কে পাচ্ছে স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরির কাজ, ফ্রান্স নাকি রাশিয়া?

gbn

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মাধ্যমে মহাকাশে পদাচারণা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১২ মে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারীদের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট সেবার সম্প্রসারণে এই স্যাটেলাইট দারুণ সুফল এনে দিয়েছে। এবার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টেলিযোগাযোগের পাশাপাশি আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের সুযোগ রেখেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরির জন্য প্রস্তাব জানিয়েছে ফ্রান্স ও রাশিয়া।

‘বঙ্গবন্ধু-২’ স্যাটেলাইট তৈরি জন্য গতবছরের শুরুতেই বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সেই পরিকল্পনা এখন প্রায় চুড়ান্ত।

 

‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরির পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, দেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন’ স্যাটেলাইট হওয়ায় কেবল যোগাযোগের কাজে লাগছে। আমরা আরও বড় পরিসরে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের পরিকল্পনা করছি। এই স্যাটেলাইট হবে হাইব্রিড স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটটিকে যোগাযোগ, আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ তৈরি করেছিল ফ্রান্সের তালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কোম্পানি। এবার নতুন করে আরেকটি স্যাটেলাইট তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশ হিসেবে ফ্রান্সের পাশাপাশি রাশিয়ার একটি স্পেস কোম্পানিও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরিতে প্রস্তাব গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডাক গ্রহণ ও বিতরণ শাখায় রিসিভ করা হয় ৫ অক্টোবর। চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়। করোনা সংকটের কারণে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছু দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।

‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরির প্রস্তাব জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে ফ্রান্সের তালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কোম্পানির জানিয়েছেন, সর্বাধুনিক আর্থ অবজারভেশন টেকনোলজিস ব্যবহারের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি তৈরি করতে চায়। তালিস অ্যালেনিয়ার নিজস্ব এই প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো- অতি উচ্চ রেজুলেশনের লো আর্থ অরবিট অবজারভেশন স্যাটেলাইট তৈরিতে সক্ষম। এই স্যাটেলাইট সরবরাহ করে ভালো মানের ছবি জটিল ডাটা বিশ্লেষণ করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে- কৃষি, মৎস্য, নগরপরিকল্পনা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি কাজে লাগে।

ফ্রান্সের পাশাপাশি রাশিয়াও বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটির মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান রজোকসমস জানিয়েছে,স্যাটেলাইট তৈরি, উৎক্ষেপণ, রক্ষণাবেক্ষণে তারা নিজেরাই সক্ষম। প্রতিষ্ঠনাটি আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরি করতে চায় যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করবে। ফলে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট প্রয়োজন হবে না।

স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-২’ তৈরিতে ফ্রান্সের তালিস ও রাশিয়ার রজোকসমসের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ​ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, আমার দুটো প্রস্তাবেরই নানা দিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই করছি। আমরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়টিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চাই। পাশাপাশি নির্মাণ বাজেট ও পরিসেবার নানা দিক বিশ্লেষণ করছি।প্রাইজ ওয়াটার হাউজ কুপার্সকে কারিগরি পরামর্শক হিসেবে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

সরকারের চলতি মেয়াদেই বাংলাদেশের পরবর্তী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার কোন দেশ থেকে স্যাটেলাইট কেনা হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছে। যাদের কাছ থেকে বেশি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকবে তাদেরকেই আমরা কাজটি দেব।

এর আগে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সিস্টেমের নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’। এরপর এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তিতে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনা হয় ফ্রান্সের কোম্পানি তালিস অ্যালিনিয়া স্পেস থেকে।

২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে সফল যাত্রা করে। আর এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বত্বাধিকারী ক্লাবে নাম লেখায়। উৎক্ষেপণে ছয় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণও সম্পূর্ণভাবে বুঝে পায় বাংলাদেশ।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন