রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
অভ্যূত্থানের বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে একটি অংশত অসভ্য ও অপরিনামদর্শী জেনারেশন উৎপন্ন হয়েছে— যাদের ওপর ধর্মীয় সত্য ও শিক্ষার কোনো প্রভাব নেই, নিয়ম-শৃঙ্খলার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কিংবা তারা অভিভাবকদের আয়ত্তে নেই। এদের মধ্যে কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই, বিবেকের ছিটেফোঁটাও নেই কিংবা সুশিক্ষার কোনো আলামত নেই। হুজুগ আর গুজবই এদের শক্তি ও সাহসের উৎস। যারা দেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা করে, এরা তাদেরই সৈনিক। ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেওয়া, বাছবিচার না করে ঝাঁপিয়ে পড়া, যেখানে-সেখানে হামলে পড়া, হাতে আইন তুলে নেওয়া এবং ধ্বংস করাই এদের মুরোদ। কিছু গড়তে পারার সক্ষমতা নেই, কিছু করতে পারার দক্ষতা নেই, কিংবা ভালো কিছুর শিক্ষা নেই। এদের বিদেশি কিছু ‘পীর’ আছে— যারা উসকানি দেয়, ধ্বংসের সিঁড়ি তৈরি করে, আর এরা সেই সিঁড়ি বেয়ে পতনের চূড়ায় আরোহন করে।
আজ যদি প্রথম আলো কিংবা ডেইলি স্টার প্রকাশিত হতো, তবে সেখানে কী ছাপা হতো? হাদির কথাই। হাদিকে নিয়ে এমন কিছু কথা রচিত হতো যা রচনার সক্ষমতা অন্য অনেকের নাই। আজ থেকে বিশ বছর পরেও আর্কাইভে হাদির স্মৃতি দগদগে থাকত। শতবছর পরেও হাদিকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া অবিস্মরণীয় ইতিহাস জানতে পারতো। যে পত্রিকাকে সংসদে দাঁড়িয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চক্রান্তকারী বলেছেন, সম্পাদক ও সাংবাদিকদেরকে মামলা-হামলা করে দমাতে চেয়েছেন, আর আপনারাও যেটিকে শত্রু সাব্যস্ত করেছেন—শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে যে সবার শত্রু, তার ভেতরেই আসলে সত্য থাকে। প্রথম আলোর সমকক্ষ বাংলাদেশে আর একটি পত্রিকাও নেই—এই সত্য যদি মানতে না পারেন, তবে পত্রিকার স্ট্যান্ডার্ড বোঝার সক্ষমতাই আপনার মধ্যে গড়ে ওঠেনি। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে সত্যকে চাপা দেওয়া যায় না। পারলে প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার-এর বিকল্প কিছু দাঁড় করান। সেটাই বরং জরুরি ছিল।
হাদি ইনসাফের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। আর আপনি সেই মৃত্যুকে নিয়ে ব্যবসা করছেন। ধ্বংসের লেলিহান পতাকা উড্ডয়ন করছেন। এটি হাদির করা লড়াইয়ের প্রতি বে-ইনসাফ। হাদি জীবিত থাকলে আপনাকে এই অন্যায় করতে দিত না। হাদির আদর্শকে যদি হারতে দেন, তবে আপনিও গাদ্দার। আপনার আচরণের সঙ্গে ওদের কৃতকর্মের কোনো পার্থক্য না থাকলে, আপনার প্রতিও সমান ঘৃণাই জন্ম নেবে। প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার-এর ভবন পুড়িয়ে মোটেও ভালো কাজ করেননি; বরং পশুত্ব জাহির করতে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন।
বিপথে যাওয়া এই জেনারেশন কাদের মুরিদ— সেই ‘পীর’দের চিহ্নিত করে চিকিৎসা করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি এদের দিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। পয়জন সবার জন্যই পয়জন। হুজুগে ঝাঁপিয়ে পড়া, গুজবে লাফিয়ে ওঠা প্রজন্ম দিয়ে দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেন? এটি বুমেরাং হবে। যারা আগুন নিয়ে খেলে, তাদের কিছু গড়ে তোলার শক্তি-সামর্থ্য নেই। তারা ধ্বংসাত্মক। যারা দেশকে ধ্বংসের খেলায় মেতেছে, তাদের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। আদর্শকে আদর্শ দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। করাত দিয়ে কেটে পানি আলাদা করা যায় না— বাঁধ দিতে হয়।
হাদির স্বপ্নকে ধূলিসাৎ হতে দেবেন না। যদি 'হাদিবাদ' বাঁচিয়ে রাখতে চান, তবে পাড়ায় পাড়ায় ইনকিলাবি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র/মঞ্চ তৈরি করুন। প্রথম আলো কিংবা ডেইলি স্টার-কে সমালোচনা করতে পারেন কিংবা বয়কট করতে পারেন কিন্তু পুড়িয়ে দেওয়া বা বন্ধ করার সংস্কৃতি ভালো নয়। এতে আগুন নেভে না। হাদির আত্মার মাগফিরাতের জন্য সংযত থাকুন। অন্তত এটুকু অনুধাবন করুন— যারা দেশের কল্যাণ চায় না, তারা দূরদেশে বসে উসকানি দেয়। দেশের মঙ্গল চাইলে দেশ গড়তে দেশেই ফিরত। কোনো কালপ্রিটকে আদর্শ বানিয়ে ধ্বংসের খেলায় মাতবেন না। আপনার আদর্শ হোক হাদি— আমৃত্যু যার স্বপ্ন ছিল ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন