শাহীন গোলদার,সাতক্ষীরা আজ ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তিপাগল মানুষ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের খরচাদি বহনের জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারী হতে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে অলংকার টাকা পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। ভোমরা, টাউন শ্রীপুর, বৈকারী ও খানজিয়া সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয় আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, নূর মোহাম্মদসহ ৩৩জন মুক্তিযোদ্ধা। লাইটের আলোয় অসুবিধা হওয়ায় ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত করে ফেলে পাক সেনাদের। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর রাতে পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় সাতক্ষীরা। ৮ম ও ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৯ এপ্রিল ১৯৭১ সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে পাক সেনাদের ২০০ সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টা ধরে চলা এ যুদ্ধে শহীদ হয় মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় আরো ২ জন। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখ যোগ্য। দেশ স্বাধীনের ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার বর্ধ্যভূমিগুলো রয়ে গেছে অসংরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর সেনানীদের আজীবন স্মরণীয় করে রাখতে ওই সব বর্ধ্যভূমিগলো সংস্ককারে পাশাপাশি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। যারা শহীদ হন… মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুদের গুলিতে সাতক্ষীরার যে সকল বীর সন্তান শহীদ হন- তারা হলেন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, হাফিজউদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিনউদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুন অর রশিদ প্রমুখ। সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোশারাফ হোসেন মশু জানান, ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর হানাদারবাহীনির হাত থেকে সাতক্ষীরাকে মুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধ পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছে, তাছাড়া যথাযথ সম্মানও পাচ্ছে তার। তিনি আরও বলেন, ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবসের তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে, তাহলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণায় নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, শহরের সরকারি বয়েজ স্কুলের পাশে একটি স্থায়ী বধ্যভুমি নির্মানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। জেলায় যে সব বধ্যভুমি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলো সংরক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর পরেও সাতক্ষীরার বর্ধ্যভ‚মিগুলো রয়ে গেছে অসংরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারি এসমস্ত বীর সেনানীদের আজীবন স্মরণীয় করে রাখতে ঐসমস্ত বর্ধ্যভ‚মিগলো সংস্ককারে দাবি সাতক্ষীরার বীর সন্তানদের।##

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন