জীবনের মানে খুঁজে ফেরার গল্প

gbn

নিজের জন্য বাঁচুন। এই যে জীবনটা বহন করছেন,

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।  

যাপিত জীবন নিয়ে প্রচুর হতাশ? দিনের অষ্টপ্রহর বিষণ্নতায় কাটে? বারবার প্রশ্ন জাগে, এই জীবনের মানে? অবহেলা কিংবা অপ্রাপ্তিতে জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়? যা যোগ হয়েছে কিংবা যা চলে গেছে—অঙ্ক কষে আরও মন খারাপের ঢেউ ওঠে?

 

থামুন তবে। ভাবুন আগে, এতে কার ক্ষতি হচ্ছে? নিজেকে নিজে কষ্ট দিয়ে ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করছেন! আপনি না থাকলে কার কী আসে যায়? আপনি বরং খারাপ থাকলে শত্রুপক্ষ খুশি হয়। আপনার মন খারাপে আশেপাশের মানুষ আলোচনার রসদ পায়। নিজেই নিজেকে অপরের ঘৃণার বাজারে তুলে দিচ্ছেন?

 

আচ্ছা, আশা নিয়ে বাঁচার কিছুই কী জীবনে অবশিষ্ট নাই? একজন মানুষ, একটা সম্পর্ক কিংবা প্রিয় মুখ—কেউ নেই? পছন্দের ফুলটির সৌন্দর্যও বিলুপ্ত হয়ে গেছে? আপনি যত হতাশ হোন না কেন—খুঁজে দেখুন, আপনার একটা কেন্দ্র আছে। আপনার ভালো থাকায় অন্য কারো ভালো থাকা নির্ভর করে। নিজেকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করছেন— সে ক্ষতি কার? আপনার ঝরে যাওয়ায় শব্দ হবে না। কেউ কাঁপবে না। দু’দিন কেঁদে প্রিয়জনও আপনাকে ভুলে যাবে।

নিজের জন্য বাঁচুন। এই যে জীবনটা বহন করছেন, এটা আর দ্বিতীয়বার আপনার কাছে ধরা দেবে না। আপনি থাকলে পৃথিবীর সব আয়োজনের মূল্য আছে। কেননা, আপনিই এসবের কেন্দ্র। বাকিসব কেন্দ্রমুখী। 

মান-অভিমানে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে পারেন? পারেন না। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কতগুলো বিনে সুতোর মায়ায় জড়িয়েছে। জানেন, গভীর অন্ধকারের ওপারেই ঝকঝকে ভোর লুকিয়ে থাকে। সময়ের পিঠে ভেসে থাকতে হয়। জোয়ারের জন্য ভাটির প্রয়োজন। উত্থান-পতন জীবনের প্রয়োজন।  

 

ধৈর্য ধারণ করুন। দুর্দিনের পরেই সুদিন ফিরবে। স্বভাবতই, আপনার মন খারাপের সময় ভালো চিন্তা মাথায় আসে না। সুন্দর স্মৃতি মানসপটে ভাসে না। কাজেই ভাঙনের সময়ে সাবধান। দৃঢ় থাকুন, দীপ্তিমান হোন। মন খারাপের গল্প যাতে ধ্বংসের সূচনা না করে। সবরের সৌন্দর্য পৃথিবীর সবচেয়ে শোভিত আভার অন্যতম। এলাহির পরিকল্পনার অংশ হোন। নিজেকে নিজেকে শেষ করে দিতে উদ্যত হবে না। তবে ভারী অন্যায় হবে। 

 

যখন জীবনের 'মানে' সম্পর্কে প্রশ্ন জাগবে, তখন মনকে ভিন্ন ভাবনায় প্রবাহিত করুন। কেননা, আপনি চিন্তার বিক্ষিপ্ততার বিপন্নতায় পতিত হতে যাচ্ছেন। পছন্দের গান শুনুন, বই পড়ুন। হাঁটুন এবং হাসুন। জীবনকে উপভোগ করার পথ তৈরি করে নেওয়ার মাঝেই কৃতিত্ব। নিজের মাঝে ভুবন সৃষ্টি করতে হবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি নিজের হাতেই রাখতে হবে।

 

সুখী হওয়ার জীয়নকাঠি তো আপনাতেই। অন্য কারো হাতে সুখ-অসুখের দায়িত্ব দিয়েন না। আপনাকে আপনার মতো করে আর কেউ ভালোবাসতে পারবে না; কেউই নয়। সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক। জীবন থেকে শিখুন এবং জীবনের বাকি অংশে প্রয়োগ করুন।

 

জীবন নিয়ে যত হতাশ হবেন, হতাশার কলেবর আরও বাড়বে। হতাশা কিংবা বিষণ্নতা—এসব ভয়ঙ্করভাবে সংক্রামক। কাজে নিজেকে সময় দিন। নিজের যত্ন নিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করুন, "আমায় আগলে রাখতে পারবে না?" দেখুন, ওই যে মোহময় চাঁদ, সুনীল আকাশ, নির্মল বাতাস, দেখুন, ওই যে সাগরের ঢেউ কিংবা অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে কেউ—এসব আপনার জন্য, আপনার অপেক্ষায়। আপনি আছেন বলেই পৃথিবী এখনো বাসযোগ্য। আপনাকে জাগাবে বলে রোজ সূর্য উঠছে। প্রায় হাজার কোটি বছরের গল্প আপনাতেই পরিপূর্ণ।  

 

নিজেকে সামান্য ভাবার কোনো কারণ নাই। আপনি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এই দ্যুলোকের সবচেয়ে দামি সত্তা। সুতরাং, আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব দুনিয়াকে দিন—কিন্তু মন খারাপ করার চাবি কারো কাছে গচ্ছিত রাখবেন না। বদ উদ্দেশ্যের টের পেলে দূরত্ব বজায় রাখুন। দিনশেষে, আপনিই আপনার।

 

তোমার নিঃশ্বাসের প্রতিটা ওঠানামা জীবনের জয়ের দলিল। হতাশার অন্ধকারে দাঁড়ালেও, এক চিলতে আশার আলো জ্বলেই থাকে— অদৃশ্য সূর্যের মতো। তুমি যদি নিজেকে ভুলে যাও, পৃথিবীও এক টুকরো আলো হারায়। জীবন একটাই—তাকে ভালোবেসে, যত্নে, গর্বে বহন করো। কেননা, তুমি নিজেই তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন