চার বছর আগে পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি বলেই নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি কিংবা একই কারণে বর্তমান সরকার অবৈধ, এই ক্যাটাগরির সস্তা ব্লেমগেমে আমি বিশ্বাসী নই। বিএনপি নির্বাচনে না আসাতে গত চার বছরে তারা ‘যার পর নাই’ প্রায়শ্চিত্ত করেছে, এখনও করছে এবং আগামীতে করবে কি করবে না সেটাও এখনো অনিশ্চিত। সংবিধান মোতাবেক বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে তাই কোন কিছু বলার না থাকলেও সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফরকালীণ সময়ে বিভিন্ন দেশে আয়োজিত গণসংবর্ধনার বৈধতা প্রশ্নের মুখোমুখি আজশতভাগ। একজন বৈধ প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা বিদেশের মাটিতে কেন এবং কিভাবে অবৈধ ব্যবস্থাপনায় হয়ে থাকে সেটাই তুলে ধরছি নাতিদীর্ঘ এই নিবন্ধে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে বিদেশে যেখানেই যাবেন, সেখানকার স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাঁকে স্বাগত জানাবে বা গণসংবর্ধনা দেবে এটাই স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু একাধারে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলেরও প্রধান, তাই যৌক্তিক কারণে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা থাকবে, এটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিদেশে আয়োজিত এই গণসংবর্ধনার যাবতীয় খরচাদি যেহেতু সংশ্লিষ্ট দেশেরস্থানীয়বাংলাদেশদূতাবাসবাহাইকমিশনেরমাধ্যমেবাংলাদেশসরকারকেবহনকরতেহয়, সঙ্গত কারণেউক্তগণসংবর্ধনা যে কোন অবৈধরাজনৈতিকব্যানারেআয়োজনকরানৈতিকতারমাপকাঠিতেশতভাগঅনভিপ্রেতএবংঅগ্রহণযোগ্য। কেননা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক প্লাটফর্মটি বিভিন্ন দেশের আইনে পুরোপুরি অবৈধ।
সম্পূর্ণসরকারীখরচেবিদেশেরমাটিতেযেদলীয়রাজনৈতিকব্যানারেপ্রধানমন্ত্রীরগণসংবর্ধনাআয়োজনকরাহচ্ছে, সেসকলরাজনৈতিকদলবাসংগঠনেরকোনআইনগতবৈধতাবাংলাদেশেরবাইরেপৃথিবীরঅন্যকোনদেশেনেই।বিশ্বেরকোনদেশইতারদেশেরঅভ্যন্তরেভিনদেশীকোনরাজনৈতিকদলবাদলেরকর্মকান্ডকেঅনুমোদনকরেনাবাকরারসুযোগওনেই।কেউকরলেঅবশ্যইসেটিশাস্তিযোগ্যঅপরাধসংশ্লিষ্টদেশেরপ্রচলিতআইনে।আর এ কারণেইবাংলাদেশভিত্তিকযেকোনরাজনৈতিকদলেরন্যূনতমকোনআইনগতবৈধতাবিদেশেরকোথাওনেই।এ ব্যাপারে কারো কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে নিজ নিজ দেশের সংশ্লিষ্ট কোন স্থানীয় বিজ্ঞ আইনজীবির শরণাপন্ন হয়ে অতি সহজেই জেনে নিতে পারেন প্রবাসে ‘বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি’ কেন শতভাগ অবৈধ।
অনুসন্ধানেদেখাগেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে যোগান দেয়াঅর্থেবিভিন্নদেশেআয়োজিতপ্রধানমন্ত্রীরগণসংবর্ধনায়দলীয়পরিচয়েরমুখচেনালোকজনেরবাইরেতেমনকারোঅংশগ্রহণেরসুযোগএকেবারেইসীমিত বা নেই বললেই চলে।আগেথেকেইতালিকাভুক্তদলীয়লোকজনরাই শুধুমাত্র এইগণসংবর্ধনায়যোগদেওয়ারসুযোগপায়এবংসেইদলীয়লোকদেরসামনেইসরকারেরউন্নয়নকর্মকান্ডবর্ণনাকরেনবাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রী।দুর্ভাগ্যজনকহলেওসত্যযে, সফরেরআগে ঢাকার মিডিয়াতেফলাওকরেপ্রচারকরাহয়অমুকদেশের তমুক শহরেবসবাসরতপ্রবাসীবাংলাদেশীদেরদেয়াসংবর্ধনাতথাকমিউনিটিরএকটিঅনুষ্ঠানেযোগদেবেনপ্রধানমন্ত্রীশেখহাসিনা।কিন্তুবাস্তবেদিনশেষেবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীযোগদেনবিভিন্নদেশথেকেজড়োহওয়াখুবই ‘লিমিটেডএন্ডলিস্টেড’ কয়েকশ’ দলীয়লোকেরসমাবেশে।
ভাঙ্গানো গুটিকয়েক ‘ভিলেজ পলিটিশিয়ান’, যাদের দাপটে অসহায় সরকারী চাকরি করা দূতাবাসের কর্তাব্যক্তিরা। বিভিন্ন দেশে মেইনস্ট্রিমে আকাশচুম্বী সাফল্যের অধিকারী তথা বিভিন্ন সেক্টরে ‘ডমিনেট’ করা বাংলাদেশের ‘সোনার সন্তান’ অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি আসার কিংবা গণসংবর্ধনায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পান না এই ভিলেজ পলিটিশিয়ানদের অপকর্মের খেসারতে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেহেতু কোন দলের প্রধানমন্ত্রী নন এবং তিনি যেহেতু দেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী, তাই বিদেশে রাষ্ট্রীয় খরচে আয়োজিত গণসংবর্ধনা কেন দূতাবাস বা হাইকমিশনের ব্যানারে অথবা তাদের তদারকিতে গঠিত কোন বিশেষ ‘নাগরিক কমিটি’ কিংবা এটলিস্ট কোন বৈধ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজন করা হবে না, এই প্রশ্নের জবাব জানতে চান সাধারণ প্রবাসীরা, যারা বিদেশের মাটিতে অবৈধ দেশী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও মনেপ্রাণে ভালোবাসেন বাংলাদেশকে। বৈধ প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে যারা অবৈধ অর্থায়নে এবং অবৈধ সাংগঠনিক ব্যানারে গণসংবর্ধনার নামে প্রশ্নের মুখোমুখি করছে, তাদেরকে থামাবার এখনই সময়। বৈধ প্রধানমন্ত্রীকে যারা অবৈধ ব্যবস্থাপনায় মঞ্চে উঠায়, তারা দেশপ্রেমিক তো নয়ই বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হবার ন্যূনতম কোন নৈতিক যোগ্যতাও তাদের নেই। বৈধ প্রধানমন্ত্রীকে যারা প্রতারিত করছে, তাদের মুখে বড় বেশি বেমানান ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।