ডেভিল হান্টে কাঁপছে ‘সিলেট’

gbn

জিবি নিউজ প্রতিনিধি//

দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ফ্যাসিস্ট তৎপরতা দমনে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ সিলেট বিভাগে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অভিযান শুরুর পর থেকেই সিলেট মহানগরসহ বিভাগের চার জেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাতভিত্তিক অভিযান, চেকপোস্ট ও নজরদারি জোরদারের মধ্য দিয়ে একের পর এক রাজনৈতিক মুখ গ্রেফতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানের প্রভাবে সিলেট মহানগরসহ বিভাগের চার জেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 
 

গত ১৩ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে ৯ দিনে (২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সিলেট বিভাগে পরিচালিত অভিযানে মোট ৭৮ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা ও মহানগরভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার হয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়।

 

পুলিশ জানায়, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ অভিযানের অংশ হিসেবে সিলেট মহানগর এলাকায় ১৭ জন, সিলেট জেলায় ১৮ জন, মৌলভীবাজারে ৩৫ জন, সুনামগঞ্জে ৮ জন গ্রেফতার হলেও হবিগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারের তথ্য নেই। গ্রেফতারের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা, যেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেশি ধরা হয়েছে। অভিযান চলাকালে রাতভিত্তিক অভিযান, টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায়। যদিও এখন পর্যন্ত এসব অভিযানে কোনো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

দেখা গেছে, সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন থানা, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জকিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায়, সুনামগঞ্জের দিরাই, ছাতকসহ বিভিন্ন উপজেলায় এবং মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পৃথক অভিযানে নিষিদ্ধ ষোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা, এমনকি বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

 

মৌলভীবাজারে গ্রেফতার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৩৫ জন। তারমধ্যে রয়েছেন, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মো. আব্দুল খালেক (৫৩), আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. হরিপদ রায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদগের সভাপতি মোস্তাফিজুল ইসলাম সোহাগ (৩৩), স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুমন আহমদ, আওয়ামী লীগের কর্মী আব্দুল কালাম আজাদ, জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী আশরাফুল ইসলাম মারুফ (২২), ওলামা লীগের সাধারণ মো. কবির মিয়া, আওয়ামী লীগের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ প্রকাশ ফয়সাল উদ্দিন, কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর যুবলীগের ৪ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক এখলাছ মিয়া (২৬), উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আমির হামজা, ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি চন্দন কুর্মী, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহেদুর রহমান শাহেদ (৩৮), সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন, কুলাউড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মমদুদ হোসেন, ১৩নং কর্মধা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম আল দীন (সেলিম মিয়া), ছাত্রলীগের কর্মী ইমন আহমেদ, ছাত্রলীগের কর্মী তাহসিন হাসান বিজয়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৬নং একাটুনা ইউপিগের আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সাজ্জাদুর রহমান, রাজনগর উপজেলার ৮নং মনসুরপুর ইউপিগের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আব্দুন নূর গুলু, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. হরিপদ রায়, শ্রমিক লীগের কর্মী আলমগীর হোসেন, শ্রমিক লীগের কর্মী রাশেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কর্মী ইসমাইল হোসেন রাজন, জুড়ী ফুলতলা ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী অশোক দেববর্মা, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা যুবলীগ সদস্য মো. রেজুয়ান আহমদ, ছাত্রলীগের তোফায়েল হোসেন বাবলু, কালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ মিয়া, কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নুরুল আলম, বড়লেখা শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আজিজ খান, ছাত্রলীগের কর্মী মো. মাহমুদ হাসান, শ্রমিক লীগের নেতা আল আমিন, যুবলীগের নেতা মো. সোহেল মিয়া।

 

সিলেট জেলার গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য রুমেছ আহমদ (৩৫), যুবলীগের সদস্য ইমতিয়াজ আহমদ (২৫), বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইন, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. হরিপদ রায়, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মনসুর আহমদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আব্দুল বাছিত, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সজিবুল ইসলাম (৩৫), যুবলীগের সদস্য জামাল মিয়া (৩৯), যুবলীগের সদস্য রাসেল মিয়া (৪০), উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ রাসেল আহমদ, শ্রমিক লীগের পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ১নং ইউনিয়নগের আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলাল মিয়া, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শহিদুর রহমান রুমান, বিশ্বনাথ উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিগের তারা মিয়া (৫৫)।

 

সিলেট মহানগর এলাকার গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- সিলেট মহানগর যুবলীগের ৭নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক তুহিন আহমদ (৪০), যুবলীগের কর্মী আহমেদ হোসেন মুন্না (৩১), ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নগের আওয়ামী লীগ সভাপতি তারা মিয়া (৬৪), আওয়ামী লীগের কর্মী মোহাম্মদ আলী বলি, কুলাউড়া উপজেলাগের আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামাল হোসেন (৫৬), সদর উপজেলা তাতী লীগের সভাপতি দিলোয়ার হোসেন (৪৫), বিজিতলাল উজ্জল ওরফে নিধিররঞ্জন (৩৫), নূরুল ইসলাম (৬০), ২৫নং ওয়ার্ড দক্ষিণ সুরমাগের আওয়ামী লীগ সক্রিয় সদস্য তায়েফ আহমদ (৩৬), এয়ারপোর্ট থানাধীন হাউজিং এস্টেটগের মো. ফেরদৌস রহমান (২৩), জালালাবাদ থানার সোনাতলাগের স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তানজির আলী (৩৫), মোগলাবাজার ইউনিয়নগের আওয়ামী লীগ সাবেক সহ-সভাপতি আবিদুর রহমান আবিল (৪৬), ২৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল ইসলাম মুমিন (৩৫), শাহপরান থানার মেন্দিবাগগের মহানগর যুবলীগ সক্রিয় সদস্য তুহেল আহমদ (৩৩), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাগের কামাল হাসান, ২৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ছয়েফ খান।

 

সুনামগঞ্জ জেলার গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- ছাতক উপজেলা যুবলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম শিপন (৩৮), ছাত্রলীগের সদস্য সোহাগ মিয়া (২৮), উজিরপুর উপজেলা (বরিশাল জেলা) এমদাদুল হক তুহিন (৩৮), দিরাই উপজেলা নবীন বাগবাড়ীগের ছাত্রলীগ নেতা উজ্জ্বল, রাঙ্গামাটিয়াগের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা সুকুমার, রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতাগের জহিরুল ইসলাম জুয়েল, শাল্লা উপজেলা প্রেসক্লাব ভারপ্রাপ্ত সভাপতিগের বাদল চন্দ্র দাস, জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা কামিল আহমদ (৩০)।

 

এদিকে অভিযানের মধ্যে সিলেট নগরীর নাজিরেরগাঁও এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজকে ধরে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় নানা আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, স্বজনদের হস্তক্ষেপে তিনি পুলিশের হাত থেকে রেহাই পান। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান আরও জোরদার করতে এবং ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের দমনে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছে জমা থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

 

সিলেট জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. সম্রাট তালুকদার বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশব্যাপী চলমান অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর অংশ হিসেবে সিলেট জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা এবং সাধারণ মানুষের জানমাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গোপন তথ্য ও গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে অভিযান চলমান রয়েছে।’

 

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ–২-এর আওতায় মহানগর এলাকায় নিয়মিত টহল, চেকপোস্ট এবং লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলা রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন