আজ ফাইনাল : ভারতের তিন, নাকি অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ

পাশ দিয়ে বয়ে যেতে থাকা সাবারমতী নদীর কয়েকটি বাঁক প্রবাহিত হয়েছে আহমেদাবাদ শহরের মাঝখান দিয়েও। শান্ত সেই নদীর ধারে উদাস হয়ে বসে থাকা কোনো যুবকের প্রতিচ্ছবিই যেন গত সন্ধ্যার রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে যাঁর ভেতরে কোনো আলোড়ন থেকে থাকলেও বাইরে এর কোনো প্রতিফলন নেই। ৩৪ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নে প্রশ্নে তাঁর ভেতরের উত্তেজনা বের করে আনার লাগাতার চেষ্টা চললেও ভারত অধিনায়ক আশ্চর্য রকম নির্বিকার ও নিরাবেগ।

 

দুপুরে শহরের অন্যতম প্রত্ন নিদর্শন আদালাজ স্টেপওয়েলে প্যাট কামিন্সের সঙ্গে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করতে গিয়েও গণমানুষের হর্ষধ্বনি শুনে এসেছেন। আজ এক লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম যে তাঁদের পক্ষে সশব্দে ফেটে পড়বে, সেটিও তো অজানা নয় রোহিতের। তবু বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মহা উপলক্ষেও তাঁর অনেকটা মৌনব্রত পালন যুক্তিহীন নয়। উপলক্ষ রাঙানোর ইচ্ছা আছে ঠিকই, তাই বলে সেই উপলক্ষ আবার মাথায় চড়ে বসুক, চান না সেটিও।

 

বাড়তি উত্তেজনায় হারানোর ভয়ও লুকিয়ে আছে বলে সতর্ক ভারত অধিনায়ক যেন এটিই বলতে চাইলেন যে তাঁরা ফাইনালটি খেলতে চান আর দশটা ম্যাচের মতো ধরে নিয়ে। এ জন্যই বারবার তাঁর মুখে শোনা যেতে থাকল ‘কাম অ্যান্ড কম্পোজড’। বাংলা করলে দাঁড়াচ্ছে ভেতরের রোমাঞ্চ চেপে শান্ত ও সমাহিতই থাকতে চাচ্ছে ভারতীয় শিবির। এখানেই কোথায় যেন দুই অধিনায়কের কথার সুর মিলে যাচ্ছে।

 

পার্থক্য বলতে রোহিতরা সবাই মিলে শান্ত থেকে খেলতে চাইছেন আর প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া সদলবলে নামছে ভারতীয় দর্শকদের শান্ত রাখার লক্ষ্য নিয়ে। প্রথম সেমিফাইনালে ড্যারেল মিচেল ও কেন উইলিয়ামসনের ১৮১ রানের পার্টনারশিপের সময় মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পাথর নীরবতাই আহমেদাবাদেও নামিয়ে আনতে চাইছে অস্ট্রেলিয়া।

ফাইনালের আগের দিন অধিনায়কদের বিস্তর কাজ থাকে। সে জন্যই দুপুরের ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসবেন না বলে ঠিক করে রাখা কামিন্স নিজের সংবাদ সম্মেলনটি সেরে নিলেন সকাল ১০টায়। টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে আসা এতটা প্রভাববিস্তারী ভারতীয় দল আগে কখনো দেখেছেন কি না—এমন প্রশ্নে অবশ্য ভারতের বিপক্ষে অতীত সাফল্যের অনেক ফিরিস্তিও শোনালেন এই পেসার।

তা আছেও। এই বছরই ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বছরের শুরুতে ভারতে এসে জিতে গেছে ওয়ানডে সিরিজও। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আরেকটি ওয়ানডে সিরিজে হারলেও ভারত তাদের জন্য অজানা কোনো দুর্গ নয়।

 

নিয়মিতই এই দলটির সঙ্গে খেলায় অনেক কিছুই জানা অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের একচেটিয়া দর্শক সমর্থন পাওয়ার ঘটনা তো আর রোজ রোজ কামিন্সরা দেখবেন না। স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে দর্শকদের চিল-চিৎকারের প্রসঙ্গ তুলে অবশ্য কামিন্সকে বিচলিত করা গেল না। তিনি বরং প্রসঙ্গটি লুফেই নিলেন যেন, ‘আমি এটিকে আলিঙ্গনই করে নিতে বলব। দর্শক সমর্থন অবশ্যই একতরফা হবে; কিন্তু খেলায় আপনার বিপক্ষে গলা ফাটিয়ে যেতে থাকা দর্শকদের নীরব করে দেওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই। আগামীকাল (আজ) আমাদের লক্ষ্য হবে সেটিই।’

ভারতের উৎসবের উপলক্ষ মাড়িয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে ফিরতে চাওয়া কামিন্স নিজেদের সুবিধার আরেকটি দিকও দেখলেন। নিজেদের স্পষ্ট ফেভারিট বলে ঘোষণা না করলেও নিয়মিত বিরতিতে বড় ট্রফি জেতার অভিজ্ঞতায় কিছুটা এগিয়ে থাকার দাবিই করলেন তিনি। ২০১৫ সালে মাইকেল ক্লার্কের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য এই পেসার বলছিলেন, ‘এই দলে পাঁচ-ছয়জন আছে, যারা কিনা ২০১৫-র ফাইনাল খেলেছে। সুতরাং (বিশ্বকাপ জেতার) অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় আছে আমাদের। ভিন্ন সংস্করণ হলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা অনেকেই আছে। হিসাব করলে দেখা যাবে, ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনই বিশ্বকাপ জিতেছে। সুতরাং ওরা জানে বিশ্বকাপ জিততে কী করা লাগে। সুতরাং আমরা সাহস নিয়ে মাঠে নেমেই খেলা চালিয়ে যাব।’

রোহিত অবশ্য তা মানতেই চাইলেন না, ‘আমার মনে হয় না যে বাড়তি কোনো সুবিধা অস্ট্রেলিয়া পাবে। ২০১৫ বিশ্বকাপেরও তো আট বছর হয়ে গেছে। আমরাও তো বলতে পারি যে ২০১১-র বিশ্বকাপ জেতা দলের দুজন আছে আমাদের। বিরাট তো ফাইনালও খেলেছে (রবিচন্দ্রন অশ্বিন খেলেননি)। এ রকম ভাবনা ওদের থাকতে পারে। আমরা ভাবছি অন্যভাবে।’

ভিন্ন সেই ভাবনাটি নির্বিকার ও নিরাবেগ থেকে বিশ্বকাপ জেতার! ভারতের তিন, নাকি অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ শিরোপা—সেটি জানতে আরেকটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন