চাকুরি নয়, রাষ্ট্র খাওয়ার লাইসেন্স!

gbn

মানুষ হিসেবে যে নিদেন লজ্জাটুকুও থাকা উচিত তাও অনুপস্থিতি চারদিকে

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

কারো কারো কাছে চাকুরি মানে রাষ্ট্র খেয়ে দেওয়ার লাইসেন্স! কারো কারো মধ্যে সেবার মানসিকতা খুব সামান্যই। চাকুরিজীবনেই দেশের জমি-জিরাত আর বিদেশে পাহাড়-টিলা কিনে একাকার করে ফেলেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফুলে-ফেঁপে ওঠে অন্যের হক দখল করে। যারা জীবনের উদ্দেশ্যে হিসেবে কেবল সম্পদ অর্জন এবং জীবিকাকেই নির্ধারণ করেন- তাদের সময়ও কাটে। তবে জীবনের লক্ষ্য এসবের চেয়ে আরও অনেক বড়ো। সেই যাত্রায় জীবিকা, স্বাচ্ছন্দ্য কেবল উপলক্ষ্য মাত্র- এই মহাসত্যের মুখোমুখি হতে মানুষেরা নারাজ। 

 

আজকাল পথেঘাটে বিকল্প আয় করতে পারার মানুষই বেশি! মানুষ হিসেবে যে নিদেন লজ্জাটুকুও থাকা উচিত তাও অনুপস্থিতি চারদিকে। ডান হাতে, বাম হাতে আয় করার যে প্রবণতা তা এই সমাজকে কোনখানে নিয়ে যাচ্ছে- তা বোধহয় অসুস্থতার আলামতে অনেকটাই উন্মোচিত। সামাজিকতা এখন অর্থ-বৈষম্যের দাবানলে পুড়ছে। 

 

চাকুরিতে এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নাই যাতে শত কোটি টাকার মালিক, জমিদারি অর্জন করার সুযোগ আছে। চাকুরির মধ্যমাঠেই যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, সম্পদের পাহাড় গড়তে পারে তাদেরকে রাষ্ট্রের প্রশ্ন করা উচিত। অস্মানিত করা উচিত প্রথম সুযোগেই। ভয় ধরানো উচিত দুর্নীতিবাজদের মনে। 

 

চাকুরিকে জমিদারি ভাবা জমিদারদের সমাজের ঘিরে ধরে কৈফিয়ত আদায় করা দরকার। দেশে এমন কোনো সরকারি চাকুরি নাই যেখানে সারাজীবনে বৈধভাবে বেতন-ভাতা কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে পাঁচ-সাত কোটি টাকার মালিক হওয়ার সুযোগ আছে। অথচ রাজ্যের অন্যেকেই সাম্রাজ্যের অধিপতি হচ্ছেন। অবৈধ আয়ে বিস্তার সম্পদের মালিক হচ্ছেন। কোনো কোনো অফিসের পিয়নও ভূমিপুত্র। 

 

বেতনের সাথে বাজারদরের প্রতিযোগিতা রোজ সামর্থ্যকে ছাপিয়ে যায়। মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় দু-চার জনের সম্পদের যে ফিরিস্তি প্রকাশ পায় তাতে রাষ্ট্রের আঁৎকে ওঠা উচিত। দেশের টাকায় শুধু বিদেশ ফুলেফেঁপে উঠছে- এটাই শেষ সত্য নয় বরং দেশের মধ্যে গড়ে উঠছে ধনকুবেরদের গোপন আস্তানা। নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ছে সুস্থ সামাজিকতা। বিকল্প হাতে আয়ে উপায়হীনদের ভাবা হচ্ছে বোকা। যে সমাজে অসৎদের বাঁকা চোখে দেখা উচিত ছিল সেই সমাজে সৎদেরকে আঁতেল বলার মত দুঃসাহসিকতা দেখানো হচ্ছে। কারো কারো কাছে দুর্নীতির অভিযোগ, মামলাও ডাল-ভাত। সম্পদ অর্জনের এই যুদ্ধে কেউ কেউ অন্ধ। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন তাদের কাছে গৌণ। 


 

রাজনীতি থেকে সমাজসেবী, ব্যবসায়ী থেকে ভিখারি, চাকুরিজীবী থেকে সুদখোর- অনেকের জীবনের লক্ষ্যই টাকা। সম্পদ দিয়ে আভিজাত্য এবং গর্ব ফলাতে চায়। দ্রুত ধনী হওয়ার যে প্রবণতা তা মানুষকে মনুষ্যত্বের ট্র্যাক থেকে রোজ ছিটকে দিচ্ছে। জন্ম দিচ্ছে সামাজিক অবিচার ও নৈরাজ্য। অথচ যে সুখ নিশ্চিত করার জন্য মানুষ সম্পদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে তা তথা কাঙ্ক্ষিত সুখ নাগালের বাইরে। ঘরে কিংবা পরে- সুখ আজ ভিনদেশি! অবৈধ অর্জন স্বস্তি কিংবা প্রশান্তি নিশ্চিত করে না বরং দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি করে- এই সহজ সত্য মানতে যারা নারাজ তাদের মানসিক ব্যাধি এবং সংসারের দুর্বিপাক দেখে সমাজের শিক্ষা নেওয়া উচিত। 

 

স্রোতের বিপরীতেও কিছু মানুষ আছে। ভালো মানুষদের দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য মাঝে মাঝে ঘটে। যাদের হাতে সুযোগ থাকার পরেও বিকল্প আয়ের দিকে হাত বাড়ায়নি। অবৈধকে যারা সারাজীবন অন্যায় হিসেবেই জেনেছে তাদের ঘরে অভাবের ছুটি হয়নি বটে কিন্তু মনের প্রশান্তি কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। সততার যে সুগন্ধি তা মানুষের মনে তাদের জন্য সম্মানের জন্ম দিয়েছে। 

 

অফিসগুলোতে সৎ মানুষ আছে বলে মনুষ্যত্ব ও মানবিকতা এখনো শ্রেষ্ঠগুণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে শঙ্কার কথা,  সমাজ থেকে সৎ মানুষের উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে কমছে। ভালো মানুষ এখন প্রায় সংখ্যালঘু। সন্তানদের আচরণ দেখেও বাবা-মায়ের সততা মাপা যায়। পোশাকের মলিনতার চেয়ে মনের অপবিত্রতা দূর করা সহজ। অথচ কেউ কেউ বারবার ভুল করে এবং ইচ্ছা করেই করে। প্রথম সুযোগেই অমানুষ হয়ে ওঠতে দ্বিতীয়বার ভাবে না।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন