বৈষম্য ও অবহেলায় পর্যটন নগরী, ক্ষু ব্ধ সিলেটবাসী

gbn

জিবি নিউজ প্রতিনিধি//

জাতীয় অর্থনীতিতে অপরিসীম অবদান রাখা সিলেটবাসী দীর্ঘদিন ধরে মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন এমন অভিযোগ তুলে সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে রেল ও বিমান যোগাযোগ, বন্যা, লোডশেডিং, বিশুদ্ধ পানি, শিক্ষক সঙ্কট এমনকি উন্নয়ন বাজেটে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

 
 

 

স্মারকলিপিতে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, রেল ও বিমান পরিবহন ব্যবস্থার ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। বিশেষভাবে সিলেটকে বারবার অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার করা হচ্ছে উল্লেখ করে একটি সুসংগঠিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।

 

 

রবিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ২টার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সিলেটের সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর আগে, সিলেট নগরীর কোর্টপয়েন্টে সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ‘একঘন্টার ডেডলক’ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেন সিলেটবাসী। ‘একঘন্টার ডেডলক’ কর্মসূচী চলাকালে নগরীর বেশিরভাগ বিপনীবিতানের ফটক বন্ধ। দোকানপাটেরও সাটার লাগানো। নগরে রিকশা ছাড়া অন্যান্য যান চালাচলও প্রায় বন্ধ ছিলো। তবে ১২ টার পর থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়। এই প্রতিবাদ সমাবেশে থেকে দাবি আদায়ে প্রশাসনকে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সমাবেশ পরবর্তী সময়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

 

 

স্মারকলিপিতে যে দাবিগুলো ছিল সেগুলো হলো- মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা দূরীকরণ, রেলপথের আধুনিকীকরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বিমান পরিবহনে স্বচ্ছতা ও যাত্রীসেবার উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, অব্যাহত লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, গ্যাস সংযোগ পুনরায় চালু ও সম্প্রসারণ, শিক্ষক সঙ্কট নিরসন ও শিক্ষা উন্নয়ন ও উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দে বৈষম্য দূরীকরণ।

 

 

স্মারকলিপিতে বলা হয়- সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া নগরীর আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ সড়কসমূহ মারাত্মক যানজট ও চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পর্যটনশিল্পের জন্য এটি বড় হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয়। সিলেটের রেলপথ ব্রিটিশ আমলের কাঠামোতেই চলছে। অনলাইন টিকিট ব্যবস্থায় দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, ট্রেনের সময়সূচি ভঙ্গ, দুর্ঘটনা ও বগি সঙ্কট চরমে উঠেছে। দ্রুত নতুন ট্রেন, বগি বৃদ্ধি, আধুনিক স্টেশন ও রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানানো হয়। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটবাসীর অন্যতম অভিযোগ- ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুর্বল অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা। টিকিট ভাড়ায় অস্থিরতা, ফ্লাইট স্বল্পতা, লাগেজ হারানো, হয়রানি ইত্যাদি সমস্যা নিয়মিত। এতে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পরও সিলেটের জন্য কোনো কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। নদী খনন, শহর রক্ষা বাঁধ, আধুনিক ড্রেনেজ, হাওর অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের দাবিও জোরালোভাবে তোলা হয়।

 

 

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, দেশের একটি বড় অংশের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় সিলেটেই। অথচ এই বিভাগেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। সিলেট নগরবাসী আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত অনিরাপদ পানি পান করছে। নতুন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের অনুমোদন বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ জানানো হয় এবং দ্রুত অনুমোদনের আহ্বান জানানো হয়। গ্যাস উৎপাদনে সিলেটের বিশাল অবদান থাকা সত্ত্বেও সাধারণ জনগণ গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত। আবাসিক ও শিল্প সংযোগ চালুর পাশাপাশি প্রিপেইড মিটারিং সহজ করার দাবি জানানো হয়।

 

 

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০+ পদে শিক্ষক নেই। সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার প্রস্তাবও রাখা হয়। বাজেটে বৈষম্য নিয়ে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে সিলেট সিটি কর্পোরেশন পেয়েছে সর্বনিম্ন বরাদ্দ মাত্র ৩ কোটি টাকা। যেখানে চট্টগ্রাম পেয়েছে ২০ কোটি, ঢাকা দক্ষিণ ১৩ কোটি। এই বৈষম্য অমানবিক এবং সাংবিধানিক সমতার নীতির লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করা হয়।

 

সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স, গ্যাস, পাথর, পর্যটনসহ নানা দিক থেকে অবদান রেখেও বারবার সিলেটবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আর মৌখিক আশ্বাস নয়, বাস্তব পদক্ষেপ চাই। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা একজন ন্যায়পরায়ণ, বৈষম্যবিরোধী নেতৃত্বের প্রতীক। আমরা আশাবাদী, তিনি আমাদের আর্তনাদ শুনবেন।

 


সবচেয়ে আলোচিত অংশটি ছিল উন্নয়ন বাজেটের বৈষম্য। সিলেট সিটি কর্পোরেশন যেখানে বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র ৩ কোটি টাকার মতো, সেখানে ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন অনেক গুণ বেশি অর্থ পেয়েছে। এই চিত্র তুলে ধরে প্রশ্ন তোলা হয় ‘সিলেট কি এখনও বৈষম্যের রাজনীতির শিকার?’ তিনি আরও বলেন,‘জাতীয় সম্পদে যারা অবদান রাখছে, তারা বারবার বঞ্চিত হবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সিলেটবাসী আর মৌন থাকবে না।’

 

এদিকে সোমবার (১৩ অক্টোবর) সিলেটে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কেরসিংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে সোমবার দুপুর ১২টায় দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সূচনাস্থলের দুই পাশে গণ-অবস্থান ও মানববন্ধন’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন