপক্ষ শক্তিকে দমন করেছে, তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে এদের রুখতে। কারণ এরা এখন সংখ্যায় বেশি, শক্তিশালী এবং সংগঠিত। এদের রুখতে না পারলে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে হেরে যাবে। ‘তৌহিদী জনতা’র নাম ভাঙিয়ে মব সৃষ্টি করে এরা মানুষ খুন করতে, মানুষ পোড়াতে পর্যন্ত পিছপা হয় না। এরা দানবে রূপ নিচ্ছে। কেউ কেউ নিজেদের হীনস্বার্থে এদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। অথচ খুব অল্পদিনের মধ্যেই তারাও বুঝবে—বিনাশের কারণ এরাই। এদেরকে কেবল শক্তি প্রয়োগ করে থামানো যাবে না। প্রবাহের বিপরীত প্রতিষেধক ছড়িয়ে দিতে হবে। 

 

কারো জন্যই কি কোথাও নিরাপত্তা আছে?

ফেসবুকে বার্তা আসে আর ধ্বংস খেলায় মেতে ওঠে এক উজবুক জাতি। কথায় লাগাম নেই, ভালো কাজে অংশগ্রহণ নেই। শুধু ধ্বংসের পাঁয়তারা। কে শত্রু, কে মিত্র— কিংবা শত্রুকে কোন উপায়ে মোকাবিলা করতে হয়— এই বোধটুকুও নেই। শক্তি প্রয়োগেই যদি সব সমস্যার সমাধান হতো, তবে জ্ঞান–বিজ্ঞান আর গবেষণার দরকার পড়ত না। পেশীবহুলরাই কেবল টিকে থাকত। অথচ পৃথিবী দুর্বলদেরও। ডাইনোসর হারিয়ে গেছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকে আছে শতকোটি বছর। পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে কী করা উচিত আর কী নয়— তা কারো থেকে ধার করে নিতে হতো না।

 

সরকারকে শক্ত হতে হবে। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া ঠিক নয়। বিপথে ধাবমান এই বিপুল প্রজন্মকে বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। গোটা বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কারা আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র করছে, কারা বিদেশি পেইড এজেন্টের ভূমিকায় ঘৃণা ছড়াচ্ছে— সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি। দিনশেষে দেশটা আমাদেরই। আমেরিকা, ফ্রান্স, লন্ডন কিংবা ভারতে আশ্রয়ের সুযোগ সবার হবে না। এমনকি শ্রমিক হিসেবেও বিদেশে যাওয়ার পথ দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। ঠিক পথে না চললে বাংলাদেশ ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিপর্যয়ের দিকে এগোবে। ধ্বংসের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে আফসোস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ-তো বিভাজন মঙ্গলজনক নয়।

 

গড়তে শিখুন, ভাঙতে নয়।

লিখে চলুন, মুছে নয়।

এই দেশটা— দিনশেষে— আমাদেরই।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন