জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব কে হচ্ছেন? এ নিয়ে পার্টির অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। করোনায় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর অকাল মৃত্যুতে এ পদটি শূন্য হয়। সূত্রে জানা যায়, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মশিউর রহমান রাঙ্গা, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে নানা অংকে শেষ পর্যন্ত কে হবেন বাবলুর স্থলাভিষিক্ত তাই দেখার অপেক্ষা।
দলটির নেতাকর্মীরা দুঃসময়ে জাতীয় পার্টির পাশে থাকা ত্যাগী, পরীক্ষিত, বিশ্বস্ত এবং কর্মীবান্ধব- এমন একজনকে মহাসচিব পদে দেখতে চান। পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরও এমনটাই চান বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত শনিবার মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তার মৃত্যুর কারণে দলটি তিনদিনের শোক কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে রোববার জাতীয় পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে কুরআন খতম, দোয়া এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে দলটি।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ (১) ক উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একমাত্র চেয়ারম্যানই একচ্ছত্র ক্ষমতাবলে নিয়োগ দেবেন মহাসচিব। সেক্ষেত্রে কে হতে পারেন পরবর্তী মহাসচিব- তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসচিব হতে পারেন- এমন অন্তত একডজন নেতার নাম রয়েছে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের হাতে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ১৯ বছর জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা আগে একবার মহাসচিব ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেন। অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দলের অতিরিক্ত মহাসচিব (রংপুর বিভাগ) ও সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া সোমবার সকাল থেকেই চলছিল। এটি জানাজানি হওয়ার পর বিকেলে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের কলাবাগানের সুলতানা টাওয়ারে বৈঠকে করেন। সেখানে উপস্থিত নেতারা শামীম পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিযুক্ত করার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেন। তারা জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে মহাসচিব করার পক্ষে।
ওই বৈঠকে জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান, মুজিবুল হক ও সৈয়দ আবু হোসেন, অতিরিক্ত মহাসচিব (খুলনা) সাহিদুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহিরুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে গাইবান্ধা-১ আসনের তরুণ সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব করতে আগ্রহী। তিনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান। সংসদে আইন প্রণয়নকাজে তার অংশগ্রহণ ও আলোচনা দৃষ্টি কেড়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তাকে মহাসচিব করার চিন্তা করা হয়।
এ বিষয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব করা হচ্ছে, এমন কথা জানাজানি হওয়ার পর সিনিয়র নেতাদের অনেকে আমার অফিসে এসেছিলেন। তারা খুব উত্তেজিত। শামীম দু-তিন বছর হলো পার্টিতে এসেছেন। তাকে মহাসচিব করা হলে কেউ মানবে না।’
অবশ্য জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘মহাসচিব পদটি দলে একটি প্রশাসনিক পদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহাসচিবের পদ দলের চিফ প্যাট্রন ও কো-চেয়ারম্যান পদের নিচে। আমি বুঝতে পারছি না, কো-চেয়ারম্যানরা এই পদের জন্য এত লালায়িত কেন?’
জাপার যত মহাসচিব: ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠনের পর প্রথম মহাসচিব হন ডা. এম এ মতিন। অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, খালেদুর রহমান টিটো, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, এ বি এম শাহজাহান, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মসিউর রহমান রাঙ্গা ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন