প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোট দিয়ে বিচারক নির্বাচন করতে চলেছেন মেক্সিকোর জনগণ। রোববার (১ জুন) কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত দুরাঙ্গো রাজ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই নির্বাচন শুরু হতে চলেছে। দেশটিতে এতদিন পর্যন্ত বিচারকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত হতেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এই নির্বাচন মোটেও সরল নয়। ফেডারেল অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বিচারক প্রার্থীদের তালিকায় আছেন লিওপোল্ডো শ্যাভেজ, যিনি মেথামফেটামিন পাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে প্রায় ছয় বছর কাটিয়েছেন।
২০১৫ সালে ৪ কিলোগ্রামের বেশি মেথামফেটামিন মাদক পাচারের দায়ে শ্যাভেজের দণ্ড হয়েছিল। দুরাঙ্গো মেক্সিকোর ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের’ অংশ, একটি কার্টেল-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল যেখানে গাঁজা ও আফিম উৎপাদন হয়।
শ্যাভেজের প্রার্থিতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের সমর্থিত সেই বিতর্কিত বিচারিক সংস্কারকে, যা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে নাগরিকদের সরাসরি বিচারক বাছাইয়ের ক্ষমতা দিয়েছে। তবে সমালোচকরা সতর্ক করছেন, এটি মেক্সিকোর ভঙ্গুর আইনের শাসনকে আরও গভীর সংকটে ফেলতে পারে।
দুরাঙ্গোতে মাদক যুদ্ধের ক্ষত বেশ গভীর। এই অঞ্চল কার্টেলদের দখলে, যেখানে গাঁজা ও আফিমের চাষ হয়। ফলে শ্যাভেজের অতীত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকের এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, আমি কখনোই নিখুঁত প্রার্থী হওয়ার দাবি করিনি। আমার লুকানোর কিছু নেই ও আমি আমার সাজা ভোগ করেছি।
এদিকে, আরেক রাজ্য হালিস্কোতে অপরাধ ম্যাজিস্ট্রেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফ্রান্সিসকো হার্নান্দেজ। তিনি যৌন নিপীড়ন ও দুর্নীতির অভিযোগে পদচ্যুত হয়েছিলেন। তবে এসব অভিযোগকে তিনি ‘মিথ্যা অপবাদ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
নুয়েভো লিওনে ফেডারেল ক্রিমিনাল জজ পদে প্রার্থী হয়েছেন ফের্নান্দো এসকামিলা। তিনি কুখ্যাত লস জেটা কার্টেলের আইনি উপদেষ্টা ছিলেন। অবশ্য তিনি তার তার অতীতের কথা স্বীকার করেছেন। এসকামিলার দাবি, তার যথেষ্ট দক্ষতা ও সক্ষমতা রয়েছে ও তার সুনাম খারাপ নয়।
এসব প্রার্থিতা মানবাধিকার সংগঠন, বিচারিক সংস্থা ও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেক্সিকান সংগঠন ডেফেনসরক্স অন্তত ২০ জন প্রার্থী চিহ্নিত করেছে যাদের অতীত অপরাধ, দুর্নীতির অভিযোগ বা কার্টেলের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সিলভিয়া ডেলগাডো, একজন প্রতিবাদী আইনজীবী, যিনি ২০১৬ সালে হোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমানের বিচারে তার পক্ষে লড়েছিলেন।
তবে ডেফেনসরক্সের প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল মেজা বলছেন, সরকার বিদেশী সাজা বা ক্লায়েন্টদের ইতিহাস যাচাই না করেই নির্বাচনের তাড়াহুড়ো করছে।
এই সংস্কারের ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা ১১ থেকে কমে ৯ এ নেমেছে। তাছাড়া এর ফলে বিচারকের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হয়েছে, বয়স ও অভিজ্ঞতার ন্যূনতম শর্ত উঠে গেছে। সেই সঙ্গে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে একটি শাস্তিমূলক ট্রাইব্যুনাল চালু করা হয়েছে, যাকে ৫০ হাজার সদস্যের বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন